খাগড়াছড়িতে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় ১০ দিনে ৬ শিশুর মৃত্যু

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

খাগড়াছড়িতে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১০ দিনে ৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৯ এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৭ শিশু চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকেরা বলছেন, অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।

গত মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ মাসের শিশু প্রতিপ্রাত্য চাকমা মারা যায়।

গতকাল বুধবার খাগড়াছড়ি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, তিনটি শিশু ওয়ার্ডের সব কটি রোগীতে পরিপূর্ণ। বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগেও শিশু রোগীদের ভিড় বেশি। এক শিশুর মায়ের সঙ্গে কথা হয়।

রানী ত্রিপুরা নামের ওই নারীর ভাষ্য, পানছড়ি উপজেলার লোগাং ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা সীমানাপাড়া এলাকা থেকে ৩ মাস বয়সী ছেলে রাজন ত্রিপুরাকে নিয়ে এসেছেন তিনি। পাঁচ দিন ধরে ডায়রিয়ায় ভুগছে ছেলে। প্রথমে পানছড়ি হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়েছি। এরপরও সুস্থ না হওয়ায় খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন।

১ বছর ৭ মাস বয়সী ছেলে মোহাম্মদ রায়হানকে গতকাল হাসপাতালে ভর্তি করেন মাটিরাঙ্গা তবলছড়ি এলাকার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান। তিনি বলেন, ১২ দিন ধরে ঠান্ডাজনিত রোগে অসুস্থ ছেলে। প্রথমে এলাকার কবিরাজ ও স্থানীয় চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। পরে জ্বর ও কাশি বেড়ে যাওয়ায় খাগড়াছড়িতে এসেছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন নিউমোনিয়া হয়েছে।

খাগড়াছড়ি গাছবান এলাকার সমর চাকমা বলেন, নভেম্বর থেকে ২ বছর ৭ মাস বয়সী ছেলে রিবেং চাকমার নিউমোনিয়া লেগেই আছে। এ পর্যন্ত চারবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।

খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৬ নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত নিউমোনিয়ায় ২২২ জন ও ডায়রিয়ায় ৩০৮ জন শিশু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এখনো প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন শিশু ভর্তি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিদিন গড়ে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে ৮০ থেকে ১২০টি শিশু, যাদের বেশির ভাগের বয়স ১৫ দিন থেকে ৩ বছরের মধ্যে।

খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ রাজেন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, মূলত নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। হঠাৎ ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ার কারণে শিশুদের মধ্যে এ ধরনের রোগ দেখা দিয়েছে। শিশুকে এই সময়ে বাড়তি যত্ন নিতে হবে। একই সঙ্গে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। শিশুকে পরিচ্ছন্ন রাখা, শুকনা স্থানে রাখা এবং ঘর স্যাঁতসেঁতে না রাখা। শিশুর ঘরের মধ্যে ভেজা কাপড় শুকাতে না দেওয়া। যে শিশু নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে, সে শিশু থেকে অন্য শিশুদের দূরে রাখতে হবে।

আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রাজর্ষি চাকমা বলেন, ৪ জানুয়ারির পর থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৬ শিশু মারা গেছে। পাহাড়ি এলাকায় এখনো অনেক জায়গায় যোগাযোগব্যবস্থা ভালো নয়। তাই অনেক অভিভাবক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে চান না। অনেকে আবার স্থানীয় কবিরাজ, বৈদ্য ও ওঝা দিয়ে শিশুদের চিকিৎসা করিয়ে থাকেন। শিশু অসুস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ক্লিনিক, হাসপাতাল কিংবা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। শিশুদের বাইরের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।