ওয়ার্ড বেড়েছে, প্রার্থী কমেছে

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে সারা শহর। গতকাল লালবাগ এলাকায়।  ছবি: আশরাফুল আলম
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে সারা শহর। গতকাল লালবাগ এলাকায়। ছবি: আশরাফুল আলম

পাঁচ বছর আগে অনুষ্ঠিত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১৮৭ নারী প্রার্থী। এবার ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড বাড়লেও নারী প্রার্থী কমেছে। দুই সিটির ৪৩টি ওয়ার্ডে এবার লড়ছেন ১৫৯ নারী।

বর্তমান নারী কাউন্সিলর, নির্বাচনের প্রার্থী ও নারীনেত্রীরা বলছেন, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা কোনো উন্নয়নকাজে যুক্ত থাকতে পারেন না। তাঁরা মূলত সচেতনতামূলক কাজ করেন। সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মতো মর্যাদা সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা পান না। এতে নারীরা প্রার্থী হতে কম উৎসাহিত হচ্ছেন। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থীরা বলছেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে দলের একজন প্রার্থী নিশ্চিত করার চেষ্টা করায় নারী প্রার্থী কমেছে।

সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী প্রার্থী কমে যাওয়াকে অপ্রত্যাশিত বলে মনে করেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচিত হলেও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী প্রতিনিধিরা মতামত দেওয়া ও চিন্তার পর্যাপ্ত সুযোগ পান না। নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে সম্মান ও কাজের সুযোগ বাড়াতে হবে।

সিটি করপোরেশনের একটি ওয়ার্ডে একজন কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। আর তিনটি ওয়ার্ড মিলে হয় একটি সংরক্ষিত ওয়ার্ড। সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হন একজন নারী। ঢাকা উত্তর সিটিতে সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮টি এবং দক্ষিণ সিটিতে সংরক্ষিত ওয়ার্ড ২৫টি।

৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। গত ২ ডিসেম্বর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই শেষ হয়েছে। ৯ ডিসেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, উত্তরের সংরক্ষিত ওয়ার্ডগুলোতে ৭৭ জন এবং দক্ষিণে ৮২ জন নারী লড়ছেন।

সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত দুই সিটির ৩১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন ১৮৭ জন। পরে ২০১৭ সালে ঢাকার দুই সিটিতে ৬টি করে নতুন সংরক্ষিত ওয়ার্ড যুক্ত হয়। নতুন যুক্ত হওয়া ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের উপনির্বাচন গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়। উপনির্বাচনে সংরক্ষিত ওয়ার্ডগুলোতে ৬৮ জন প্রার্থী ছিলেন।

এবারের দুই সিটির বৈধ প্রার্থীর তালিকা ঘেঁটে দেখা যায়, দুই সিটির অধিকাংশ সংরক্ষিত ওয়ার্ডে দুই থেকে তিনজন প্রার্থী লড়ছেন। ৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বী মাত্র দুজন করে। আর ১৬টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তিনজন করে। 

উত্তর সিটির বর্তমান কাউন্সিলরদের ১৪ জন এবারও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২১ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবারও প্রার্থী হয়েছেন। এর বাইরে উত্তরের সংরক্ষিত ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলেয়া সারোয়ার এবার ৩১ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।

ডিএনসিসির সংরক্ষিত ১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন গুলশান থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাছিনা বারী চৌধুরী। এই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর শাহনাজ পারভীন ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থনে কাউন্সিলর হয়েছিলেন। দলের সমর্থন না পেলেও শাহনাজ পারভীন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।

২০১৫ সালের নির্বাচনে ঢাকা উত্তরে সংরক্ষিত ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হন। ২ নম্বর ওয়ার্ডে আমিনা খাতুন ও ৩ নম্বরে বেগম মেহেরুন্নেসা হক। বিএনপি এবারও এই দুই প্রার্থীকে দলীয় সমর্থন দিয়েছে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে ডিএসসিসির ৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন। এই পাঁচ নারী কাউন্সিলর এবারও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। 

আমিনা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের কাজের সীমাবদ্ধতা আছে। পুরুষ কাউন্সিলরদের মতো মর্যাদাও তাঁরা পান না। সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের কাছেও এলাকার জনগণের প্রত্যাশা থাকে। তাঁদের কাজ ও ক্ষমতা সুস্পষ্ট করা হলে আরও নারী প্রার্থী হতে উৎসাহী হবেন।

সিটি করপোরেশন (কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরদের দায়িত্ব, কার্যাবলি ও সুযোগ-সুবিধা) বিধিমালা, ২০১২-এ সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের দায়িত্ব ও কার্যাবলি সম্পর্কে উল্লেখ আছে। এতে বলা হয়েছে, নারী কাউন্সিলররা প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার, জনস্বাস্থ্য, পুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করবেন। নারী ও শিশু নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, অ্যাসিড নিক্ষেপ নিরোধে জনমত তৈরিতে কাজ করবেন।

সংরক্ষিত ওয়ার্ডের চারজন কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁরা বলেন, সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা নারী কাউন্সিলরদের কিছুই মনে করেন না। সভায় উপস্থিত থাকা ছাড়া নারী কাউন্সিলরদের কাজ নেই। নারী কাউন্সিলরদের কোনো সচিব, পিয়ন বা দারোয়ানও নেই। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য সরকার অনেক কিছু করছে ঠিকই, কিন্তু বৈষম্য দূর হয়নি।

আসন্ন দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনো নারী মেয়র প্রার্থীও নেই। কোনো দল নারীদের মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়নি, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও কেউ নির্বাচন করছেন না। অন্যদিকে ঢাকার দুই সিটির ১২৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী নারী প্রার্থীর সংখ্যা এবার কমেছে। বড় দুই দলের প্রার্থীসহ এবার সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৮ নারী। এর আগে ২০১৫ সালের নির্বাচনে দুই সিটির সাধারণ ওয়ার্ডে নারী প্রার্থী ছিলেন ২৩ জন।