মাকে রেখে চলে গেল ট্রেন, শিশুপুত্র পরে উদ্ধার

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আট বছরের সন্তান সিফাতকে নিয়ে গতকাল বুধবার আন্তনগর কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়েছিলেন মা লিপি বেগম (২৮)। কিশোরগঞ্জের গচিহাটা স্টেশন থেকে ঢাকা যাচ্ছিলেন। পথে ভৈরব জংশনে মোবাইল ফোন রিচার্জ করতে নামেন তিনি। ফোন রিচার্জ করতে করতেই ছেড়ে দেয় ট্রেন। ট্রেনে এ সময় ছিল তাঁর শিশুসন্তান সিফাত। পরে নরসিংদী স্টেশনে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।

গতকাল সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। চোখের সামনে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের ছুটে চলার দৃশ্য দেখে লিপি বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন। নিমেষে স্টেশনে অনেক লোক জড়ো হয়। তখন একজন মায়ের অসহায়ত্ব দেখা ছাড়া কারও কিছুই করার ছিল না। পরে অবশ্য রাতে স্টেশনমাস্টার ও রেলওয়ে পুলিশের সহযোগিতায় শিশুটিকে নরসিংদী স্টেশন থেকে উদ্ধার হয়।

শিশুপুত্রকে নিয়ে ট্রেনটি চলে যাওয়ার পর এই দিশেহারা মা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুঝতে পারিনি, এত তাড়াতাড়ি ট্রেন ছেড়ে দেবে। আমাকে রেখে আমার ছেলেকে নিয়ে ট্রেন চলে গেল। এমন ভুল আর করব না।’ ছেলেকে ফিরে পেতে তিনি সহযোগিতা চান।

কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস গতকাল বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে ভৈরব জংশনে পৌঁছায়। ২০ মিনিট পর ৬টা ৫ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ভৈরব ছাড়ে। কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস এমনিতে এই জংশনে ইঞ্জিন ঘুরিয়ে দিক পরিবর্তন করে। এতে বেশ কিছু সময় লাগে বলে যাত্রীরা অনেক সময় ট্রেন থেকে নেমে হাতের কাজ সেরে নেন। তাই লিপি বেগম প্ল্যাটফর্মে নেমেছিলেন। সিট হারানোর ভয়ে সন্তানকে বসিয়ে রেখেছিলেন ট্রেনের কামরাতেই। কিন্তু এর মধ্যেই ট্রেন যে তাঁকে ছেড়ে চলে যাবে, তা তিনি কল্পনা করতে পারেননি।

ঘটনাটি জানার পর ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যদের কাছে সহযোগিতা চেয়ে বার্তা পাঠান। সন্ধ্যা সাতটার দিকে ট্রেনের খাবারের কোচ থেকে সিফাতকে উদ্ধার করেন নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ফিরোজ আহমেদ।

ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘ভৈরব রেলওয়ে পুলিশের মাধ্যমে বার্তা পাওয়ার পর আমরা ট্রেনে কর্তব্যরত পুলিশদের কাছে বার্তা পাঠাই। তখন তারা শিশুটিকে খুঁজে বের করে। ট্রেন থেকে নামিয়ে নিয়ে আসার সময় শিশুটির চোখেমুখে ভয়-আতঙ্ক কাজ করছিল। রাত ১০টার দিকে মা এসে শিশুটিকে নিয়ে যান।’

স্টেশন সূত্র জানায়, লিপির স্বামীর নাম মিজানুর রহমান। বাড়ি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার গচিহাটা গ্রামে। গতকাল বিকেলে সিফাতকে নিয়ে লিপি গচিহাটা স্টেশন থেকে কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী হন। ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসে।