ঘুষের টাকা ফেরত দিয়ে পুলিশের এসআই ক্লোজড

গাঁজা সেবনের অভিযোগে দুই প্রবাসীকে আটক করেছিলেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মিন্টু দাস। এরপর তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে পরিবারের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালত দুই প্রবাসীকেই সাত দিন করে কারাদণ্ড দিলে ক্ষিপ্ত হয় তাঁদের পরিবার। ওই এসআইকে অবরুদ্ধ করে ঘুষের টাকা ফেরত চান। বাধ্য হয়ে ঘুষের টাকা ফেরত দিতে হয় তাঁকে।

ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পাবনার ফরিদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় প্রাঙ্গণে। পরে ঘটনা জানাজানি হলে গতকাল রাতে মিন্টু দাসকে পুলিশলাইনে ক্লোজড করা হয়।

স্থানীয় লোকজন ও ফরিদপুর থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার বিকেলে উপজেলার দেওভোগ বিলের মাঠে বসে কিছু ব্যক্তি গাঁজা সেবন করছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফরিদপুর থানার এসআই মিন্টু দাস সেখানে অভিযান চালান। এ সময় গাঁজা সেবনকারীদের কয়েকজন পালিয়ে গেলেও উপজেলার পারফরিদপুর গ্রামের বাসিন্দা ও সৌদি আরবপ্রবাসী মুন্নাফ হোসেন (২৮) ও একই গ্রামের মালয়েশিয়াপ্রবাসী রাসেল হোসেনকে (৩০) আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। ভ্রাম্যমাণ আদালতে শাস্তি দেওয়ার জন্য বিষয়টি ইউএনও কার্যালয়ে জানানো হয়। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় ইউএনও আহম্মদ আলী জানান, গতকাল সকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন। এর মধ্যে খবর পেয়ে দুই প্রবাসীর স্বজনেরা থানায় এসে তাঁদের ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য তদবির করতে শুরু করেন। দুজনকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য ২০ হাজার টাকা ঘুষও দেন। কিন্তু গতকাল দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালত দুজনকেই ৭ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে দুই প্রবাসীর স্বজনেরা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালত দণ্ড দেওয়ার পরপরই দণ্ডপ্রাপ্তদের স্বজনেরা ইউএনও কার্যালয় এলাকাতেই এসআই মিন্টুকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। তাঁরা ঘুষের টাকা ফেরত চেয়ে নানা ধরনের স্লোগান দেন। দীর্ঘক্ষণ এ অবস্থা চলার পর এসআই মিন্টু টাকা ফেরত দিলে বিক্ষোভকারীরা চলে যান। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ফরিদপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম বলেন, ‘হট্টগোল শুনে আমরা কয়েকজন কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে দেখি, ইউএনও কার্যালয়ের একটি কক্ষে এসআই মিন্টু দাসকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। পরে অবরুদ্ধকারীরা টাকা ফেরত পেয়েছেন বলে জানান। একপর্যায়ে তাঁরা এসআই মিন্টুকে ছেড়ে দিয়ে চলে যান।’

দণ্ডপ্রাপ্ত রাসেলের মা সুজাতা হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে পাঁচ দিন আগে বিদেশ থেকে এসেছে। টাকার জন্য পুলিশ আমার ছেলেকে ধরেছিল। ছেলেকে ছাড়ানোর কথা বলে এসআই মিন্টুকে টাকা দিয়েছিলাম। পরে ওই টাকা ফেরত দিয়েছেন।’

তবে ঘুষ নেওয়া বা ফেরত দেওয়ার বিষয় অস্বীকার করেছেন এসআই মিন্টু দাস। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, তিনি আসামি ধরে থানায় এনেছিলেন। বাকি লেনদেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবুল কাশেম আজাদ করেছেন। তিনি শুধু ওসির নির্দেশ পালন করে আসামিদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করেছেন। তিনি মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করেন বলে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ওসি এস এম আবুল কাশেম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘুষ লেনদেনের কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। অভিযুক্তদের পরিবারের কারও সঙ্গে আমার কথাও হয়নি। আটক ব্যক্তিদের সাজা দেওয়ার কারণে একটা হট্টগোল হয়েছিল। অতিরিক্ত পুলিশ পাঠিয়ে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।’

ইউএনও আহাম্মদ আলী বলেন, ‘দুই মাদকসেবী দোষ স্বীকার করায় ৭ দিন করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে কার্যালয়ের নিচে বেশ হট্টগোল দেখেছি। এরপর অন্য কাজে কার্যালয় ছেড়ে বের হয়ে যাই। পরে কী হয়েছে জানা নেই।’

এ বিষয়ে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমরা এখনো পরিষ্কার না। তবে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এসআই মিন্টু দাসকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সহকারী পুলিশ সুপারকে (ফরিদপুর সার্কেল) বিষয়টি তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’