পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ১৩ প্রার্থী। এর মধ্যে দুটিতে বিএনপির ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরা সক্রিয় থাকলেও আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থীদের সেই শঙ্কা নেই। এদিকে দুটি ওয়ার্ডের বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, প্রচারকাজে সরাসরি বাধা না দেওয়া হলেও তাঁদের কর্মী–সমর্থকদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে পোস্টার।

সিটি করপোরেশনের নতুন এই ওয়ার্ডগুলোতে প্রথম নির্বাচন হয়েছে গত বছরের ১ মার্চ। বছর না গড়াতেই আবার ভোটের হাওয়া লেগেছে এখানে। এলাকার মোড়, চায়ের দোকানগুলোতে চলছে নির্বাচনের আলোচনা। সড়কে–সড়কের ওপর উড়ছে দড়িতে লাগানো পোস্টার, চলছে জোর প্রচারণা। নির্বাচন সামনে রেখে এসব ওয়ার্ডের বাসিন্দারা বলছেন, কাগজে–কলমে ওয়ার্ডগুলো সিটি করপোরেশনে যুক্ত হলেও নাগরিক সুবিধা এখন পর্যন্ত পৌঁছায়নি তাঁদের কাছে। এসব সুবিধা কবে আসবে, এখন এটাই তাঁদের জিজ্ঞাসা।

বাসিন্দারা বলছেন, ওয়ার্ডগুলোর বেশির ভাগ এলাকার সড়কের অবস্থা বেহাল। জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রকট। আছে মশা আর মাদকের প্রকোপ। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও ভালো নয়। এ অবস্থায় খেলার মাঠ, পার্ক, কমিউনিটি সেন্টারের মতো নাগরিক সুবিধার কথা তাঁরা ভাবতে পারছেন না।

৩৭ নম্বর ওয়ার্ড

এই ওয়ার্ডের আওতাধীন এলাকাগুলো হচ্ছে দক্ষিণ আনন্দ নগর, মেরুল পূর্বপাড়া, ইন্দোলিয়া, দাওকান্দি, টেকপাড়া বাড্ডা, সোনাকাটরা, টেকপাড়া বাড্ডা, সেকান্দারবাগ, টেকপাড়া বাড্ডা লৌহেরটেক, মধ্যবাড্ডা, মোল্লাপাড়া, বেপারীপাড়া, পোস্ট অফিস রোড এসব। ভোটকেন্দ্র ২৩টি। মোট ভোটার ৪৯ হাজার ৬২৩ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২৪ হাজার ৯৭৯ জন। পুরুষ ভোটার ২৪ হাজার ৬৪৪ জন।
ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী তিনজন। এর মধ্যে বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী এম এ বাসার আগে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি নির্বাচন করছেন লাটিম প্রতীক নিয়ে। প্রচারকাজে বাধা না পেলেও আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে তাঁর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ‘শুধু আমার পোস্টার না। বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পোস্টারও ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া আমার দলীয় কর্মীদের ডেকে নিয়ে হুমকি দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থী।’ তাঁর মতে, এই ওয়ার্ডের মূল সমস্যা জলাবদ্ধতা। নির্বাচিত হলে উন্নত পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ ওয়ার্ডটিকে ঢেলে সাজাতে চান এই প্রার্থী। 

এদিকে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর। তাঁর প্রতীক ঠেলাগাড়ি। তিনি বলেন, মাত্র ৯ মাস আগে একবার নির্বাচন হয়েছে। স্বল্পসময়ে বেশির ভাগ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়নি। এবার নির্বাচিত হলে অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার দিকে মনোযোগ থাকবে। 

এ ছাড়া পোস্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থীর কর্মী–সমর্থকদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এই অভিযোগের প্রমাণ দিতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

এই ওয়ার্ডে ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন–সমর্থিত প্রার্থী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক। 

