ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে কুৎসা রটানোই এই শিক্ষকের কাজ

কায়েস আল কায়কোবাদ
কায়েস আল কায়কোবাদ

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ। গত দেড় বছরেরও বেশি সময়ে এক দিনও স্কুলে যাননি। তবে বেতন তুলেছেন নিয়মিত। তিনি মাদকাসক্ত। ছদ্মনামে ফেসবুকে আইডি খুলে মানুষের নামে অপপ্রচার করাই ছিল তাঁর কাজ।

সর্বশেষ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিয়ে নিজের ফেসবুক আইডি এবং ছদ্মনামের একাধিক আইডি থেকে চরম আপত্তিকর মন্তব্য করেন। গৌরীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (আইসিটি) মামলা করলে পুলিশ গত সোমবার রাতে ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষকের নাম কায়েস আল কায়কোবাদ ওরফে লাজুক। তিনি গৌরীপুরের ধুরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। সোমবার রাতে গ্রেপ্তারের পর গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কায়েস আল কায়কোবাদ গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। তিনি ঈশ্বরগঞ্জ কলেজ ছাত্র সংসদে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে এজিএস পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

গৌরীপুর উপজেলায় কর্মরত একাধিক শিক্ষক ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কায়েস সম্প্রতি একাধিক শিক্ষককের বদলির সুপারিশ নিয়ে যান উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মনিকা পারভীনের কাছে। তবে নিয়মবহির্ভূত হওয়ায় শিক্ষা কর্মকর্তা ওই শিক্ষকদের বদলির আদেশ দিতে পারেননি। এতে কায়েস শিক্ষা কর্মকর্তার ওপর ক্ষিপ্ত হন। গত রোববার থেকে কায়েস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডি থেকে এবং ছদ্মনামের আরও কয়েকটি আইডি থেকে মনিকা পারভীনকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। এসব মন্তব্যের সঙ্গে আপত্তিকর ছবিও যুক্ত করে দেন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পেশার মানুষের মধ্যে সমালোচনা চলছে।

এ ঘটনায় মনিকা পারভীন বাদী হয়ে গৌরীপুর থানায় আইসিটি মামলা করেন। মামলায় কায়েসসহ তিনজনকে আসামি করা হয়। অপর দুই আসামি হলেন তৌহিদা আক্তার ওরফে রুমা ও শামসুজ্জামান বাপ্পী। এ দুজন কায়েসের সহকারী হিসেবে পরিচিত। পুলিশ সোমবার রাতে তাঁদের গ্রেপ্তার করে।

কায়েস আল কায়কোবাদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর গতকাল গৌরীপুর উপজেলায় কর্মরত শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের মধ্যে বিষয়টি নানা আলোচনা হয়। একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেন, কায়েস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থাকলেও তিনি অন্তত গত দেড় বছরে এক দিনও স্কুলে যাননি। কিন্তু প্রতি মাসে তিনি নিয়মিত বেতন পান। তিনি ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে মানুষের সঙ্গে নানা ধরনের প্রতারণা করেন। কায়েস ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন বলে নিজেই প্রচার করেন। এমনকি তিনি নিয়মিত ইয়াবা সেবন করেন। ভয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতেন না। দিনের পর দিন তিনি বিদ্যালয়ে না গিয়ে প্রধান শিক্ষককে এ বিষয়ে মুখ না খোলার হুমকি দিতেন।

কায়েসের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া তৌহিদা আক্তার ও শামসুজ্জামান বাপ্পীও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের প্রতারণার ফাঁদ পেতে মানুষকে হয়রানি করতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. শহীদুল হক সরকার বলেন, কায়েস আল কায়কোবাদ একবার তাঁকে নিয়েও ফেসবুকে অপপ্রচার করেছিলেন। তাঁর বানোয়াট ছবি প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময় জনপ্রতিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের ছবি সম্পাদনা করে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দিতেন। তিনি ইয়াবা ব্যবসা করতেন। তিনি গ্রেপ্তার হওয়ায় মানুষের মনে স্বস্তি এসেছে।

গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন বলেন, সোমবার রাতে কায়েসকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁর কাছে ইয়াবা পাওয়া যায়।