ছেলেকে মাইক্রোবাসে তুলে দিয়ে বাবা ফিরলেন লাশ হয়ে

নিহত দাইমুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
নিহত দাইমুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে বাবা মোটরসাইকেলে করে নিয়ে গিয়েছিলেন ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র দর্শক পর্ব ধারণ অনুষ্ঠান দেখতে। অনুষ্ঠান শেষে রাতে বাড়ি ফেরার পথে ঠান্ডা লাগবে ভেবে ছেলেকে শ্যালিকার সঙ্গে মাইক্রোবাসে তুলে দেন। নিজে রওনা দেন মোটরসাইকেলে করে। তবে তাঁর আর বাড়ি ফেরা হয়নি। পথে থেমে থাকা এক ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলটি ধাক্কা খাওয়ার ঘটনায় তিনি নিহত হন।

গতকাল শুক্রবার রাত ১১টার দিকে পঞ্চগড় সদর উপজেলার চৈতন্যপাড়া এলাকায় পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত বাবার নাম দাইমুল ইসলাম (৫৩)। তিনি পঞ্চগড় পৌরসভার ডোকরোপাড়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তিনি পঞ্চগড় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের স্টেনো টাইপিস্ট কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু আককাস আহমদ দুর্ঘটনার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেলে ছেলে সাদমান সাকিবকে নিয়ে দাইমুল ইসলাম পঞ্চগড় শহর থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র দর্শক পর্ব ধারণ অনুষ্ঠান দেখতে তেঁতুলিয়া উপজেলা শহরে গিয়েছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে রাত হয়ে যাওয়ায় ছেলেকে শ্যালিকার সঙ্গে একটি মাইক্রোবাসে তুলে দেন তিনি। নিজে মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা দেন পঞ্চগড় শহরের দিকে। ফেরার পথে রাত ১১ টার দিকে চৈতন্যপাড়া এলাকায় পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কে নষ্ট হয়ে থেমে থাকা একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা খায় তাঁর মোটরসাইকেলটি।

ওই সময় মোটরসাইকেলটি ট্রাকটির পেছন দিক থেকে দুমড়ে-মুচড়ে ভেতরে ঢুকে যায়। এতে গুরুতর আহত হন দাইমুল ইসলাম। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে দাইমুল ইসলামের লাশ দেখতে যান।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সদর উপজেলার কাকপাড়া এলাকার আরিফ হোসেন বলেন, ‘আমরা কয়েক জন তেঁতুলিয়া থেকে মোটরসাইকেলে করে পঞ্চগড়ের দিকে যাচ্ছিলাম। এ সময় চৈতন্যপাড়া এলাকায় দেখি একজন লোক মোটরসাইকেল সহ একটি থেমে থাকা ট্রাকে ধাক্কা খেয়ে পড়ে রয়েছেন। পরে একটি পিকআপকে থামিয়ে আমরা লোকটিকে হাসপাতালে পাঠাই।’

রাসেল ইসলাম নামের অপর এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান “ইত্যাদি”র দর্শক ধারণ পর্ব দেখে মাইক্রোবাসে করে তেঁতুলিয়া থেকে পঞ্চগড়ের দিকে ফিরছিলাম। এ সময় দাইমুল ইসলাম নামে ওই ব্যক্তি তাঁর ছেলের ঠান্ডা লাগতে পারে বলে আমাদের গাড়িতে তুলে দেন। গাড়িতে ওই ছেলেটির খালাও ছিল। পরে পঞ্চগড়ে পৌঁছার কিছুক্ষণ পর জানতে পারি, ওই ব্যক্তি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।’