ভৈরবে গুদামে ধান দিতে অনাগ্রহ কৃষকের

বাজারদরের চেয়ে সরকার নির্ধারিত দাম বেশি। সরকারি খাদ্যগুদামে এখন ধান-চাল সরবরাহ মানেই লাভ। তাই তালিকায় নাম ওঠাতে জোর প্রচেষ্টা সবার। কিন্তু প্রভাবশালীদের দাপটে সাধারণ কৃষকেরা ভিড়তেই পারেন না। এমন চিত্র কমবেশি সারা দেশে হলেও উল্টো চিত্র কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। এখানে সরকারি খাদ্যগুদামে আমন ধান দিতে কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ নেই।

ভৈরবে ধান কেনা শুরুর প্রথম ২৮ দিনে খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ মাত্র ২৫ টন ধান কিনতে পেরেছে। মুঠোফোনে যোগাযোগ করে অনুরোধ জানিয়েও কৃষকদের গুদামমুখী করা যাচ্ছে না। এ নিয়ে বেশ বিব্রত উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার কার্যালয়।

জানতে চাইলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ও উপজেলা সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটির সদস্যসচিব শরীফ মোল্লা বলেন, ‘বাজারমূল্যের চেয়ে সরকারি মূল্য বেশ ভালো। তারপরও কৃষকেরা কেন গুদামে আসতে চাইছেন না, বুঝতে পারছি না। তবে আমরা ফোনে যোগাযোগ করছি। কৃষকদের সঙ্গে কথা হয়েছে, সবাই বলেছেন ধান দেবেন। আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের অভিযান সফল হবে।’ 

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার ভৈরবে আমন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪২ মেট্রিক টন। ৪৭২ জন কৃষকের কাছ থেকে কেনা হবে এই ধান। কৃষক নির্বাচন করা হয়েছে লটারির মাধ্যমে। প্রতি কৃষকের জন্য সর্বোচ্চ ৫০০ কেজি ধান বিক্রির সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রতি কেজি ধানের মূল্য ধরা হয়েছে ২৬ টাকা। কেনার ক্ষেত্রে খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ ধানের আর্দ্রতা নির্ধারণ করেছে ১৪ শতাংশ। এ ছাড়া বিজাতীয় পদার্থ পয়েন্ট ৫ শতাংশ, ভিন্ন জাতের মিশ্রণ ৮ শতাংশ, অপুষ্ট ও বিনষ্ট দানা ২ শতাংশ ও চিটা দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত হলেও ধান ক্রয়ে কোনো বাধা থাকবে না।

ভৈরবে ধান কেনা শুরু হয়েছে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর থেকে। তালিকার কৃষকদের জন্য ধান দেওয়ার সর্বশেষ সময় ধরা হয়েছে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। অর্থাৎ গুদামে নিয়ে আসার সময় আছে মাত্র ১৪ দিন। এই সময়ের মধ্যে ধান কিনতে হবে ২১৭ মেট্রিক টন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তালিকার কৃষকেরা ধান দিতে ব্যর্থ হলে অপেক্ষমাণ তালিকার কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা হবে। ওই তালিকায় রাখা হয়েছে ১২২ জন কৃষকের নাম। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ধান কেনার কাজ শেষ করতে হবে।

>■ দূর থেকে ৫০০ কেজি ধান নিয়ে এসে গুদামে দিয়ে কৃষকের তেমন লাভ হয় না।
■ কৃষকপ্রতি ধান সরবরাহের পরিমাণ বাড়িয়ে সর্বোচ্চ এক মেট্রিক টন করা হয়েছে।

ধান বিক্রিতে কৃষক পর্যায়ে কোনোভাবেই আগ্রহ জাগাতে না পারার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন বাজারে আমন ধানের মণ ৮০০ টাকা। বিপরীতে সরকারি মূল্য ১ হাজার ৪০ টাকা। মণপ্রতি ২৪০ টাকা বেশি। দূর থেকে নির্ধারিত ৫০০ কেজি ধান নিয়ে এসে আবার নিয়মনীতি মেনে ধান দিয়ে লাভের পার্থক্য খুব বড় হয় না। এ কারণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না কৃষকেরা। সে কারণে লাভের পরিমাণ বাড়াতে কয়েক দিন আগ থেকে নতুন নিয়ম করা হয়েছে। বর্তমানে কৃষকপ্রতি সর্বোচ্চ এক মেট্রিক টন ধান দিতে পারবেন। এতে কৃষকের লাভ বেড়ে যাবে। কৃষকপ্রতি ধান বিক্রির পরিমাণ বাড়ালেও মাঠপর্যায়ে এখন পর্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। 

গুদাম সূত্র জানায়, গুদামে ধান আসার মাত্রা খুবই ধীরগতিতে এগোচ্ছে। কেনার গতি না বাড়লে নির্ধারিত সময়ে অর্ধেক লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় জেলার মধ্যে ভৈরব গুদাম কর্তৃপক্ষকে ব্যর্থতার দায় নিতে হবে।

ধান বিক্রিতে অনাগ্রহের কারণ জানতে কথা হয় বেশ কয়েকজন তালিকাভুক্ত কৃষকের সঙ্গে। তাঁদের একজন হক মিয়া। তিনি উপজেলার আগানগর গ্রামের ছাগাইয়া গ্রামের কৃষক। হক মিয়া বলেন, ‘আমি জানতামই না আমার নাম তালিকায় আছে। পরে জানতে পারলাম ৫০০ কেজি ধান দিতে পারুম। এত দূর থাইক্কা এত কম ধান গুদামে নিয়ে পরতা পড়ব না। এই কারণে গুদামে ধান দেওয়া নিয়ে আমার আগ্রহ নাই।’ 

নতুন নিয়ম অনুযায়ী এক মেট্রিক টন ধান দিতে পারার সিদ্ধান্তের তথ্য জানা নেই হক মিয়ার। একই গ্রামের তালিকাভুক্ত কৃষক স্বপন চন্দ্র বিশ্বাসও একই মন্তব্য করেন। 

পুরো বিষয় নিয়ে কথা হয় উপজেলা ধান সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুবনা ফারজানার সঙ্গে। বিষয়টি নিয়ে তিনি বেশ চিন্তিত। লুবনা ফারজানা বলেন, ‘আমরা কৃষকপ্রতি ধান সরবরাহের পরিমাণ ৫০০ থেকে ১০০০ কেজি করেছি। এরপরও সাড়া মিলছে না। সমস্যাটা কোথায় খুঁজে বের করতে হবে।’