খুলনায় নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বা নারী

খেজুরের রস পান করেছিলেন গোপালগঞ্জের অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূ। এর ১২ দিন পর তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকেরা জানান, তিনি নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত। ২২ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা নারী এখন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

১১ জানুয়ারি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই গৃহবধূকে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চার বছর পর নিপাহ ভাইরাস নিয়ে কোনো রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর আগে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সর্বশেষ নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত মাগুরার দুজনকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তখন চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁরা মারা যান।

ওই গৃহবধূর স্বামী প্রথম আলোকে বলেন, বাজার থেকে রস কিনে এনেছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রীসহ পরিবারের ছয়জন সদস্য ওই রস পান করেন। পরের দিন বাবার বাড়িতে যান তাঁর স্ত্রী। সেখান থেকে ১০ দিন পর আবার বাড়িতে ফেরেন। জ্বর হলে তাঁকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়। তবে তিনি সুস্থ হননি। পরে স্ত্রীকে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। কয়েক দফা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও কোনো রোগ ধরা পড়েনি তাঁর। পরে তাঁকে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এখানে কয়েক দফা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা জানান, ওই নারী নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত।

এলাকায় কৃষিকাজ ও ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন ওই নারীর স্বামী। তিনি বলেন, খেজুরের রস কাঁচা খেলে কোনো রোগ হতে পারে, তা তাঁরা জানতেন না। আশপাশের কাউকেও কোনো দিন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে দেখেননি তাঁরা।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এ টি এম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, নিপাহ ভাইরাস অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। এ কারণে যখন জানা গেছে ওই নারী নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত, তখনই তাঁকে আলাদা স্থানে রাখা হয়েছে। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছে।

হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, নিপাহ ভাইরাসে ৮০ শতাংশের বেশি রোগীর মৃত্যুর রেকর্ড আছে। তবে এ ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের চেয়ে বেশি দরকার সতর্কতা।

ওই নারী যে ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন, সেখানকার সহকারী রেজিস্ট্রার অনল রায় প্রথম আলোকে বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে ওই নারীর চিকিৎসা চলছে। রোগ শনাক্ত হতে দেরি হয়ে যাওয়ায় তিনি এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন। তাঁর গর্ভের সন্তানেরও এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে।

খুলনার সিভিল সার্জন সুজাত আহমেদ বলেন, খুলনায় এ বছর অন্য কেউ নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। নিপাহ ভাইরাস নিয়ে খুলনার গ্রাম পর্যায়ে সচেতনতামূলক কাজ চলছে। স্বাস্থ্যকর্মীরাও বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে এ ভাইরাস বিষয়ে সচেতন করছেন। তিনি বলেন, নিপাহ ভাইরাস মূলত বাদুড় থেকে ছড়ায়। খেজুরের রস বাদুড় খাওয়ার সময় তার লালা রসের মধ্যে পড়ে। তাই খেজুরের কাঁচা রস মূলত নিপাহ ভাইরাসের অন্যতম প্রধান উৎস। ওই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে খেজুরের কাঁচা রস পান করা একেবারেই ঠিক না। রস কিছুক্ষণ জ্বাল দেওয়ার পর লাল হয়ে গেলে পান করা যেতে পারে। কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাঁকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।