কক্ষ ফাঁকা পেলে ক্লাস হয়

রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮ হাজার। শ্রেণিকক্ষ আছে ২২টি। প্রয়োজন আরও ৩০টি। কলেজের কোনো মাঠ নেই। এমনকি সব ছাত্র একসঙ্গে দাঁড়ানোর মতো জায়গাও নেই। শিক্ষক–সংকটের কারণে স্নাতকের (সম্মান) প্রায় অর্ধেক ক্লাস অতিথি শিক্ষক দিয়ে চালাতে হয়। তা–ও শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা পাওয়া সাপেক্ষে ক্লাস হয়। এ অবস্থায় দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতেই আসে না। 

রাজশাহী নগরের রাজারহাতা এলাকায় ১৯৫৮ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কর্মজীবীদের উচ্চশিক্ষার জন্য নৈশ কলেজ হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়। ১৯৬৩ সালে কলেজটির দিবা শাখায় উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি শুরু হয়। কলেজটি জমির পরিমাণ ১ দশমিক ০৪ একর। চারটি একাডেমিক ভবন ও একটি ছাত্রাবাস রয়েছে। তবে কোনো মাঠ নেই। ১৯৮২ সালে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়।

শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ–সংকট

কলেজের সৃষ্ট শিক্ষকের পদ ৬০টি। তার মধ্যে ৫৯ জন বর্তমানে কর্মরত আছেন। তবে এনাম কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী প্রতিটি স্নাতক (সম্মান) বিষয়ের জন্য ৭ জন করে শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও এই কলেজে শিক্ষক রয়েছে ৪ জন করে। পদ সৃষ্টি না করায় কলেজের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষক পাওয়া যায় না। এ জন্য স্নাতক সম্মান শ্রেণির প্রায় অর্ধেক ক্লাস অতিথি শিক্ষক দিয়ে নিতে হয়। উপাধ্যক্ষের পদ প্রায় ছয় মাস শূন্য। কলেজের জন্য সৃষ্ট কর্মচারীর পদ আটটি হলেও বাস্তবে রয়েছেন দুজন। কলেজের পক্ষ থেকে দৈনিক মজুরিভিত্তিক ২৮ জন কর্মচারী দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে হচ্ছে।

কলেজের শ্রেণিকক্ষের সংকট সবচেয়ে প্রকট। বর্তমানে কলেজের চারটি একাডেমিক ভবন রয়েছে। ২২টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। ১৪টি বিভাগে স্নাতক (সম্মান) পাঠদানকারী এই কলেজে আরও ৩০টি শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন। অথচ এখন এই কলেজের দুটি ভবন একেবারে জরাজীর্ণ। গত বছর পরীক্ষা চলাকালে ছাদ থেকে চাঁই খুলে পড়ে। অল্পের জন্য কয়েকজন পরীক্ষার্থী ও শিক্ষক প্রাণে বেঁচে যান। এই ভবন দুটিতে ১২টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। শিক্ষকেরা জানান, নিরাপত্তার জন্য এক্ষুনি এই ভবন দুটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা উচিত। কোনো উপায় নেই দেখে তাঁরা ওই ভবনে ক্লাস নিচ্ছেন।

এ সম্পর্কে অধ্যক্ষ সানাউল্লাহ শেখ বলেন, কলেজে ১০ তলার নতুন একটি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এটি হলে শ্রেণিকক্ষের সংকট মিটে যাবে। 

>■ চারটি একাডেমিক ভবনে ২২টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। আরও ৩০টি শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন।
■ ৫৬ শয্যার ছাত্রাবাসে বর্তমানে মাত্র ২৬ জন ছাত্র রয়েছে। অন্য কক্ষগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী।

১৪ জানুয়ারি কলেজে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ফিন্যান্স বিষয়ের ক্লাসে ৩০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১০ জন এবং ইংরেজি ক্লাসে মাত্র ১২ শিক্ষার্থী উপস্থিত। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, প্রথম বর্ষে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসে আসেন। কিন্তু কক্ষ ফাঁকা পেলে ক্লাস হয়। নয়তো অপেক্ষা করতে হয়। দ্বিতীয় বর্ষে অনেকেই আর ক্লাসে আসেন না। শুধু ব্যবহারিক পরীক্ষার সময় কলেজে আসেন।

আবাসন–সংকট

১৯৯৮ সালে কলেজের ৫৬ শয্যার একটি ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে ছাত্রাবাসে মাত্র ২৬ জন ছাত্র রয়েছে। অন্য কক্ষগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সেগুলো খালি পড়ে রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রাবাসের নিচতলায় অবস্থিত ‘ডাইনিং স্পেস’ ছাত্রলীগ দখল করে রেখেছে। ফলে ছাত্রদের বাইরে গিয়ে খাবার খেতে হয়। 

১৫ জানুয়ারি ছাত্রাবাসে গিয়ে দেখা যায়, নিচতলায় ডাইনিংয়ের জায়গায় একটি মোটরসাইকেল ও অন্যান্য জিনিসপত্র রাখা। ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোটরসাইকেলটি রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের একজন নেতার। সংগঠনটির নেতা–কর্মীরা রাতে সেখানে আডডা দেন। ওই কক্ষে মোটরসাইকেল তোলার জন্য আলাদা গেট তৈরি করা হয়েছে।

ছাত্রাবাসের ডাইনিং দখল হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক আশরাফুল আলম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

রয়েছে আরও সমস্যা

কলেজের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন খুবই দুর্বল। কলেজের ৩০০ ফ্যান, ১০টি এসি ও গবেষণাগারের সব কম্পিউটার একসঙ্গে চালু করলেই বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়। সব অচল হয়ে পড়ে। শিক্ষকেরা জানান, শক্তিশালী একটি ট্রান্সফরমার দরকার। এটি কিনতে ১৫ লাখ টাকার প্রয়োজন। এদিকে কলেজের প্রবেশপথের দখল নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।