৫ বছর আগে উদ্বোধন এখনো চালুই হয়নি

জয়পুরহাটের ছোট যমুনা নদীর মৃধাপাড়া পদচারী সেতুর উদ্বোধনী ফলক।  ছবি: প্রথম আলো
জয়পুরহাটের ছোট যমুনা নদীর মৃধাপাড়া পদচারী সেতুর উদ্বোধনী ফলক। ছবি: প্রথম আলো

পাঁচ বছর আগে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার আয়মারসুলপুর ইউনিয়নের মৃধাপাড়া গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদীর মৃধাপাড়া ঘাটে পদচারী–সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছিল। কিন্তু উদ্বোধনের পর ওই সেতুর ওপর দিয়ে আজ পর্যন্ত কারও পারাপার হওয়ার ভাগ্য হয়নি। 

কারণ, উদ্বোধনের পর সেতুর বাকি কাজ আর শেষ করা হয়নি। নদীর পাড়ের ওপর উদ্বোধনের ফলকটি আজও সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পাঁচ বছর আগে এর উদ্বোধন করেছিলেন স্থানীয় সাংসদ সামছুল আলম। 

সেতুটি নির্মাণ না হওয়ায় মৃধাপাড়া গ্রামবাসী নদী পারাপারে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, ছোট যমুনা নদীর মৃধাপাড়া ঘাটে মরচে পড়া ছোটবড় কয়েকটি লোহার খুঁটি দাঁড়িয়ে রয়েছে। ঘাটের ওপর উদ্বোধনী একটি ফলকে বড় বড় অক্ষরে লেখা, ‘মৃধাপাড়া ফুটব্রিজ এর শুভ উদ্বোধন। উদ্বোধন করেন অ্যাডভোকেট সামছুল আলম, মাননীয় সংসদ সদস্য, জয়পুরহাট-১। সার্বিক তত্ত্বাবধানে মো. জাহিদুল ইসলাম বেনু, চেয়ারম্যান, তিন নম্বর আয়মারসুলপুর ইউনিয়ন। তারিখঃ ০২ মে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ’। ওই স্থান থেকে ২০-২৫ গজ উত্তরে নদীর ওপর বাঁশ ও কলাগাছ দিয়ে নির্মিত সেতু দিয়ে লোকজন নদী পারাপার হচ্ছিলেন। 

মৃধাপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা জানান, তাঁদের গ্রামে চার শতাধিক পরিবারের বাস। ছোট যমুনা নদীর পূর্বপাড়ে আয়মারসুলপুর গ্রাম। ওই গ্রামে দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আর মৃধাপাড়া গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু সেখানে মাধ্যমিক পর্যায়ের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। তাই মৃধাপাড়া গ্রামের মাধ্যমিকের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী নদী পার হয়ে আয়মারসুলপুর গ্রামের স্কুল দুটিতে যাতায়াত করে। শুষ্ক মৌসুমে বাঁশ ও কলাগাছ দিয়ে সেতু বানিয়ে নদী পারাপার হন এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা। অস্থায়ী এই সেতুটি পার হওয়ার সময় পড়ে গিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই আহত হয়। 

গ্রামবাসী আরও জানান, আয়মারসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বেনু মৃধাপাড়া ঘাটে ছোট যমুনা নদীর ওপর একটি পদচারী–সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। গ্রামবাসী সামর্থ্য অনুযায়ী পদচারী–সেতুর জন্য আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়ান। পদচারী–সেতু নির্মাণের কাজও শুরু হয়। তবে কাজ শেষ হওয়ার আগেই ২০১৫ সালের ২ মে স্থানীয় সাংসদ সামছুল আলমকে এনে সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। নদীর ঘাটে কয়েকটি লোহার খুঁটি পোতার পর আর কাজ হয়নি। পরের বছর ইউপি নির্বাচনে জাহিদুল ইসলাম আবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কিন্তু তিনি আর পদচারী–সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেননি। এখন নদীতে পোঁতা লোহার খুঁটিগুলো মরচে পড়ে নষ্ট হয়েছে। সেতুটি নির্মাণের জন্য সাংসদ ও ইউপি চেয়ারম্যানকে বারবার বলেছেন গ্রামবাসী। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। নদীতে সরকারিভাবেও সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। সেতুর অভাবে নদী পারাপারে তাঁদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। 

মৃধাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সজল হোসেন বলেন, তাঁদের গ্রামে মাধ্যমিক পর্যায়ের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। নদীর পূর্বপাড়ে আয়মারসুলপুর গ্রামে দুটি মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয় রয়েছে। সেই দুটি বিদ্যালয়ে গ্রামের অর্ধশতাধিক ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করছে। নদী ভরলে শিক্ষার্থীদের কেউ সাত কিলোমিটার ঘুরে বিদ্যালয়ে যায়। আবার দূরত্বের কারণে অনেক শিক্ষার্থী বর্ষার মৌসুমে পাতিল নিয়ে নদীতে সাঁতার কেটে পার হয়। 

পদচারী–সেতুর নির্মাণকাজের দায়িত্বে ছিলেন জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল আলমের উদ্যোগে পদচারী–সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। সেতুটি নির্মাণে ১১ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। সেতু নির্মাণের জন্য মোট ৪৮টি লোহার খুঁটি বসানো হয়। এতে সাড়ে তিন লাখ টাকার ওপর খরচ হয়। এর মধ্যে দেড় লাখ টাকা গ্রামবাসী দিয়েছিলেন। টাকার অভাবে কাজ আর করা যায়নি। 

ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল আলম বলেন, ‘আমি মৃধাপাড়া ঘাটে নিজ উদ্যোগে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু প্রকৌশলী ছাড়া নিজেদের উদ্যোগে বড় এ সেতু নির্মাণ করা হলে তা ভেঙে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলে আর নির্মাণ করা হয়নি। সরকারিভাবে সেখানে সেতু নির্মাণের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি। গ্রামবাসীরা সেতু নির্মাণে মাত্র ৭ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। তাঁরা দেড় লাখ টাকা দিয়েছেন বলে জাকির হোসেন যে তথ্যে দিয়েছেন, সেটি সঠিক নয়।’ 

জয়পুরহাট-১ (জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি) আসনের সাংসদ সামছুল আলম বলেন, মৃধাপাড়ায় ইউপি চেয়ারম্যান ব্যক্তি উদ্যোগে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। অর্থের অভাবে সেতুটি নির্মাণ করতে পারেননি তিনি।