মায়ের স্বপ্নপূরণে মেয়ের লড়াই

বাল্যবিবাহ রোধে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করছেন আরিয়া মুস্তারি।  ছবি: প্রথম আলো
বাল্যবিবাহ রোধে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করছেন আরিয়া মুস্তারি। ছবি: প্রথম আলো

মাত্র ১৬ বছর বয়সেই বিয়ে হয়ে যায় মায়ের। উচ্চশিক্ষার স্বপ্নের মৃত্যু সেখানেই। অনেক বছর ধরে চেপে রাখা সেই দুঃখের গল্প তিনি উজাড় করে বলেছিলেন মেয়ে আরিয়া মুস্তারির কাছে। সেটি ভালোভাবেই গেঁথে যায় মেয়ের মনে। মায়ের মতো আর কেউ যেন বাল্যবিবাহের শিকার না হয়—সেটি নিশ্চিতে এবার মাঠে নেমেছেন এই তরুণী। তারই অংশ হিসেবে একটি পাইলট প্রকল্প নিয়ে মায়ের বেড়ে ওঠার শহর চট্টগ্রামে এসেছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের এই বাসিন্দা। 

প্রকল্পের অংশ হিসেবে আরিয়া মুস্তারি সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পরিদর্শন করেন। সেখানে ছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি সচেতন করেন। কীভাবে ছাত্রীদের সচেতন করবেন তার প্রশিক্ষণ দেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের শিক্ষার্থীদেরও। এই শিক্ষার্থীরাই আগামীতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সচেতন ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবেন। নিজের গড়া মাই-সোলি নামের একটি অলাভজনক ফাউন্ডেশনের অধীনে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন আরিয়া মুস্তারি।

কীভাবে ফাউন্ডেশন খুললেন সেটির পেছনের গল্প প্রথম আলোর কাছে শোনান যুক্তরাষ্ট্রের বেবসন কলেজের স্কুল অব বিজনেসের ছাত্রী আরিয়া মুস্তারি। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস। কলেজ রুমে বন্ধুদের আড্ডা দিচ্ছিলেন আরিয়া। 

এমন সময়ে জন্ম মাই-সোলি ফাউন্ডেশনের। মাই-সোলি ইতালি শব্দ—যার অর্থ কখনো একা না। অর্থাৎ নারীরা একা নয়—সেটি বোঝাতেই এই নাম। দাতাদের দেওয়া অর্থেই চলে এই ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম। 

মুস্তারির জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে হলেও তাঁর মা-বাবার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরের পাথরঘাটায়। তাঁর পরিবার ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যায়। আরিয়া মুস্তারি বলেন, ‘আমার মায়ের ১৬ বছর বয়সেই বিয়ে হয়ে যায়। এরপরেই তাঁকে চলে যেতে হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এক বছরের মাথায় আমার বোনের জন্ম হয়। তারপর তাঁর আর পড়াশোনা হয়নি। মা তা নিয়ে এখনো কষ্ট পান। তাই তিনি এখন চান আর কোনো কিশোরী যেন বাল্যবিবাহের শিকার না হয়। মায়ের সেই স্বপ্নপূরণে এই ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছি।’

বাল্যবিবাহ রোধের পাশাপাশি নারীদের ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করবেন আরিয়া মুস্তারি। এ জন্য তাঁর ফাউন্ডেশন থেকে দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের আর্থিক সহায়তাসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে চান। প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্পের অধীনে তিনি সমস্যাগুলো চিহ্নিত করবেন এবং কোথায় কোথায় কাজ করা যায় সেটি দেখবেন। 

এরপর আগামী বছরের শুরু থেকে জোরেশোরে কাজে নেমে পড়তে চান। 

আরিয়া মুস্তারি তাঁর ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যারন উয়িনডেলকে নিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে আসেন। প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শেষে সম্প্রতি তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গেছেন। তবে এক বছরের মধ্যে আবারও বাংলাদেশে আসবেন জানিয়ে আরিয়া মুস্তারি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে বাল্যবিবাহ রোধে নেমে পড়তে চান পুরো দেশে। এরপর যেতে চান তৃতীয় বিশ্বের অন্য দেশগুলোতেও। আরিয়ার একজীবনের চাওয়া একটাই—‘বাংলাদেশ একদিন বাল্যবিবাহশূন্য হবে।’