সৌদি আরব থেকে ফিরলেন ১০৯ বাংলাদেশি

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ফাইল ছবি
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ফাইল ছবি

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব থেকে আরও ১০৯ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফিরতে হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১ টা ২০ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইনসের এসভি ৮০৪ উড়োজাহাজে তাঁরা দেশে ফেরেন। এ নিয়ে এ বছরের ১৬ দিনে ১ হাজার ৬১০ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন।

প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম থেকে তাঁদের জরুরি সহায়তা দেওয়া হয়। প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক সূত্র জানায়, সিলেট জেলার তালেব (৩০) মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন না। রাতেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেখানে তাঁকে হস্তান্তর করা হয়। পাঁচ বছর আগে তালেব শ্রমিক হিসেবে সৌদি আরবে যান। দুই মাস আগে সেখানে গিয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

মাত্র দুই মাস আগে নোয়াখালীর আজিম হোসেন সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। আজিমের ভাষ্য, পাসপোর্টে তিন মাসের ভিসা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তিনি বলেন, বাজার করতে যাওয়ার পথে পুলিশ তাঁকে আটক করে। পুলিশের সঙ্গে আজিমের চাকরিদাতা কফিল কথা বলেছেন। তারপরেও তাঁকে দেশে পাঠানো হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জের রুহুল আমিন, কুমিল্লার ফিরোজ হোসেন ও মানিক, শরীয়তপুরের মিলন, যশোরের মোসলেম উদ্দিন, বগুড়ার মেহেদি হাসান, গাজীপুরের রাজীবসহ ১০৯ বাংলাদেশির বেশির ভাগই এমন অবস্থার কথা জানিয়েছেন।

দেশে ফেরা কর্মীদের অভিযোগ, আকামা তৈরির জন্য চাকরিতে নিয়োগদাতা কফিলকে তাঁরা টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু কফিল আকামা তৈরি করে দেননি। গ্রেপ্তারের পর তাঁদের অনেকেই কফিলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু কফিল সেভাবে কারও দায়িত্ব নেননি।

ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, ২০১৯ সালে ২৫ হাজার ৭৮৯ জন বাংলাদেশিকে সৌদি আরব থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। নতুন বছরের শুরুর ১৬ দিনে ১ হাজার ৬১০ জন বাংলাদেশি ফিরলেন দেশটি থেকে। যাঁরা ফিরে এসেছেন তাঁদের অবস্থা প্রায় এক রকম। সবাই খালি হাতে ফিরেছেন। কয়েক মাস আগে গিয়েছিলেন এমন লোকও আছেন। তাঁরা সবাই ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায়।

শরিফুল হাসান গত বছরের পুরো পরিসংখ্যান দিয়ে জানান, প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে মোট ৬৪ হাজার ৬৩৮ কর্মী দেশে ফিরেছেন। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ২৫ হাজার ৭৮৯, মালয়েশিয়া থেকে ১৫ হাজার ৩৮৯, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৬ হাজার ১১৭, ওমান থেকে ৭ হাজার ৩৬৬, মালদ্বীপ থেকে ২ হাজার ৫২৫, কাতার থেকে ২ হাজার ১২, বাহরাইন থেকে ১ হাজার ৪৪৮ ও কুয়েত থেকে ৪৭৯ জন শূন্য হাতে ফিরেছেন। তাঁদের পরিচয় ডিপোর্টি। তিনি বলেন, ‘এই মানুষগুলোর পাশে সবার দাঁড়ানো উচিত। ফেরত আসা প্রবাসীদের আমরা শুধু বিমানবন্দরে সহায়তা দিয়েই দায়িত্ব শেষ করছি না। তাঁরা যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারেন, সে জন্য কাউন্সেলিং, দক্ষতা, প্রশিক্ষণ ও আর্থিকভাবেও পাশে থাকতে চাই। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলে কাজটি করতে হবে। পাশাপাশি এভাবে যেন কাউকে শূন্য হাতে ফিরতে না হয়, সে জন্য রিক্রুটিং এজেন্সিকে দায়িত্ব নিতে হবে। দূতাবাস ও সরকারকেও বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে হবে। বিশেষ করে ফ্রি ভিসার নামে প্রতারণা বন্ধ করা উচিত।’