জুয়ার টাকা না পেয়ে হত্যার অভিযোগ

এই ঘরেই মা-মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। ঘরটি সিলগালা করে দিয়েছে প্রশাসন। গতকাল সকালে ময়মনসিংহ সদরের খাগডহর ঘুন্টি এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
এই ঘরেই মা-মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। ঘরটি সিলগালা করে দিয়েছে প্রশাসন। গতকাল সকালে ময়মনসিংহ সদরের খাগডহর ঘুন্টি এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহ শহরতলির খাকডহর এলাকায় শফিকুল ইসলাম ওরফে শাহীন নামের এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রী ও এক মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপর এক মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেছেন। গত বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যার মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে।

শফিকুল জুয়ায় আসক্ত বলে জানা গেছে। সম্প্রতি জুয়ার টাকার জন্য স্ত্রীকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দেওয়ার জন্য চাপ দেন। স্ত্রী রাজি না হওয়ায় শফিকুল স্ত্রী ও এক মেয়েকে হত্যার মতো ঘটনা ঘটাতে পারেন বলে স্বজনেরা মনে করছেন। নিহত দুজনের পরিবারের বরাত দিয়ে এমন দাবি করলেও পুলিশ গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত হত্যার কারণ সম্পর্কে কিছু জানায়নি।

গতকাল দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে শফিকুলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে সকালে রুমা আক্তারের পরিবারের পক্ষ থেকে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় শফিকুলকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়।

দুপুরে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আসামি শফিকুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের পর হত্যার কারণ জানা যাবে।

নিহত দুজন হলেন শফিকুলের স্ত্রী রুমা আক্তার (৩৮) ও মেয়ে নাফিয়া আক্তার (১২)। আহত মেয়ের নাম লাবণ্য (২১)। লাবণ্যর কয়েক মাস আগে বিয়ে হয়েছে। তাঁর স্বামীর বাড়ি সদর উপজেলার অষ্টধর গ্রামে।

গত বুধবার দুপুরে স্ত্রী ও ছোট মেয়ে নাফিয়াকে হত্যার পর লাবণ্যকে মুঠোফোনে খবর দিয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে ডেকে এনে হত্যার চেষ্টা করেন শফিকুল। লাবণ্য বর্তমানে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।

স্ত্রী ও মেয়েকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার শফিকুল ইসলাম।  ছবি: সংগৃহীত
স্ত্রী ও মেয়েকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার শফিকুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ ও নিহত দুজনের পরিবার সূত্রে জানা যায়, বুধবার দুপুরে খাকডহর এলাকার বাড়িটিতে শফিকুল ও তাঁর স্ত্রী রুমা আক্তার ছিলেন। এ সময় নাফিয়া স্কুলে ও লাবণ্য স্বামীর বাড়িতে ছিলেন। শফিকুল প্রথমে রুমাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে মরদেহ বাথরুমে রেখে দেন। কিছুক্ষণ পর নাফিয়াকে স্কুল থেকে খবর দিয়ে বাড়িতে আনেন। নাফিয়াকেও শ্বাসরোধে হত্যা করেন। তার মরদেহও একই বাথরুমে রেখে দেন। কিছুক্ষণ পর মায়ের অসুস্থতার কথা জানিয়ে লাবণ্যকে মুঠোফোনে স্বামীর বাড়ি থেকে খবর দিয়ে আনেন। লাবণ্য ঘরে ঢুকতেই তাঁর গলা দুই হাতে চেপে ধরে হত্যার চেষ্টা করেন শফিকুল। তবে লাবণ্য কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে যান। তিনি চিৎকার করে প্রতিবেশীদের জড়ো করেন। তখন শফিকুল পালিয়ে যান।

গতকাল বৃহস্পতিবার খাকডহর এলাকায় শফিকুলের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ভাই ও মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।

শফিকুলের বাবা বাড়িতে নেই বলে জানান প্রতিবেশীরা। শফিকুল ও তাঁর বাবার পাশাপাশি পৃথক বাড়ি। শফিকুলের বাড়িতে পুলিশ সিলগালা করে রেখেছে। তাঁর বাবার বাড়িতেও তালা ঝুলতে দেখা যায়। এ সময় আশপাশের কয়েকটি গ্রাম থেকে অসংখ্য নারী ও পুরুষ শফিকুলদের বাড়িতে ভিড় করেন।

প্রতিবেশীরা জানান, শফিকুলের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ও মেয়েদের সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিল বলে তাঁরা জানতেন। তবে হত্যার পর জানতে পারেন, স্ত্রীর বাবার বাড়ির সম্পত্তির জন্য শফিকুল এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

শফিকুলের বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কিসমত গ্রামে রুমা আক্তারের বাড়ি। সেখানে গিয়ে কথা হয় রুমার ভাই আফিস আশিক ও ভগ্নিপতি মীর আবু ইউসুফের সঙ্গে। তাঁরা জানান, প্রায় ২৫ বছর আগে নিজেদের ইচ্ছায় বিয়ে করেন শফিকুল ও রুমা। বিয়ের পর শফিকুল স্ত্রীর বাড়ি থেকে বিভিন্ন সময়ে টাকা নিতেন। স্ত্রীর ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত জমিও শফিকুল বিক্রি করেছেন। তারপরও মাঝেমধ্যে টাকার জন্য স্ত্রীকে চাপ দিতেন। তাঁর জুয়ায় আসক্তি আছে। মাঝেমধ্যে তিনি মদ্য পান করেন। এ কারণে স্ত্রীকে মাঝেমধ্যে টাকার জন্য চাপ দিতেন।