নামের মিলে নিরাপরাধকে ধরে নিল পুলিশ

নামের মিলের কারণে প্রকৃত আসামির বদলে পুলিশ মিজানুর রহমান ওরফে তোতলা মিজানকে গ্রেপ্তার করে। ছবি: সংগৃহীত
নামের মিলের কারণে প্রকৃত আসামির বদলে পুলিশ মিজানুর রহমান ওরফে তোতলা মিজানকে গ্রেপ্তার করে। ছবি: সংগৃহীত

দুজনের একই নাম, মিজানুর রহমান। তাঁদের একজন এলাকায় ‘পাগলা মিজান’ নামে পরিচিত। অপরজন তাঁর এলাকায় পরিচিত ‘তোতলা মিজান’ নামে। তাঁদের বাবার নামেও কিছুটা মিল আছে। একজনের বাবার নাম নূরুল ইসলাম। তিনি মুক্তিযোদ্ধা। অপরজনের বাবার নাম নূরুল হক হাওলাদার। দুজন যশোর সদর উপজেলার বাসিন্দা। তাঁদের গ্রামের নামও একই, সুজলপুর। তবে পাড়া ভিন্ন।

মিজানুর রহমান ওরফে পাগলা মিজানের বাড়ি উপজেলার সুজলপুর গ্রামের হঠাপাড়ায় আর মিজানুর রহমান ওরফে তোতলা মিজানের বাড়ি একই গ্রামের সরদারপাড়ায়। পাগলা মিজান কোতোয়ালি থানার বিস্ফোরণ মামলার আসামি। তোতলা মিজানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ আসামি পাগলা মিজানের পরিবর্তে নির্দোষ তোতলা মিজানকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। গতকালই তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় পুলিশ আজ বুধবার সকালে আদালতে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকৃত আসামি মিজানুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান পলাতক। গ্রেপ্তার করা মিজানুর রহমান ওরফে তোতলা মিজান ‘নির্দোষ’।

মামলা সূত্র জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি সুজলপুর জামতলা এলাকায় পাগলা মিজানসহ ১০ থেকে ১২ জন নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে লেখা কিছু পোস্টার টানাতে যান। এ সময় সুজলপুর গ্রামের আবদুস সালাম ওরফে মিঠু তাঁদের পোস্টার লাগাতে নিষেধ করেন। এতে তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে সালামকে লক্ষ্য করে কয়েকটি বোমা নিক্ষেপ করেন। এ ঘটনায় সালাম বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা দুজনের বিরুদ্ধে যশোর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করেন কোতোয়ালি থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) সোলায়মান আক্কাস। সর্বশেষ মামলাটি তদন্ত করে আটজনের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন কোতোয়ালি থানার এসআই হায়াৎ মাহমুদ খান। মামলার পর থেকে পাগলা মিজান পলাতক।

মিজানুর রহমান ওরফে পাগলা মিজানের মা ফকরুন্নেছা বলেন, ‘মিজান গাঁজা খেত। তিন-চার বছর ধরে সে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঢাকায় থাকে। আমাদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। আমাদের কোনো খোঁজখবরও সে রাখে না।’

কোতোয়ালি থানার এএসআই আল মিরাজ খান গতকাল মিজানুর রহমান ওরফে তোতলা মিজানকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেন। তাঁর মেজ ভাই আবদুর রহিম বলেন, মিজান পেশায় পাইপমিস্ত্রি। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। গত সোমবার মিজান প্রথমবারের মতো সন্তানের বাবা হন। ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁরা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে চাইলেও পুলিশ তাঁদের কথা শোনেনি বলে তাঁর অভিযোগ।

কোতোয়ালি থানার এএসআই আল মিরাজ খান বলেন, ‘দুজনের নামের মিল থাকায় ভুল করে এক মিজানের পরিবর্তে আরেক মিজানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার আসামি মিজানুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান। তিনি মাদক ব্যবসায়ী। তিনি পলাতক। মিজানুর রহমান ওরফে তোতলা মিজান নির্দোষ। তাঁকে ভুল করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমি অনুতপ্ত।’

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে সেটি খতিয়ে দেখা হয়। এরপর আজই মিজানুর রহমান মামলার প্রকৃত আসামি নন—এই মর্মে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়। আদালত তাঁকে মুক্তি দিয়েছেন। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাঁকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আনা হবে। সেখানে পুলিশের ভুলের বিষয়টি তাঁকে জানানো হবে। এ ছাড়া ভুলের ব্যাপারে এএসআই আল মিরাজ খানকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।’