বীর কমলার দিঘি

কমলা দেবী ছিলেন ত্রিপুরা রাজ্যের মহারাজা ধন্য মানিক্যের স্ত্রী। ধন্য মানিক্য ১৪৬৩-১৫১৫ সাল পর্যন্ত ত্রিপুরা রাজ্যের মহারাজা ছিলেন। কমলা দেবীর নামে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের বীর কমলার দিঘির নামকরণ হয়। ছয় একর জায়গাজুড়ে এই দিঘি দূরদূরান্ত থেকে দেখতে আসেন দর্শনার্থীরা। তাঁরা নৌকা নিয়ে দিঘিটি ঘুরে দেখেন। 

ইতিহাসবিদদের ভাষ্যমতে, ১৫০১ সালে ইলিয়াছ শাহ আরাকান রাজ্যের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। তখন চট্টগ্রাম অঞ্চলের অধিকার নিয়ে বাংলা, ত্রিপুরা ও আরাকান রাজ্যের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এ সুযোগে ১৫১৩ সালে ত্রিপুরা রাজ্যের রাজা ধন্য মানিক্য চট্টগ্রাম অঞ্চল দখলের জন্য আক্রমণ করেন। তিনি কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড় পার হয়ে চকরিয়ার মানিকপুর পর্যন্ত দখল করে ‘চাটিগ্রাম বিজয়ী’ উপাধিসংবলিত মুদ্রা জারি করেন। ওই সময় ধন্য মানিক্য ও তাঁর সৈন্য বাহিনী চকরিয়ার কাকারা এলাকায় বিজয়ের ও উন্নয়নের নিদর্শন হিসেবে একটি দিঘি খনন করেন। যে দিঘির নামকরণ করা হয় কমলা দেবীর নামে। বর্তমানে দিঘিটি ‘বীর কমলার দিঘি’ নামে পরিচিত। 

প্রচলিত আছে, ধন্য মানিক্যের সৈন্য বাহিনী বীর কমলার দিঘি খননের সময়ে পানি পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন কমলা দেবী দিঘিতে নামলে মাঝখানে পানি উঠতে শুরু করে। এ কারণে দিঘিটি তাঁর নামে হয়। কথিত আছে, দিঘির মাঝখানের অংশটি কখনো শুকায় না। এই দিঘি থেকে স্থানীয় লোকজন পানি সংগ্রহ করে রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করেন। তাঁদের ধারণা, এ দিঘির পানি রোগ সারিয়ে তোলে। 

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বীর কমলার দিঘি।  ছবি: প্রথম আলো
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বীর কমলার দিঘি। ছবি: প্রথম আলো

সাহিত্যিক আবদুর রশিদ তাঁর নোয়াই টাটওয়া গবেষণাগ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, কমলা দিঘির পাশে একটি শিলালিপি পাওয়া গিয়েছিল। তবে সে সময় শিলালিপিটির অর্থ বোঝা যায়নি। বর্তমানে শিলালিপিটির কী অবস্থা, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই।

দিঘিটির পরিচর্যায় নিয়োজিত মোজাম্মেল হক (৬৪) বলেন, এই দিঘি দেখতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন আসেন। একসময় দিঘিটি আগাছায় ভরপুর ছিল। সরকারিভাবে এটি সংরক্ষণ করতে হবে। 

১৯৪৬-৪৭ সালে চকরিয়ার বাসিন্দা আবু খায়ের ও হাবিবুর রহমান বীর কমলার দিঘিটি সরকারের কাছ থেকে নিলাম খরিদ করেন। পরবর্তী সময়ে দিঘির একক মালিক হন আবুল খায়েরের ছেলে চকরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম। ২০১০ সালে তিনি দিঘিটি সংস্কার করে মাছ চাষ শুরু করেন। এই দিঘির পাড়ে শতবর্ষী কয়েকটি তেঁতুলগাছ রয়েছে। চকরিয়া পৌর শহর থেকে অটোরিকশা নিয়ে জিদ্দা বাজার হয়ে সহজেই এই দিঘি দেখতে যাওয়া যায়।