বেঁধে দেওয়া সময়ে যৌতুক দিতে পারেনি, পরদিন লাশ হলো সাথি

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানা এলাকার সাথি আক্তার (২৫) ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন গাজীপুরের টঙ্গীর শিলমুন এলাকার স্থানীয় এক ছেলেকে। বিয়ের প্রথম দুই মাস যেতে না যেতেই সংসারে দেখা দেয় অশান্তি। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন সাথিকে। প্রায়ই করতেন অমানবিক নির্যাতন।

সম্প্রতি তিন লাখ টাকার জন্য আবারও নির্যাতন করা হয় সাথিকে। গত বুধবারের মধ্যে সেই টাকা দেওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয় তাকে। কিন্তু সাথি সে টাকা দিতে না পারায় একদিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাতেই লাশ হতে হয় তাঁকে। আজ শুক্রবার সকালে টঙ্গীর পূর্ব থানায় মেয়ের লাশ দেখতে এসে বারবার এসব কথাই বলছিলেন বাবা বাবলু রহমান। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনার পর থেকেই সাথির স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন পলাতক। পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, এটি পরিকল্পিত হত্যা।

সাথির বাবা জানান, রাজধানী ঢাকার খিলক্ষেত এলাকায় মামার বাসায় থাকত সাথি। সেখান থেকে টঙ্গীর শিলমুন এলাকার সারওয়ার হোসেন বাবু নামের এক ছেলের সঙ্গে প্রেম হয় তার। বছরখানেক আগে সাথি তাদের (বাবা-মা) অমতে বিয়ে করে। এরপর স্বামীর সঙ্গে টঙ্গীর শিলমুন এলাকায় ভাড়া থাকত সাথি। কিন্তু মেয়ের সঙ্গে তারা কিছুদিন যোগাযোগ করেননি। এরপর ধীরে ধীরে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়। কিন্তু বিয়ের দুই তিন মাস যেতেই সাথির কাছে যৌতুক হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে সারওয়ার। তিনি খুব কষ্টে দুই লাখ টাকা জোগাড় করে জামাতাকে দেন। কিন্তু এরপর আবারও টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন তাঁর মেয়েকে। এ নিয়ে প্রায়ই মারধর করা হতো তাঁকে। মেয়ে তাঁকে ফোন করে জানায়, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে তাঁকে (সাথি) বাকি ৩ লাখ টাকা দেওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

বাবলু রহমান দাবি করেন, যৌতুকের টাকার জন্য তাঁর মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে তাঁর স্বামী ও পরিবারের লোকজন। টাকা না দিলে তাঁর মেয়েকে মেরে ফেলা হবে বলে প্রায়ই হুমকি দেওয়া হতো। বেঁধে দেওয়ার সময়ের মধ্যে টাকা দিতে না পারায় গতকাল তাঁকে হত্যা করা হয়। বাবলু বলেন, ‘সামন্যকটা টাকার জন্য তারা আমার মেয়েটাকে বাঁচতে দিল না। আমি এ হত্যার বিচার চাই।’

টঙ্গী পূর্ব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শুভ মণ্ডল জানান, এলাকার লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। সাথির লাশ খালি ঘরে খাটে শোয়ানো অবস্থায় ছিল। তাঁর গলায় কালো দাগ ছিল। তিনি বলেন, এ ঘটনার পর থেকেই সাথির স্বামী ও পরিবারের অন্যান্য লোকজন পলাতক রয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটা একটি পরিকল্পিত হত্যা।

টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে মেয়ের স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি ও ভাশুরের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। মামলাটির তদন্ত চলছে।