১০ বছরের আইমানের অ্যাপ

সামাজিক যোগাযোগের একটি অ্যাপ বানিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে আইমান আল আনাম।  ছবি: প্রথম আলো
সামাজিক যোগাযোগের একটি অ্যাপ বানিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে আইমান আল আনাম। ছবি: প্রথম আলো

বয়স মাত্রই ১০ ছুঁয়েছে। চতুর্থ শ্রেণি ছেড়ে সবে পঞ্চম শ্রেণিতে উঠেছে। এর মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগের একটি অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ) বানিয়ে চমকে দিয়েছে আইমান আল আনাম। যে অ্যাপের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাহায্যে কথা বলা যাবে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে, পরিষ্কার ভিডিওসহ।

অ্যাপটি পরিপূর্ণভাবে তৈরির পর গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর সেটি গুগল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায় আইমান। যাচাই–বাছাই শেষে গত ৩১ ডিসেম্বর সকাল আটটায় ‘লিটা ফ্রি ভিডিও কলস অ্যান্ড চ্যাট’ নামে গুগল প্লে স্টোরে সেটি আপলোড করা হয়। অ্যাপের বর্ণনার নিচে লেখা আছে, অ্যাপ ক্রিয়েটেড বাই ‘আইমান আল আনাম।’ এর মধ্য দিয়েই যেন স্বীকৃতি মিলল এই খুদে প্রকৌশলীর।

মূলত প্রবল আগ্রহের পাশাপাশি ইন্টারনেটের জ্ঞানভান্ডার ও ইউটিউবকে কাজে লাগিয়ে এই অসাধ্যসাধন করেছে আইমান। এর আগে ‘জিওমেট্রি ড্যাশ’ নামের জনপ্রিয় একটি গেমসের বিকাশকারীদের একজন ছিল সে।

সম্প্রতি প্রথম আলোর কাছে এ অ্যাপ বানানোর পেছনের গল্প শোনায় আইমান। বর্তমানে ইন্টারনেটভিত্তিক কল, ভিডিও ও চ্যাটের জন্য ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার কিংবা ভাইবার বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু সবগুলোই তৈরি করেছেন বাইরের দেশের মানুষ। ‘প্রযুক্তির এই যুগে আমরা কেন বাইরের কারও তৈরি অ্যাপ ব্যবহার করব’—একদিন তার মনে তৈরি হয় এই প্রশ্ন। সেই জেদ থেকেই ২০১৯ সালের মার্চ মাস থেকে আইমান নেমে পড়ে অ্যাপ তৈরিতে। তার সেই প্রচেষ্টা পরিপূর্ণতা পায় ডিসেম্বরে এসে। আইমান তার তৈরি এ অ্যাপের নাম দিয়েছে মায়ের নামে। অর্থাৎ মা লিটা আকতারের নামের প্রথম অংশ নিয়ে তার অ্যাপের নাম রেখেছে ‘লিটা ফ্রি ভিডিও কলস অ্যান্ড চ্যাট’।

আইমান জানায়, এ অ্যাপের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বর্তমানে ব্যবহৃত যোগাযোগের অ্যাপসগুলোর চেয়ে এটির ভিডিওর মান অনেক উন্নত। অন্যগুলোতে চ্যাট করার সময় ছবি ফেটে গেলেও এটিতে ফাটে না। কারণ, এটির মান এইচডি অর্থাৎ হাইডেফিনেশনের। একই সঙ্গে মুহূর্তের মধ্যেই বড় ফাইল আদান–প্রদান করা যায়। কীভাবে অ্যাপটি তৈরি হলো, ইউটিউবে একটি ভিডিওচিত্র দিয়ে সে গল্প বলেছে আইমান।

চট্টগ্রাম নগরের সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়ুয়া সন্তানকে পাশে রেখে বাবা তৌহিদুস সালাম বললেন, ‘চতুর্থ শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর পাওয়া অবসরকে অক্লেশে কাটিয়ে দেয়নি ছেলে। সব সময় দেখতাম কম্পিউটারের সামনে মুখ গুঁজে পড়ে আছে। ভেবেছিলাম এমনিতেই পড়ে আছে। কারণ, একেবারে ছোটকাল থেকেই তার কম্পিউটারপ্রীতি। কিন্তু এত বড় কিছু করে বসবে, সেটি কল্পনাতেও ছিল না। তাই ২৭ ডিসেম্বর সকালে যখন সে বলল, ‘বাবা অ্যাপ তৈরি’, সব জেনে আমি আর ওর মা চমকে গেছি।’

আইমান আল আনাম স্বপ্ন দেখে একদিন বড় সফটওয়্যার প্রকৌশলী হবে। আরও অনেক কিছু উদ্ভাবন করবে। আর প্রথমটা তো মায়ের নামে হলো। এরপর যেটি উদ্ভাবন করবে, সেটি হবে বাবার নামে।