রায়েরবাজারে বিদ্যুতায়িত হয়ে ৩ শ্রমিকের মৃত্যু

কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে নিহত স্বজনকে দেখে শোকাহত তিনি। ছবি: জাহেদুল করিম
কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে নিহত স্বজনকে দেখে শোকাহত তিনি। ছবি: জাহেদুল করিম

 ‘আগুন, আগুন চিৎকার শুনে দৌড়ে এসে দেখি, তিনজনের শরীরে ও পরনের কাপড়ে আগুন জ্বলছে। তাঁদের নিথর দেহ কুঁজো হয়ে পড়ে আছে। আগুনে পুড়ে যাওয়া অন্য দুজন চিৎকার করছিলেন। দুজনের পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থান পুড়ে গেছে।’ বলছিলেন মো. রিপন। রাজধানীর রায়েরবাজারের বারইখালীতে বুড়িগঙ্গার তীরে সীমানা পিলার বসাতে পাইলিংয়ের প্রস্তুতি চলছিল। এ সময় ওপর দিয়ে যাওয়া ১১ হাজার কেভি বিদ্যুৎ লাইনের সঙ্গে লোহার পাইপ লেগে বিদ্যুতায়িত হয়ে তিন শ্রমিক পুড়ে মারা যান। তাঁরা হলেন ঝড়ু শেখ (৫৫), তাঁর আপন ভাই সাইফুল শেখ (৪৫) ও মনজু মিয়া (৩৫)। ওই দুর্ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা রিপন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তত্ত্বাবধানে বুধবার বুড়িগঙ্গার দুই ধারে সীমানা সুরক্ষায় পিলার বসানোর কাজ চলছিল। প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী বলেন, এ কাজে শ্রমিকদের জন্য নিরাপত্তামূলক কোনো ব্যবস্থাই ছিল না।

প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিক মো. সোহাগ জানান, সীমানা পিলার বসানোর জন্য শ্রমিকেরা তিনটি লোহার পাইপ দাঁড় করাচ্ছিলেন। কিন্তু পাইপ তুলতেই তা বিদ্যুতের তারের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। একপর্যায়ে পাইপ ধরে থাকা ঝড়ু শেখ, সাইফুল শেখ ও মনজু মিয়ার শরীরে আগুন ধরে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁরা মারা যান। তাঁদের রক্ষা করতে গিয়ে দগ্ধ হন ঠিকাদারের কাছ থেকে চুক্তিতে কাজ নেওয়া চান বাদশা ও শ্রমিক আবদুল জলিল। গতকাল ১০ জনের মতো কাজে অংশ নেন। শ্রমিকদের নিরাপত্তায় হেলমেট ও গামবুট ছিল না। শ্রমিকেরা ঘটনাস্থলের পাশে ছাপড়ায় থাকতেন।

স্থানীয় মুদি দোকানি মনির হোসেন বলেন, ঘটনার আধা ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিস এসে এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এর আগেই দগ্ধ হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়। তাঁদের উদ্ধার করে রায়েরবাজারে শিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানান, এই দুজনের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত।

হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী প্রথম আলোকে বলেন, ভূমি থেকে ১০-১২ ফুট ওপর দিয়ে ১১ হাজার কেভি বিদ্যুতের সরবরাহ লাইন ছিল। শ্রমিকেরা কাজ করার সময় লোহার পাইপ ওই বিদ্যুতের লাইনে জড়িয়ে বিদ্যুতায়িত হন এবং তিনজন দগ্ধ হয়ে মারা যান। পুলিশ তিন শ্রমিকের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। পরে লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। জনরোষ থেকে রক্ষা করতে বিআইডব্লিউটিএর দুজন কর্মীকে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়।

ঝড়ু শেখ ও সাইফুল শেখের বাবার নাম মজিবর শেখ। তাঁদের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। মনজুর বাড়ি বগুড়ার তারাকান্দিতে। পুলিশ জানিয়েছে, লাশ নেওয়ার জন্য তাঁদের স্বজনদের খবর পাঠানো হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক আরিফ হাসনাত বলেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করবেন শর্তে ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁরা কোনো নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেননি। এখন ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিআইডব্লিউটিএ শ্রমিক মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে কি না—জানতে চাইলে আরিফ হাসনাত বলেন, বিআইডব্লিউটিএ কাজে তদারকি করছিল।