সেন্ট মার্টিনে দেড় কিলোমিটারে তিন মণ প্লাস্টিক, চিপসের খালি প্যাকেট

সেন্ট মার্টিনে দেড় কিলোমিটার এলাকায় দেড় ঘণ্টায় ১২০ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। ছবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সৌজন্যে
সেন্ট মার্টিনে দেড় কিলোমিটার এলাকায় দেড় ঘণ্টায় ১২০ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। ছবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সৌজন্যে

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের দেড় কিলোমিটার এলাকা থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টায় ১২০ কেজি (৩ মণ) প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসব প্লাস্টিক বর্জ্যের বেশির ভাগই ছিল একবার ব্যবহারযোগ্য কাপ, প্লেট, চিপসের খালি প্যাকেট।

‘গো গ্রিন’ প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে পরিচ্ছন্নতায় যোগ দিয়ে শিক্ষার্থীরা এই বিপুল পরিমাণ বর্জ্য পান। ‘গো গ্রিন’ হচ্ছে প্রকৃতি সংরক্ষণের লক্ষ্যে গড়ে তোলা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেচার কনজারভেশন ক্লাবের একটি কর্মসূচি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষাসফরের আওতায় এই কর্মসূচিতে অংশ নেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, সেন্ট মার্টিনে তাঁরা তিন দিন অবস্থান করে প্রকৃতি পর্যবেক্ষণের বিভিন্ন ধরনের কাজ পরিচালনা করেন। এ সময়ে প্রবালদ্বীপে এত অল্প দূরত্বে এত পরিমাণ বর্জ্য পেয়ে তাঁরা হতবাক হয়ে যান। মানুষের এমন অসচেতনতায় দ্বীপটিকে রক্ষার ব্যাপারে তাঁরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই প্রচারাভিযানে অংশ নেন ৭২ জন শিক্ষার্থী, তিনজন শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন কর্মী।

নেচার কনজারভেশন ক্লাব জানিয়েছে, দ্বীপটির পূর্ব সীমানার মাঝামাঝি অংশের দেড় কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা অপচনশীল দ্রব্য, যেমন নাইলন বা প্লাস্টিক দ্রব্যের ওপর সমীক্ষা চালানো হয়। নাইলন ও প্লাস্টিক জাত চিপস প্যাকেট, চায়ের কাপ, বোতল, পানির বোতল, পানির গ্লাস, প্লেট, ডাবের পানি খাওয়ার স্ট্র, খাবার প্যাকেট, ভাঙা চশমা বা কাঠি, মাছ ধরার জালের টুকরা, নাইলন দড়ির টুকরা ছাড়াও পোড়া মাটি ও ইটের ভাঙা টুকরা পাওয়া যায়।

সেন্টমার্টিন দ্বীপে বর্জ্য তুলছেন এক শিক্ষার্থী। ছবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সৌজন্যে
সেন্টমার্টিন দ্বীপে বর্জ্য তুলছেন এক শিক্ষার্থী। ছবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সৌজন্যে

মোট প্লাস্টিক বর্জ্য সংগৃহীত হয় ১২০ কেজি। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশই ছিল একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক। শুধু এই বর্জ্যই পাওয়া যায় ৭৮ কেজি। আর পুনঃপ্রক্রিয়াজাতযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য পাওয়া যায় ৪২ কেজি, যা মোট বর্জ্যের ৩৫ শতাংশ। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্যের মধ্যে ছিল চিপসের খালি প্যাকেট ৪৩ কেজি, প্লেট ও বক্স ২১ কেজি, কাপ ও স্ট্র ১৪ কেজি। পুনঃপ্রক্রিয়াজাতযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্যের মধ্যে ছিল পানি ও কোমল পানীয়ের বোতল ৩৪ কেজি এবং কারেন্ট জালের টুকরা আট কেজি।

প্রচারাভিযানের ব্যবস্থাপনা দলের সদস্য শিক্ষার্থী আফসানা ইমরোজ প্রথম আলোকে বলেন, প্রবালদ্বীপের এমন হাল দেখে তাঁরা মর্মাহত হন। দ্বীপটির প্রতিবেশ রক্ষায় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, তার ধারেকাছেও কিছু পাননি তাঁরা। তিনি আরও বলেন, এ দ্বীপটি যতটা মূল্যবান, সে অনুযায়ী একে মূল্যায়ন করতে পারছেন না পর্যটক বা স্থানীয় লোকজন। শিক্ষিত, অশিক্ষিতের বিষয় নয়, যাঁরাই ঘুরতে আসছেন, তাঁরাই প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের পর নির্দিষ্ট জায়গায় না রেখে যেখানে সেখানে ফেলে চলে যাচ্ছেন।

১০ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনের এই কার্যক্রমে অংশ নেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক এম নিয়ামুল নাসের, মুর্শিদা বেগম ও আমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া। এর মধ্যে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত।

‘গো গ্রিন’ প্রচারাভিযানে অংশ নেওয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ছবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সৌজন্যে
‘গো গ্রিন’ প্রচারাভিযানে অংশ নেওয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ছবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সৌজন্যে

প্রচারাভিযানে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম নিয়ামুল নাসের প্রথম আলোকে বলেন, দ্বীপটিকে পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে তোলাই ছিল এর লক্ষ্য। যাঁরা ঘুরতে যান বা শিক্ষাসফরে যান, তাঁরা যেন দ্বীপটির যেখানে–সেখানে ময়লা ফেলে চলে না আসেন। সবাই সচেতন হলে দ্বীপটিকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দ্বীপটির অনন্য বৈশিষ্ট্য ধরে রাখতে অবশ্যই প্লাস্টিক বর্জ্যসহ অন্যান্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে।

অধ্যাপক মুর্শিদা বেগম বলেন, সেন্ট মার্টিনের সামগ্রিক জীববৈচিত্র্য নানা দূষণের কারণে আজ হুমকির মুখে। তাই জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পর্যটকদের পাশাপাশি দ্বীপবাসীদেরও সচেতন হতে হবে।

অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান।

নেচার ক্লাব এক বিবৃতিতে এই অভিযান প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এ কে এম রফিক আহাম্মদের বক্তব্য উদ্ধৃত করে জানায়, মহাপরিচালক উদ্যোগটির প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে উদাহরণ সৃষ্টিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের এ ধরনের কার্যক্রম নেওয়া খুবই আশাপ্রদ। দ্বীপটিতে যাওয়া অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের এই উদাহরণ অনুসরণ করার ওপর জোর দেন তিনি। এ ছাড়া দ্বীপটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তথ্য, পরামর্শ ও সহযোগিতার আশ্বাস তিনি দেন।