শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি থাকলে নিশ্চিত বিজয়: তাবিথ

ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের প্রচার। মোহাম্মদপুর, ১৭ জানুয়ারি। ছবি: জাহিদুল করিম
ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের প্রচার। মোহাম্মদপুর, ১৭ জানুয়ারি। ছবি: জাহিদুল করিম

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেছেন, জনসংযোগে তিনি এমন সাড়া পাচ্ছেন, ৩০ জানুয়ারি যদি শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি থাকে তাহলে নিশ্চিত ধানের শীষের বিজয় হবে। আজ শুক্রবার দুপুরে মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

তাবিথ আউয়াল আজ সারা দিন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচা​রণা চালান। সকালে মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ডে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন তাবিথ। এর পর তিনি টাউন হল, খিলজি রোড, ইকবাল রোড, বাবর রোড, নুরজাহান রোড, জেনেভা ক্যাম্প, মোহম্মাদীয়া ও নবোদয় হাউজিং, শেখের টেক, বায়তুল আমান হাউজিং ও আদাবর এলাকায় জনসংযোগ করেন।

সন্ধ্যায় শেরে বাংলানগরে জনসংযোগ শেষ করেন তাবিথ আউয়াল। সেখানে তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে -সন্ধ্যা পর্যন্ত আপনারা যে সাড়া দিয়েছেন, আমরা বুঝতে পারছি আমাদের ওপর আপনারা অনেক আস্থা রাখতে চাচ্ছেন।’

নুরজাহান রোডে জনসংযোগের সময় এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন নগর উন্নয়ন নিয়ে আপনার কী পরিকল্পনা। জবাবে তাবিথ বলেন, ‘পরিকল্পনা সবারই আছে। আগে নগরটাকে বাঁচাতে হবে। কারণ ঢাকা অবাসযোগ্য, নিরাপত্তাহীন শহরে পরিণত হয়েছে। আমরা নারী ও শিশু বান্ধব ঢাকা গড়তে চাই, আধুনিক ঢাকা গড়তে চাই।’

ধানের শীষের এই প্রার্থী বলেন, ‘আজকে ঐতিহাসিক এই এলাকা সম্পর্কে বলতে পারি, মোহাম্মদপুর অনেক অ​বহেলিত, অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। এ এলাকায় অনেক স্কুল-কলেজ, কিন্তু পার্কিং একটা বিশাল সমস্যা। ফুটপাতে ময়লা পড়ে আছে, যে কারণে পানি জমে থাকে, সেই পানি থেকে ডেঙ্গু মশা জন্মাচ্ছে। নিরাপত্তা নেই বলে মহল্লার গলিতে গলিতে গেট লাগানো হচ্ছে। আমরা সব সমস্যাকে সমন্বিত করে এর সমাধানে এগিয়ে যাব।’

আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি
তাবিথ আউয়াল বলেন, পূজার দিনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন ইচ্ছাকৃতভাবে বিতর্কিত অবস্থার সৃষ্টি করেছেন। তারপর আবার কিছু হাস্যকর এবং অসম্মানজনক মন্তব্য করেছেন যে স্কুলকেন্দ্রগুলোতে যেন একই সঙ্গে পূজা, একই সঙ্গে নির্বাচন যেন হয়। এ ধরনের বিতর্কিত কথা না বলাই ভালো।’

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী পূজার জন্য ভোট পেছাতে বলেছেন, আপনিও চান? এই প্রশ্নের জবাবে তাবিথ বলেন, ‘আমরা আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’

তাবিথ আউয়াল শ্যামলীর শাহী মসজিদে জুমার নামাজ পড়েন। নামাজ শেষে খিলজি রোড, ইকবাল রোড, বাবর রোড, জাকির হোসেন রোড, নিউ কলোনি এলাকায় তাবিথের প্রচারণায় যুক্ত হন জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নেতারা।

এ সময় জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, কেন্দ্রীয় নেতা ফরহাদ হালিম, অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক লুৎফর রহমানসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বিকেলে মোহাম্মদপুরের কাদেরাবাদ হাউজিং এলাকায় ঢাকার বৃহত্তর বরিশালবাসী ঐক্যজোটের ব্যানারে ধানের শীষের পক্ষে স্লোগান ও মিছিল করে স্থানীয় বাসিন্দারা।

ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের প্রচার। মোহাম্মদপুর, ১৭ জানুয়ারি। ছবি: জাহিদুল করিম
ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের প্রচার। মোহাম্মদপুর, ১৭ জানুয়ারি। ছবি: জাহিদুল করিম

মোহাম্মদপুরের জনসংযোগে তাবিথের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আতাউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মুজিবুর রহমান সরোয়ার, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম ওরফে নীরব, যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনসহ স্থানীয় নেতারা যোগ দেন।

ভাগ্যের পরিবর্তন করব
জেনেভা ক্যাম্পে উপস্থিতি দেখে অভিভূত হন তাবিথ আউয়াল। তিনি বলেন, ‘আমরা সবার অধিকার রক্ষা করার জন্য লড়াই করে যাচ্ছি। এ লড়াইয়ে আপনারা শামিল হয়েছেন, আপনাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি, সে জন্য বিশেষ ধন্যবাদ।’
তাবিথ বলেন, এ এলাকায় বিদ্যুৎ​ এখনো বিরাট সমস্যা। এলাকায় ভালো পানি পাওয়া যাচ্ছে না, আবার জমে থাকা ময়লা পানি​ নামছে না। সবার দুর্ভোগ হচ্ছে। একটা আধুনিক ঢাকাতে এখনো ​এই এলাকাকে আমরা ক্যাম্প বলে চিহ্নিত করি, এটা মানা যায় না। জেনেভা নামে ক্যাম্প থাকতে পারে, কিন্তু এখানকার বাসিন্দারা সিটি করপোরেশনের সব সুযোগ-সুবিধা অধিকারী। ইনশা আল্লাহ ৩০ জানুয়ারি ধানের শীষে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। আমরা সবাই মিলে আপনাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করব।’

তাবিথের বাবাও মাঠে
এ দিকে তাবিথ আউয়ালের পাশাপাশি আজ জনসংযোগে নামেন তাঁর বাবা আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি দল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে প্রচারণায় অংশ নেন কেন্দ্রীয় নেতা বরকতউল্লাহ (বুলু), মো. শাহজাহান, আমীরুল ইসলাম আলিম, মোসাদ্দেক আলী বুলবুল, বজলুল বাসিত, আহসান উল্লাহ হাসান। ডুমনিতে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আক্তার হোসেনও (ঠেলাগাড়ি) তাদের সঙ্গে ছিলেন। সেখান থেকে বিএনপির নেতারা খিলক্ষেত হয়ে ৫১ নম্বর ওয়ার্ডে উত্তরার বিভিন্ন সেক্টর, ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের হরিরামপুর হয়ে পল্লবীতে জনসংযোগ করেন।

জনসংযোগে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ধানের শীষের পক্ষে জনস্রোত নেমেছে। তাই প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে, মাইকিং করতে দেওয়া হচ্ছে না, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে। কাউন্সিলরদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, হামলা-মামলা আওয়ামী লীগের চরিত্র। কিন্তু মানুষের যে ঢল নেমেছে, হামলা চালিয়ে দমিয়ে রাখা যাবে না।