ঘুষের টাকাসহ গ্রেপ্তার চেইনম্যান নজরুল রিমান্ডে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঘুষের টাকাসহ গ্রেপ্তার শিকলবাহক (চেইনম্যান) নজরুল ইসলামের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সেশন জজ শেখ আশফাকুর রহমান এ আদেশ দেন।

দুদকের আইনজীবী কাজী সানোয়ার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, নজরুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দুদক সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। তাঁর সঙ্গে আর কে জড়িত, তা দুদক বের করতে চায়। ওই সময় নজরুলের আইনজীবী রিমান্ড বাতিলের আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

নজরুল ইসলাম একসময় চট্টগ্রাম জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কার্যালয়ের শিকলবাহক (চেইনম্যান) ছিলেন। ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তাঁকেসহ তিনজনকে তাৎক্ষণিক বদলির নির্দেশ দেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। এরপর তাঁর কর্মস্থল হয় ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদে। গত বছরের ৭ নভেম্বর বিকেলে নজরুল ইসলাম ধরা পড়েন দুদকের হাতে। এ সময় তাঁর কাছ থেকে পাওয়া গেছে প্রায় ৯১ লাখ টাকার কমিশনের চেক ও সাড়ে ৭ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম নগরের শপিং কমপ্লেক্সের দ্বিতীয়তলার ‘আনুকা’ নামের একটি কাপড়ের দোকান থেকে তাঁকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় দুদকের করা মামলায় তিনি কারাগারে। তবে ঘটনার পর নজরুলের পরিবার দাবি করে আসছে পারিবারিক সম্পত্তি বিক্রি করে এই টাকার মালিক হয়েছেন তাঁরা।

দুদক সূত্র জানায়, ১৯৯৩ সালে ১ হাজার ৮০০ টাকা বেতনে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে চাকরিতে ঢোকেন নজরুল। এখন তাঁর বেতন ২৫ হাজার টাকা। নগরের ও আর নিজাম রোডে স্ত্রী আনোয়ারার নামে দুই বছর আগে কেনেন অর্ধকোটি টাকার একটি ফ্ল্যাট। এ ছাড়া গ্রামের বাড়ি হাটহাজারীর গুমানমর্দনে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে নির্মাণ করেন দুইতলাবিশিষ্ট ডুপ্লেক্স বাড়ি।

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মুরাদপুর শাখায় নজরুলের নামে দুটি হিসাব রয়েছে। ২০০৮ সালের ৬ এপ্রিল থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত দুটি হিসাবে ৪ কোটি ৮৬ লাখ ৬৯ হাজা টাকা জমা হয়। উত্তোলন করেন ৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। বর্তমানে তার দুটি হিসাবে আছে ২১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। ওই ব্যাংকের শাখায় তার স্ত্রী আনোয়ারার একটি হিসাবে ২০১৫ সালের ২২ মার্চ থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত জমা হয় ২ কোটি ৪৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। আর উত্তোলন করেন ২ কোটি ৪৪ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। ২০০১ সালে কেনা চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্সে আনোয়ারার নামে থাকা ‘আনুকা’ ও ‘ফেমিলি ফেয়ার’ নামের দুটি দোকানের হিসাবে ছিল ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আর উত্তোলন করা হয় ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। বর্তমানে দুটি হিসাবে জমা আছে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা। এ ছাড়া চিটাগাং কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় আরেকটি দোকান রয়েছে, যার মূল্য ৮৫ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে একটি প্রাইভেট কারও রয়েছে।

দুদক সূত্রের ভাষ্য, নজরুলের বড় ছেলে সম্প্রতি লন্ডন থেকে এমবিএ করেছেন। ছোট ছেলে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়ছেন। দুই ছেলের লেখাপড়া, চিকিৎসা ও পারিবারিক ব্যয় বাদ দিলে তাঁর কোনো সঞ্চয় থাকার কথা নয়। স্ত্রী আনোয়ারা তাঁর নিজে নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫৩ হাজার টাকা বৈধ আয় করেছেন। অথচ আনোয়ারা গাড়ি, ফ্ল্যাট ও তিনটি দোকানের মালিক।

মামলা হওয়ার পর আসামিরা ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন ও সম্পত্তিগুলো হস্তান্তরের চেষ্টা চালাচ্ছেন। ওগুলো যাতে হস্তান্তর করতে না পারে, সে জন্য দুদকের পক্ষ থেকে সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আবেদন করা হয়।

১০ জানুয়ারি আদালত নজরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রীর নামে ফ্ল্যাট, দোকান, গাড়িসহ ৩ কোটি ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৬৯৮ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।