সিটির ভোটের তারিখ পরিবর্তনে আপিল বিভাগে আবেদন

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের নির্ধারিত ৩০ জানুয়ারি ভোটের তারিখ পরিবর্তন এবং নতুন তারিখে নির্বাচনের নির্দেশনা চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছে। সরস্বতী পূজার কারণে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজের বিরুদ্ধে আজ বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনটি দাখিল করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ আবেদনকারী হয়ে আবেদনটি করেছেন।

অশোক কুমার ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, আগামী রোববার আবেদনটি আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে উপস্থাপন করা হবে।

গত ২২ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুসারে ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণের দিন ধার্য হয়েছে। তবে, ২৯ তারিখ সকাল ৯টা ১০ থেকে পরদিন ৩০ জানুয়ারি ১১টা পর্যন্ত সরস্বতী পূজার তিথি উল্লেখ করে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের নির্দেশনা চেয়ে ৬ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ। আদালতকে তিনি বলেন, ‘ভোটের কেন্দ্র স্কুল-কলেজে হয়। আর সরস্বতীপূজাও হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয়। এ কারণে একই দিনে ভোট ও পূজা হলে সাধারণ মানুষের পূজা উদযাপন বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এটা সংবিধানেরও বিরোধী।’

তবে রিটের শুনানি নিয়ে ১৪ জানুয়ারি বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেন। কারণ হিসেবে আদালত তখন বলেন, গত ২ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২৯ জানুয়ারি সরস্বতী পূজা উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি নির্ধারণ করে। সুপ্রিম কোর্টের চলতি বর্ষের ক্যালেন্ডারেও ওই দিন ছুটি। ছুটি নির্ধারণের পর রিট আবেদনকারীসহ কেউই কোনো আপত্তি জানাননি। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ৩০ জানুয়ারি ভোটের দিন ঘোষণা করেছে। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রচার ও প্রচারণা চলছে। নির্বাচনের দুই দিন পর থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। এই পর্যায়ে ভোটের তারিখ পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। সারবত্তা না থাকায় রিটটি সরাসরি খারিজ করা হলো।

ওই দিন শুনানিতে ইসির পক্ষে আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভোট ও পূজা একই দিন কিছুটা ‘কো-ইনসিডেন্ট’। নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা বিবেচনায় নিয়ে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা সংক্ষিপ্ত করা সুনাগরিকের কাজ হবে।

ওই দিন শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত। আদালতে তিনি বলেন, দেশের ১২ শতাংশ, অর্থাৎ আড়াই কোটি ভোটারের অন্তরে যা আছে, তা এই রিটে প্রতিফলিত হয়েছে। সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদে ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র যদি মনে করে নাগরিকের অধিকার রক্ষা করবে না, তাহলে তো আমরা কনসিডার করতে বাধ্য।’

আদেশের পর রানা দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেহেতু হাইকোর্ট ডিভিশন এ আদেশ দিয়েছেন, আইনানুগ নাগরিক হিসেবে অবশ্যই এ আদেশের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। তবে আমরা সংক্ষুব্ধ, আমর ব্যথিত, আমরা মর্মাহত, আমরা দুঃখিত।’