৩৮ নম্বর ওয়ার্ড

মোল্লাপাড়া, আদর্শনগর, উত্তর বাড্ডা পূর্বপাড়া আংশিক, উত্তর বাড্ডা ময়নারটেক, উত্তর বাড্ডা বাওয়ালী পাড়া, উত্তর বাড্ডা পূর্বপাড়া আংশিক, উত্তর বাড্ডা পূর্বপাড়া, উত্তর বাড্ডা মিছরিটোলা ও উত্তর বাড্ডা হাজীপাড়া নিয়ে গঠিত হয়েছে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড। ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র ২৩টি। মোট ভোটার ৪৯ হাজার ৮১৩ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২৫ হাজার ৪২ জন। পুরুষ ভোটার ২৪ হাজার ৭৭১ জন। 

এখানে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থী শেখ সেলিম ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর। তাঁর প্রতীক লাটিম। কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। শেখ সেলিমের ভাষ্য, ‘গতবার নির্বাচিত হওয়ার পর মাত্র তিনটা সড়কের কাজ করতে পেরেছি। জলাবদ্ধতা নিরসন, মাদক নিয়ন্ত্রণসহ বেশির ভাগ কাজই বাকি। এই কয়েক মাসে ভোটাররা আমাকে আরও ভালোভাবে চেনার সুযোগ পেয়েছেন। আশা করছি তাঁরা এবারও আমাকে নিরাশ করবেন না।’ 

এদিকে এই ওয়ার্ডে বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী জাহাঙ্গীর মোল্লার নির্বাচনী প্রতীক ঘুড়ি। তিনি অবশ্য আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থীর চেয়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আলী হোসেনকে নিয়ে বেশি চিন্তিত। আলী হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ঠেলাগাড়ি প্রতীক নিয়ে। জাহাঙ্গীর মোল্লা বলেন, ‘প্রচারকাজে এখন পর্যন্ত কোনো বাধা আসেনি। কিন্তু সুষ্ঠু ভোট হবে কি না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।’ 

এই ওয়ার্ডের অন্য প্রার্থীরা হচ্ছেন গোলাম সরওয়ার (ঝুড়ি) ও মো. সাদ্দাম হোসেন (টিফিন ক্যারিয়ার)। 

৩৯ নম্বর ওয়ার্ড

এই ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত এলাকাগুলো হচ্ছে পূর্ব ও পশ্চিম নূরেরচালা এবং পূর্ব ও পশ্চিম খিলবাড়িরটেক। মোট ভোটকেন্দ্র ১৯টি। ভোটার ৩৮ হাজার ২১৯ জন। পুরুষ ভোটার ১৯ হাজার ৫৮১ জন। নারী ভোটার ১৮ হাজার ৬৩৮ জন। প্রার্থীর সংখ্যা ৫। 

এই ওয়ার্ডেও বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ আলী খানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী মো. কামরুল। মোহাম্মদ আলী খানের প্রতীক ঘুড়ি আর কামরুলের এয়ারকন্ডিশনার। অবশ্য মোহাম্মদ আলী খান দাবি করেন, প্রতিদ্বন্দ্বী দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে তাঁর একধরনের সমঝোতা হয়েছে। এখন সমস্যা তৈরি করছেন আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থী শফিকুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থীর লোকেরা আমার পোস্টার রাখতে দিচ্ছে না। ভোটারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’ 

এদিকে এই অভিযোগ অস্বীকার করেন শফিকুল ইসলাম। নির্বাচনে তাঁর প্রতীক ঠেলাগাড়ি। তিনি বলেন, ‘এলাকায় আমার পোস্টারের চেয়ে বিএনপি প্রার্থীদের পোস্টার বেশি। তারাই বরং আমাদের কাজ করতে দিচ্ছে না।’ অবশ্য পারস্পরিক দোষারোপ করলেও ওয়ার্ডের উন্নয়নের ব্যাপারে দুই প্রার্থীই একই রকম কথা বলেন। দুজনই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানের ওপর। 

এই ওয়ার্ডের অন্য প্রার্থীরা হচ্ছেন সহিদুল ইসলাম (লাটিম) ও বজলুর রহমান মৃধা (রেডিও)।