মাপামাপি হয়, সেতু হয় না

ফকিন্নী নদীর ওপর বাঁশের তৈরি সাঁকো। ভারী মালামাল নিয়ে নদী পার হতে ছয় কিলোমিটার ঘুরতে হয় গ্রামের বাসিন্দাদের। সম্প্রতি রাজশাহীর বাগমারার দহেরঘাটে।  ছবি: প্রথম আলো
ফকিন্নী নদীর ওপর বাঁশের তৈরি সাঁকো। ভারী মালামাল নিয়ে নদী পার হতে ছয় কিলোমিটার ঘুরতে হয় গ্রামের বাসিন্দাদের। সম্প্রতি রাজশাহীর বাগমারার দহেরঘাটে। ছবি: প্রথম আলো

‘কত্ত বছর ধইরা শুইন্যা আসতেছি অল্প দিনের মধ্যে বিরিজ (সেতু) হবে। এ জন্য বারবার মাপ নিয়ে যান অফিসাররা। কিন্তু সেতু আর হয় না।’ কথাগুলো ক্ষোভের সঙ্গে বলছিলেন, মেকুর আলী (৬০)। রাজশাহীর বাগমারার কাচারীকোয়ালীপাড়া ইউনিয়নের দহেরঘাটে সেতু না হওয়ায় এই ক্ষোভ তাঁর।

উপজেলার কাচারীকোয়ালীপাড়া ইউনিয়নকে বিভক্ত করে রেখেছে ফকিন্নী নদী। ইউনিয়নের কিছু অংশ নদীর পশ্চিম ও কিছু অংশ পূর্ব পাশে অবস্থিত। দুই অংশে চলাচল করতে হয় বাঁশের সাঁকো ও নৌকা দিয়ে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, দহেরঘাটে সেতু না থাকায় লোকজনকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ জন্য অতিরিক্ত ছয় থেকে সাত কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয় তাঁদের। নদীর উভয় পাশে স্কুলসহ কিছু প্রতিষ্ঠান থাকায় প্রতিদিন দুই পারের প্রায় তিন হাজার বাসিন্দাকে নৌকায় অথবা কয়েক কিলোমিটার ঘুরে নদী পার হতে হয়।

কাচারীকোয়ালীপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, নৌকা আর সাঁকোর জন্য নদীর দুই পারের বাসিন্দাদের প্রতিবছর ঘাটের ইজারাদারদের ধান দিতে হয়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মাধ্যমে ঘাটটি ইজারা দেওয়া হয়। যারা ইজারাদারদের ধান দেয় না, তাদের প্রতিবার পারাপারের জন্য পাঁচ টাকা করে দিতে হয়। যুগ যুগ ধরে দহেরঘাটে পারাপারে এই রীতি চলে আসছে।

৪ জানুয়ারি সকালে দহেরঘাটে গিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে লোকজনকে চলাচল করতে দেখা যায়। সাঁকোর এক পাশে আক্কাছ নামের এক ব্যক্তি বসে নদী পারাপারের টাকা আদায় করছিলেন। তিনি এই ঘাটটি এক বছরের জন্য ইজারা নিয়েছেন। সেতুর এক পাশে মানসিংহপুর ও আরেক পাশে মধুপুর গ্রাম। দুটিই কাচারীকোয়ালীপাড়া ইউনিয়নের আওতায়।

নদী পারাপারের সময় দুই গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, উপজেলার নরদাশ, বাসুপাড়া, গোবিন্দপাড়া ও সোনাডাঙ্গা ইউনিয়ন এলাকার বাসিন্দাদের উপজেলা সদরে যেতে এই দহেরঘাট ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু ভারী মালামাল আনা–নেওয়া করতে হলে অতিরিক্ত ছয় কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা সদরে যেতে হয়।

মধুপুর গ্রামের কৃষক আয়েদ আলী (৫৬) বলেন, ‘সেতুর জন্য সরকারি লোকজন এসে মাপামাপি করার সময় আশ্বস্ত হই। স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরাও আশ্বাস দেন। কিন্তু সেতু হয় না। বর্ষা মৌসুমে নদী পারাপারে ঝুঁকি থাকে। অনেকবার নৌকাডুবির ঘটনাও ঘটেছে। এরপরও কোনো উদ্যোগ নেই।’

এ বিষয়ে বাগমারা উপজেলার প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দহেরঘাটে সেতু নির্মাণের জন্য তাঁর সময়ে (গত চার বছরে) তিনবার মাপামাপি করে প্রস্তাবনা প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে পাঠানো হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। নদীর উভয় পাশে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ মিটার পর্যন্ত ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি ও বসতবাড়ি আছে। সেতু নির্মাণ করা হলে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।