নির্মল বাতাসের শহরে দুর্গন্ধ আর কত দিন?

রাজশাহী
রাজশাহী

বাড়ি থেকে বাঁশি বাজিয়ে বর্জ্য নিয়ে গিয়ে রাখা হচ্ছে রাস্তার ওপরে। এই ময়লা কাক, কুকুর টানাটানি করছে। আর পথচারীরা নাক চেপে রাস্তা পার হচ্ছে। নির্মল বাতাসের শহর হিসেবে খ্যাতি পাওয়া রাজশাহী নগরের বিভিন্ন সড়কে দেখা মেলে এমন দৃশ্য। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, ময়লা ফেলার জন্য সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) তৈরির জায়গা না পাওয়ায় ময়লাগুলো রাস্তাতেই থেকে যাচ্ছে। জমি অধিগ্রহণ করে এ সমস্যার সমাধান করতে অন্তত দুই বছর সময় লাগবে।

নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে এসটিএসে রাখা হয়। এরপর সেখান থেকে ময়লা ট্রাকে করে ভাগাড়ে ফেলা হয়। এ ব্যবস্থাপনায় নগরীর উন্মুক্ত জায়গা ময়লা জমে না। রাজশাহী সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ৩০টি ওয়ার্ডে এসটিএসের সংখ্যা মাত্র চারটি। ফলে বেশির ভাগ ওয়ার্ডেই ময়লা রাস্তার ওপর স্তূপ করে রাখা হয়। সেখান থেকে পরে গাড়িতে করে ভাগাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। দুপুরের পর থেকে রাস্তার ওপরে গৃহস্থালি ও বাজারের বর্জ্য এনে স্তূপ করে রাখা হয়। ব্যস্ত রাস্তার পাশের বর্জ্যে স্তূপ পথচারীদের ভোগায়। এই পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে ফেলে এলাকার গরু, কুকুর ও কাক। এদের টানাটানিতে বর্জ্য রাস্তার ওপরে ছড়িয়ে যায়। তাতে দুর্গন্ধও আরও বেশি ছড়ায়।

নগরের কোর্ট স্টেশনের উত্তর পাশে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের ওপরে বর্জ্য ফেলে রাখা হয়। এতে এলাকার পরিবেশ নোংরা হয়ে উঠেছে। গত রোববার বিকেলে এই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পথচারীরা নাক চেপে রাস্তা পার হচ্ছে। পথচারী গোলাম মোস্তফা বলেন, সারা দেশের মানুষের কাছে এই শহর নির্মল বাতাসের শহর হিসেবে পরিচিত, অথচ এই বাতাস দূষিত হচ্ছে রাস্তায় বর্জ্য ফেলার কারণে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এই অবস্থা আর কত দিন সহ্য করতে হবে, এমন প্রশ্নও করেন গোলাম মোস্তফা।

একই অবস্থা দেখা যায় নগরের কাদিরগঞ্জ এলাকায় নিউমার্কেটের পাশে। সেখানেও বিকেলে একইভাবে বর্জ্য ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকে। এর পশ্চিম পাশেই নগরের নাজমুল হক বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ। প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থীকে এই আবর্জনার পাশ দিয়ে যেতে হয়। ভুগতে হয় দুর্গন্ধে। পাশেই শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা জাহাঙ্গীর শাহর বাড়ি। তিনি বলেন, বিকেলবেলায় বাড়ি থেকে বের হলেই গন্ধে নাসারন্ধ্র যেন পুড়ে যায়। তিনি বলেন, এটি এত জনবহুল একটি জায়গা, যার এক পাশে নিউমার্কেট, আরেক পাশে বিদ্যালয় ও রাজশাহী মহিলা কলেজ। এ রকম গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় বর্জ্য ফেলে রাখা খুবই অস্বস্তিকর।

নগরের শিরোইল এলাকায় শুভ পেট্রলপাম্পের পেছনে ও নগরে মনিবাজারের পাশের রাস্তার ওপর একইভাবে বর্জ্য ফেলা হয়। এসব এলাকায় মানুষের চলাচল বেশি। ফলে অনেক বেশি মানুষ এই দুর্ভোগের শিকার হন।

কবে নাগাদ নগরবাসী এই দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাবে—জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, নগরের ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে চার-পাঁচটি ওয়ার্ডে বর্জ্য ফেলার জন্য এসটিএস নির্মাণ করা হয়েছে। বাকিগুলোতে এসটিএস তৈরি না করা পর্যন্ত এই দুর্ভোগ পোহাতে হবে। এখন জেলা পরিষদের জায়গায় এসটিএস বানাতে গেলে তারা বাধা দিচ্ছে। পাড়ামহল্লায় কিছু ফাঁকা জায়গা আছে, সেখানে করতে গেলেও লোকজন আপত্তি করছেন। ফলে জমি অধিগ্রহণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।