ক্যাসিনোর দুই ভাইয়ের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ক্যামেরাপারসনকে মারধরের অভিযোগ

ক্যাসিনো কারবারি দুই ভাই এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়ার সমর্থকদের বিরুদ্ধে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরাপারসনকে মারধরের পর ক্যামেরা ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। ফাইল ছবি
ক্যাসিনো কারবারি দুই ভাই এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়ার সমর্থকদের বিরুদ্ধে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরাপারসনকে মারধরের পর ক্যামেরা ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। ফাইল ছবি

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসি নিউজের এক ক্যামেরাপারসনকে ঢাকার জজকোর্ট এলাকায় মারধর করে ক্যামেরা ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্যাসিনো কারবারি দুই ভাই এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়ার সমর্থকেরা মারধর ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ক্যাসিনো কারবারি পুরান ঢাকার দুই ভাই এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়ার ভিডিও ফুটেজ নেওয়ার সময় তাঁদের কয়েকজন সমর্থক ডিবিসির ক্যামেরাপারসন আল আমিনকে মারধর করে তাঁর ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায় আবদুল মতিন নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে কোতোয়ালি থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মইনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুদকের করা মামলার আসামি দুই ভাই এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়াকে প্রিজন ভ্যানে করে আদালত চত্বরে আনা হয়। প্রিজন ভ্যান থেকে নামিয়ে দুজনকে হাজতখানায় নেওয়ার সময় ডিবিসির ক্যামেরাপারসন আল আমিন ভিডিও ফুটেজ নিচ্ছিলেন। তখন এনামুল ও রূপনের সমর্থকেরা তাঁর কাজে বাধা দেন। একপর্যায়ে আল আমিনকে মারধর করে তাঁর ক্যামেরা ছিনিয়ে নেন। পরে হাজতখানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে একজনকে আটক করতে সক্ষম হয়।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ক্যামেরাপারসনকে মারধর করার অভিযোগে আটক মতিন থানা হেফাজতে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

গত সোমবার কেরানীগঞ্জ থেকে এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল ও রূপনদের বাসায় এবং তাঁদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালায় র‍্যাব। সেখান থেকে পাঁচ কোটি টাকা এবং সাড়ে সাত কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়। এরপর সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া থানায় তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়।

দুদকের মামলায় রূপন রিমান্ডে
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় রূপন ভূঁইয়াকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে এনামুল হককে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর অনুমতি দিয়েছেন।

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েস আজ এই আদেশ দেন। ৩৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়ার পর গত বছরের ২৩ অক্টোবর এনামুল ও রূপনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করে দুদক।

এনামুল হকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও কার্যক্রমের মাধ্যমে ২১ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি। তাঁকে অবৈধ অর্থ অর্জনে সহায়তা করেন ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম ও এনামুলের বন্ধু হিসেবে পরিচিত হারুন অর রশিদ। তাই এই তিনজনকে একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে।

এজাহারে আরও বলা হয়, এনামুলের আয়কর নথি, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তাঁর বৈধ কোনো আয়ের উৎস নেই। তিনি ক্যাসিনো ব্যবসাসহ অবৈধ উপায়ে আয় করা অর্থ দিয়ে প্রচুর সম্পদ অর্জন করেছেন। এসব তাঁর আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। তিনি অবৈধ আয়ের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে দুদকের কাছে তথ্য আছে। সেসব তথ্য মামলার তদন্তকালে আমলে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে অনুসন্ধান দল।

রূপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় বলা হয়, তিনি অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে নামে-বেনামে ১৪ কোটি ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮২ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, রূপন ২০১৯-২০ করবর্ষ পর্যন্ত তাঁর আয়কর রিটার্নে কোনো স্থাবর সম্পদের তথ্য দেননি। ব্যবসার পুঁজি বাবদ ২ কোটি ৬২ লাখ ২৮ হাজার ৮৫২ টাকাসহ মোট ৩ কোটি ৮ লাখ ৬ হাজার ৯১১ টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন। এর মধ্যে ব্যবসার পুঁজি এবং এনু-রূপন স্টিল করপোরেশনের শেয়ার বাবদ প্রদর্শিত মোট ২ কোটি ৭১ লাখ ৮২ হাজার ৪৮১ টাকা অর্জনের সপক্ষে কোনো বৈধ আয়ের উৎস দেখাননি। এটি তাঁর জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণভাবে অর্জিত সম্পদ।

২০১৮ সালে এনামুল গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ পান। আর রূপন পান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ। তাঁদের পরিবারের ৫ সদস্য ও ঘনিষ্ঠজনসহ মোট ১৭ জন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগে পদ পান।