পূজার ক্ষোভ ভোটে দেবেন: তাবিথ

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল আজ গ্রিন রোডসংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ করেন। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল আজ গ্রিন রোডসংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ করেন। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেছেন, ৩০ জানুয়ারি সরস্বতীপূজার দিনে নির্বাচন হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুধর্মাবলম্বীরা মনের ক্ষোভ ভোটে প্রকাশ করবেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর পশ্চিম তেজতুরীপাড়ায় নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘পূজার ব্যাপারে আমরা আগে থেকেই জানি যে বছরের কখন পূজা হবে। পরিকল্পনার সময় (নির্বাচন) নির্বাচন কমিশনও জানত (পূজা দিন সম্পর্কে)। আমরা মনে করি, ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন কমিশন এ রকম একটা তারিখ দিয়েছে। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়, বর্তমান সরকার সব ধর্মকে একভাবে দেখে না, একভাবে সম্মান করে না। অথচ সংবিধান অনুযায়ী সবাইকে সমানভাবে দেখতে হবে।’

ভোটে ওপর এর কোনো প্রভাব পড়বে কি না, তা জানতে চাইলে বিএনপির প্রার্থী বলেন, ‘আমরা সাধারণ জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। তাঁরা অপেক্ষায় আছেন, ৩০ জানুয়ারি ভোট অবশ্যই দিতে চান। আমি এই মর্মে আহ্বান জানাচ্ছি সবাইকে, বিশেষ করে সরস্বতীপূজার জন্য যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁরা যেন তাঁদের মনের ক্ষোভ, আসল সিদ্ধান্ত সরকারকে পরিষ্কারভাবে একটা রায় দেন যে এর রকম অনিয়ম, অন্যায় বিচার আমরা আর সহ্য করব না। তাই তাঁরা ধানের শীষের পক্ষেই রায় দেবেন।’

এর আগে সকালে পান্থপথে বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স এলাকা থেকে তাবিথ আউয়াল প্রচার শুরু করেন।

এ প্রসঙ্গে এর আগে দুর্গাপূজার সময় রংপুরে উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করেন তাবিথ আউয়াল। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম দুর্গাপূজার সময় রংপুরে উপনির্বাচন যেন না দেওয়া হয়। তাঁরা ঠিকই দিয়েছেন। এবারও ইচ্ছাকৃতভাবে সরস্বতীপূজাকে বানচাল করার জন্য নির্বাচনের তারিখ দিয়েছেন।’

এরপর গ্রিন রোড, আনন্দ সিনেমা হলের পাশ দিয়ে তেজগাঁও কলেজ, ইন্দিরা রোড, খামারবাড়ি, মণিপুরিপাড়া, আওলাদ হোসেন মার্কেট হয়ে আগারগাঁও, তালতলা এলাকা, ৬০ ফুট সড়ক ধরে পীরের বাগের জনসংযোগ করেন। এর ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। প্রচারণার সময় তাবিথের সঙ্গে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা অংশ নেন। এ সময় তাঁরা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চেয়ে স্লোগান দেন।

বিকেলে পরিস্থিতি পরিবর্তন
মণিপুরিপাড়ায় নির্বাচনী প্রচারে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী অভিযোগ করেন, সরকারি দলের নেতারা-কর্মীরা হামলার নতুন নতুন কায়দা বের করছেন। দিনে পরিস্থিতি ভালো থাকে, বিকেলে তা পরিবর্তন হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গতকাল উত্তরার ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের ওপর উদ্দেশ্যমূলকভাবে হামলা করা হয়। এতে পাঁচজন ব্যাপকভাবে আহত হয়েছেন।

তাবিথ বলেন, ‘আমাদের পক্ষে জনগণের ব্যাপক সাড়া দেখে তারা ভয় পেয়ে যাচ্ছে। এখন চেষ্টা করছে, ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটারেররা যেন কেন্দ্রে না যায়। যত সমস্যাই সামনে আসুক, আমরা ঐক্য আছি। শান্তিপূর্ণভাবে আমরা ৩০ তারিখে বিজয় নিয়ে আসব।’

মানুষ হাত মেলাতে আসছে
কেমন সমর্থন পাচ্ছেন, কী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তাবিথ বলেন, ‘শুধু মেয়র পদে নয়, কাউন্সিলরদের পক্ষেও ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। সাধারণ জনগণ আমাদের জানালা দিয়ে দেখে নিচে নেমে আসছে হাত মেলানোর জন্য, লিফলেট নেওয়ার জন্য।’

নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত তাবিথ আউয়াল। বৃহস্পতিবার, ঢাকা। ছবি: সংগৃহীত
নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত তাবিথ আউয়াল। বৃহস্পতিবার, ঢাকা। ছবি: সংগৃহীত

তাবিথ বলেন, ‘প্রতিশ্রুতি একটাই, সবাই উন্নয়ন চায়। যেখানে একটা বর্জ্য, দূষণমুক্ত পরিবেশ, নিরাপত্তা থাকবে। মানুষ চাঁদাবাজি ও মাদকমুক্ত পরিবেশ চায়। সঙ্গে সঙ্গে গণতন্ত্র রক্ষা, ভোটের অধিকার রক্ষা, বিশেষ করে তাঁদের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি—সব বিষয়ে মানুষ জানতে চাচ্ছে যে নির্বাচিত হলে তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করব কি না। বৃহত্তম সমর্থন পেলে আমরা নিশ্চয়ই সামাজিক ক্ষমতা দিয়ে এর বাস্তবায়ন করব।’

সিলেটের মেয়র কিন্তু বিএনপির
বিরোধী দল থেকে নির্বাচিত হলে সরকারের সঙ্গে সমন্বয় না হওয়ায় প্রত্যাশিত উন্নয়ন হয় না—এমন প্রশ্নে তাবিথ আউয়াল ‘কথাটি একদম অসত্য’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘বিগত ১০ বছরে ঢাকায় সরকার–মনোনীত প্রশাসক এবং মেয়রেরাই দায়িত্বে ছিলেন। এই ১০ বছরে ঢাকা শহর অবাসযোগ্য শহর হিসেবে পৃথিবীর সামনে ঘোষণা হয়েছে। প্রতিটি তালিকায় ঢাকা শহর তলানিতে আছে। আর দূষণের ক্ষেত্রে আমরা বায়ু দূষিত করে সাধারণ জনগণকে মেরে ফেলছি, ডেঙ্গুকে অবহেলা করে মানুষ মেরেছি। যে সরকারের মেয়ররা পরিকল্পিতভাবে জনগণকে মেরে ফেলে, তাই কোনোভাবেই বলা যায় না যে সরকারের মহল থেকে মেয়র হলেই সুষ্ঠু কাজ দেখতে পাবে।’

এ প্রসঙ্গে বিএনপির প্রার্থী সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নগর উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখবেন। সিলেটের মেয়র এখন বিখ্যাত মেয়র হয়ে গেছেন। উনি মাটির ওপরের সব তার মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে গেছেন, যার জন্য আন্তর্জাতিক মহলে সিলেট একটা ভিন্নতর শহর হিসেবে পরিচিত হয়ে গেছে। সিলেটের মেয়র কিন্তু সরকারি দলের বিপক্ষ দল বিএনপির।’