রাজাকারের তালিকা নিয়ে সংসদে প্রশ্নের মুখে মন্ত্রী

আ ক ম মোজাম্মেল হক
আ ক ম মোজাম্মেল হক

রাজাকারের বিতর্কিত তালিকা প্রকাশ করায় জাতীয় সংসদে নিজ দলের সাংসদদের সমালোচনা ও প্রশ্নের মুখে পড়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সম্পূরক প্রশ্নে সরকারি দলের দুজন সাংসদ বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় শুধু প্রকাশ করেছে—এটা বলে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে এর দায় নিতে হবে।

গত ১৫ ডিসেম্বর ১০ হাজার ৭৮৫ জন রাজাকার ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধীর তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তাতে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদের নাম আসে। এ নিয়ে বিতর্কের মুখে তালিকাটি স্থগিত করা হয়।

আজ সংসদে জামালপুরের সাংসদ ফরিদুল হক খান জানতে চান, রাজাকারের তালিকা প্রণয়নে গাফিলতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি না। তাঁর অনুপস্থিতিতে প্রশ্নটি সংসদে তোলেন সরকারি দলের সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন।

জবাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, রাজাকারের তালিকা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রণয়ন করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে ১০ হাজার ৭৮৫ জন রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস ও স্বাধীনতাবিরোধীর একটি তালিকা এ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। প্রাপ্ত তালিকা হুবহু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই তালিকা প্রস্তুত করেনি, সেহেতু প্রশ্নে উত্থাপিত বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিতে পারে।

পরে সম্পূরক প্রশ্নে মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই তালিকা দিয়েছে—এ কথা বলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব এড়ানো যায় না। কারণ, যার কাছ থেকেই তথ্য নেওয়া হোক, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এটা প্রকাশ করা হয়েছে। এটা সঠিক আছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব এই মন্ত্রণালয়ের ওপর বর্তায়।

মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘কিছু কিছু জায়গায় অসংগতির কারণে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, আমরা অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছি। এই বিষয়ে আমরা আহত হয়েছি। প্রকৃত রাজাকারের নামও এ তালিকায় আসেনি।’

সরকারি দলের এই সাংসদ জানতে চান, সবার সঙ্গে সমন্বয় করে আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে রাজাকারদের প্রকৃত তালিকা প্রকাশ করা হবে কি না?

জবাবে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, ভুলত্রুটি থাকায় আগেই দুঃখ প্রকাশ করে সেই তালিকা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে ভুলের পুনরাবৃত্তি না হয়, সবার সহযোগিতা নিয়ে সম্পূর্ণ যাচাই–বাছাই করে তালিকা প্রকাশ করা হবে।

সম্পূরক প্রশ্নে সরকারি দলের সাংসদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মন্ত্রী বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় তালিকা প্রস্তুত করেনি। উত্থাপিত প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিতে পারে। আমি বিনয়ের সঙ্গে এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি। কারণ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী দিয়েছে তাঁকে, সেটা আমরা জানি না এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেহেতু এটার মালিক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ছিল, তারাই তো প্রকাশ করতে পারত। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী কেন সেটা প্রকাশ করলেন? উনি যেহেতু এটা প্রকাশ করেছেন, দায়দায়িত্ব তাঁকে নিতে হবে।’

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘উনি তো (মন্ত্রী) এখন পর্যন্ত সঠিক রাজাকারের তালিকা সংগ্রহ করতে পারেননি। আমার ধারণা, উনি পারবেন না। কারণ, পাঁচ বছর ধরে আমরা একই কথা শুনে আসছি। আমি বলব, উনি এখন আর এটা পারবেন বলে মনে হয় না।’

জবাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, তাঁদের যে তালিকা সরবরাহ করা হয়েছে, সেটাই প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকায় যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের নাম যে তালিকায় আছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এর দালিলিক প্রমাণ আছে। তাঁরা সক্রিয় ছিলেন কি না, সেটা যাচাই করার ব্যাপার। মন্ত্রী আরও বলেন, হয়তো ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর–চেয়ারম্যানরা অনেকের অজ্ঞাতে তাঁদের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। যার ফলে এই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে যাচাই–বাছাই করে তালিকা প্রকাশ করা হবে।

সম্পূরক প্রশ্নে গণফোরামের সাংসদ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন, বিভক্তি সৃষ্টি না করলেই ভালো হতো। অনেক রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের পথ দেখিয়েছিল। পিস কমিটিতে সম্মানিত অনেক ব্যক্তি ছিলেন। মুজিব শতবর্ষ পালনের এই শুভ লগ্নে এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যাতে মানুষ বিভ্রান্ত হয়।