নারায়ণগঞ্জে কাজে আসে না জেব্রা ক্রসিং

হাত দেখিয়ে রাস্তা পার। সম্প্রতি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায়।
হাত দেখিয়ে রাস্তা পার। সম্প্রতি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায়।

নারায়ণগঞ্জ শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে সড়কে পারাপারের জন্য আছে জেব্রা ক্রসিং। তবে জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারে পথচারী ও চালকদের জন্য কোনো নির্দেশনা নেই। সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষা কিংবা পথচারীদের নিরাপদে সড়ক পারাপারে কোনো কাজেই আসছে না জেব্রা ক্রসিংগুলো।

শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে জেব্রা ক্রসিং এবং চাষাঢ়া চত্বর, ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড ও মদনপুর মোড়ে পদচারী–সেতু নির্মাণ নারায়ণগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। দাবির মুখে গত বছরের শুরুতে শহরের সড়কে বেশ কিছু জেব্রা ক্রসিং তৈরি করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। ব্যস্ততম নারায়ণগঞ্জ শহরের সড়কে পথচারীদের নিরাপদে পারাপার নিশ্চিত করতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এহতেশামুল হক।

নগরের চাষাঢ়া চত্বর, পুরাতন কোর্ট মোড়, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব, ২ নম্বর রেলগেট ও ডিআইটি চত্বরের জেব্রা ক্রসিংগুলো ঘুরে নানান অনিয়ম দেখা গেছে। পথচারী ও চালকদের কেউ জেব্রা ক্রসিং পারাপারে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না। জেব্রা ক্রসিংগুলোতে সিগন্যাল বাতি নেই, রং উঠে অস্পষ্ট হয়ে গেছে। যখন-তখন হাত দেখিয়ে দৌড়ে সড়ক পার হচ্ছে পথচারীরা। চালকেরাও গতিরোধ করছেন না জেব্রা ক্রসিংয়ের সামনে। বরং পথচারী সড়ক পার হচ্ছে দেখে আরও দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাতে দেখা গেছে চালকদের।

কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ চাষাঢ়া জিয়া হলের সামনে থেকে শহীদ মিনারের সামনের সড়কে যাচ্ছিলেন স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আমজাদ হোসেন। হাত দেখিয়ে চারজন শিক্ষার্থীসহ তিনি সড়ক পার হয়ে যান। তবে সড়কের মাঝবরাবর এসে আটকে যায় তাঁর পেছনে থাকা কিছু শিক্ষার্থী। ভয় পেয়ে এদিক–সেদিক করতে থাকা শিক্ষার্থীদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন আরও দুজন পথচারী। জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার না করার কারণ জানতে চাইলে আমজাদ হোসেন বলেন, জেব্রা ক্রসিংগুলোতেও একইভাবে হাত দেখিয়ে রাস্তা পার হতে হয়। নিজের ইচ্ছায় গাড়ি থামে না। সেগুলো ব্যবহারের কোনো কারণ নেই। একই স্থানে নিজের ছোট্ট দুই সন্তানের হাত ধরে অনেকটা দৌড়েই সড়ক পার হতে দেখা যায় রেবেকা সুলতানা নামের এক গৃহিণীকে। ঝুঁকি নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ক্ষোভের সঙ্গে উত্তর দেন, ‘রাস্তায় কিছু আঁকিবুঁকি করে দিলেই শৃঙ্খলা চলে আসে না। ট্রাফিক পুলিশ নেই, সিগন্যাল নেই। একটা গাড়িও থামে না। রিকশাগুলো পারলে গায়ে উঠে আসে। ফুটপাতে হকারের কারণে হাঁটতে পারছিলাম না। বাধ্য হয়েই বাচ্চাগুলোকে ঝুঁকিতে ফেলে রাস্তা পার হতে হয়েছে।’

নগরের পুরাতন কোর্ট মোড়ে কথা হয় প্রাইভেট কারের চালক দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। জেব্রা ক্রসিংয়ে না থামার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেউ আমাগো থামতেও কয় না, যাইতেও কয় না। মন চাইলে থামি, মন না চাইলে থামি না। পাবলিক (পথচারী) রাস্তা পার হইতে দৌড়ায়, আমরাও দ্রুত যাইতে দৌড়াই।’

জেব্রা ক্রসিংগুলোতে ট্রাফিক পুলিশ ও সিগন্যাল বাতি না থাকায় চালকদের থামানো যাচ্ছে না বলে জানান চাষাঢ়া পুলিশ বক্সের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সোহরাব হোসেন। তিনি বলেন, নিয়ম থাকলে সেটা মানা বা না–মানার প্রশ্ন আসে। এখানে তো কোনো নিয়ম নেই। পর্যাপ্ত ট্রাফিক কনস্টেবল, সিগন্যাল বাতি এবং জেব্রা ক্রসিংগুলোকে দৃশ্যমান করে পথচারীদের অভ্যস্ত করা গেলে সুফল পাওয়া যাবে।

অস্পষ্ট জেব্রা ক্রসিংগুলো রং করে দৃশ্যমান করা হবে জানিয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এহতেশামুল হক বলেন, সিটি করপোরেশন জেব্রা ক্রসিং তৈরি করে দিয়েছে। সেগুলো কার্যকর করার দায়িত্ব ট্রাফিক বিভাগের। তারা চাইলে সিটি করপোরেশন জেব্রা ক্রসিংয়ে সিগন্যাল বাতির ব্যবস্থা করবে।

জনবল–সংকটের কারণে ট্রাফিক পুলিশ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে হিমশিম খাচ্ছে উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘যেখানে জেলায় আড়াই শতাধিক ট্রাফিক পুলিশ প্রয়োজন, সেখানে আমরা ৪৫ জন কাজ করছি। সিটি করপোরেশন সিগন্যাল বাতির ব্যবস্থা করলে শহরের জেব্রা ক্রসিং কার্যকর করা সহজ হবে। আমরা শিগগিরই তাদের কাছে লিখিত আবেদন জানাব।’