ভোটের পরিবেশ ভালো, তবু সন্দেহ-শঙ্কায় বিএনপি

দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকায় গণসংযোগ করছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। প্রথম আলো ফাইল ছবি
দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকায় গণসংযোগ করছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। প্রথম আলো ফাইল ছবি

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রচার চোখে পড়ার মতো। প্রার্থীদের জমজমাট গণসংযোগ, শোডাউন, মিছিলে মানুষের সমাগম গত কয়েকটি নির্বাচনের চেয়ে ভিন্ন। শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে মাঠের কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সিটি নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন। তবে মাঠে এতটা সুযোগ পাওয়াকেও সরকারের কৌশল বলে মনে করছে বিএনপি। তারা মনে করছেন, শেষ মুহূর্তে বা নির্বাচনের দিন ক্ষমতাসীনদের আচরণ আর এমন থাকবে না।

গত দুই বছরের মধ্যে হওয়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মাঠে খুব বেশি সুযোগ পায়নি বিএনপি। মামলা, ধরপাকড়, হয়রানি, প্রচারণায় হামলাসহ চাপে ছিল বিএনপি। কর্মীরাও মাঠে নামতে আতঙ্কে থাকতেন। তবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে দৃশ্যপট ভিন্ন। প্রচার সমানতলে জমেছে। তবে এর মধ্যেও কিছু ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির দুই প্রার্থীই হামলা ও বাধার অভিযোগ করে আসছেন।

দুই দিন আগেও ঢাকা উত্তরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেছিলেন পরিস্থিতি সুশৃঙ্খল। তবে তিন দিনের মাথায় গতকাল মঙ্গলবার গাবতলীতে গণসংযোগ করতে গিয়ে তিনি হামলার শিকার হন। তাঁর সঙ্গে থাকা বিএনপির ১০-১২ জন কর্মীও আহত হন। তাবিথ অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর নেতৃত্বে এ হামলা হয়। এ ঘটনা ছাড়া এখন পর্যন্ত বিএনপির দিক থেকে বড় ধরনের কোনো অভিযোগ নেই এবারের নির্বাচনে। এ ছাড়া মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় বিএনপি–সমর্থিত এক কাউন্সিলর প্রার্থীকে আটক করা ছাড়া আর কোনো আটকের অভিযোগও করেনি বিএনপি।

তবে ভোট গ্রহণের জন্য ইভিএম ব্যবহার নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছে বিএনপি। নির্বাচন কমিশনেও এই আপত্তি জানানো হয়েছে।

নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে বিএনপির বড় কোনো অভিযোগ না থাকলেও ‘সন্দেহ’ যাচ্ছে না। তাদের ধারণা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশে-বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে যে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে তা ঠিক করতে এই নির্বাচনে সরকার ‘ফেয়ার প্লে’ অবস্থান দেখাতে চায়। আবার শেষ মুহূর্তে গিয়ে ধরপাকড় বা হামলা-মামলার ঘটনার আশঙ্কা করছেন অনেকে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, নির্বাচন ঘিরে মিছিল, হইচই হলেও নির্বাচনের দুদিন আগে সব ঠান্ডা করে দেবে। এ আশঙ্কা বিএনপির মধ্যে রয়েছে যে শেষ মুহূর্তে গিয়ে পোলিং এজেন্ট বাছাইয়ের সময় তাদের হয়রানি করা হতে পারে।

রাজধানীর লালবাগ এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। প্রথম আলো ফাইল ছবি
রাজধানীর লালবাগ এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। প্রথম আলো ফাইল ছবি

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালেরও আশঙ্কা শেষে গিয়ে সরকারের অবস্থান পাল্টাবে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় তাহলে আওয়ামী লীগের পরাজিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এ জন্য তারা এখন দেখাচ্ছে যে খুব ভালো প্রদর্শনী হবে, আপনারা আসেন, উৎসব হবে। নির্বাচনের কয়েক দিন আগে কী করে তা দেখার বিষয়। গাজীপুর, বরিশাল, রাজশাহী বা সিলেট সিটি নির্বাচনের মতো করবে সেই আশঙ্কা করছি।’ পোলিং এজেন্টদের ওপর চাপ আসতে পারে বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রার্থীদের প্রচারণায় সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি দল থাকে, যারা ভিডিও করে নেয়। আমরা আশঙ্কা করছি ওই ভিডিও দিয়ে তাদের কোনো পরিকল্পনা থাকতে পারে।’ তবে বিএনপির এই নেতা জানান, পরিস্থিতি যেদিকেই মোড় নেয়, শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন তাঁরা।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এটা নিয়ে বিএনপির তীব্র আপত্তি। প্রতিদিনই তারা ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে কথা বলে আসছে। বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ইভিএম ব্যবহার না করতেও চিঠি দিয়েছে। কারিগরিভাবে ইভিএম দিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট চলে যাওয়ার আশঙ্কা বিএনপি নেতাদের।

এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘যেহেতু ইভিএম পদ্ধতিতে হচ্ছে সেখানে আমাদের সন্দেহ যে ইভিএমে তো কারচুপি করা সহজ। যদি তারা ইভিএমে কারচুপির মাধ্যমে পাসই করবে এখানে দৃশ্যত ঘটনা ঘটায়ে লাভ কী। এটাই হয়তো সরকারের কৌশল। তা ছাড়া ভোট দেওয়ার প্রতি মানুষের যে অনীহা সৃষ্টি হয়েছে, সেই আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার হয়তো এই আচরণ করে যাচ্ছে। তা ছাড়া পুলিশ প্রশাসনের নির্যাতন শুরু হলে আমাদের লোকজন তো কেন্দ্রে যেতে পারবে না এবং আওয়ামী লীগ নিজেদের মতো করে নিয়ে নেবে। সরকারে হাতে প্রশাসন, পুলিশ। শেষ মুহূর্তে গিয়ে তারা যা খুশি করতে পারে।’