আতিকুলের প্রতিক্রিয়া লজ্জাজনক, বললেন ফখরুল

সেমিনারে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঢাকা, ২২ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো
সেমিনারে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঢাকা, ২২ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো

নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় ঢাকা উত্তরের বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের ওপর হামলার ঘটনাকে ‘নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ’ বলে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। এ প্রতিক্রিয়াকে লজ্জাজনক উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আতিকুল ইসলামের মেয়র হওয়ার যোগ্যতা থাকতে পারে না।

রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আজ বুধবার ‘প্রশ্নবিদ্ধ ইভিএমের কারিগরি অপব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাচনী ফলাফল কারচুপির সম্ভাব্য সুযোগ’ শীর্ষক এক সেমিনারে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের (অ্যাব) উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গতকাল আমাদের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে সরকারি দলের একজন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রকাশ্যে আক্রমণ করলেন। দুঃখজনকভাবে শুধু না, দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জাজনকভাবে ওই দলের (আওয়ামী লীগ) মেয়র প্রার্থী বললেন, এটা তাদের দলের নিজস্ব সমস্যা। এ রকম একজন ব্যক্তি, যিনি এই কথা বলতে পারেন, তাহলে তো তাঁর মেয়র হওয়ার কোনো যোগ্যতাই থাকতে পারে না।’

বিএনপি শুরু থেকে ইভিএম ব্যবহারে আপত্তি জানিয়ে আসছে জানিয়ে দলটির মহাসচিব বলেন, এ দেশের জনগণ এ মেশিনের সঙ্গে পরিচিত নয় এবং মেশিন ব্যবহৃত হয় মানুষের দ্বারা। মেশিনের পেছনের কারা থাকবে, সেটি অনেক জরুরি। এ মেশিনের পেছনে এ কমিশন ও সরকার রয়েছে, তাদের ওপর মানুষের কোনো আস্থা নেই। তিনি আরও বলেন, ‘এ নির্বাচন কমিশন যোগ্য নয়, অদক্ষ এবং বর্তমান অনির্বাচিত সরকারের আজ্ঞাবহ। তারা ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। ৩০ তারিখের ভোট আগের রাতে করে ফেলেছে। এই কমিশনকে বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে। আরেকটি ১ ফেব্রুয়ারি আসছে, ঢাকার নগরবাসীর ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে। আমরা তীব্রভাবে আপত্তি জানিয়েছি। এখনো বলছি, এই ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখুন এবং প্রয়োজনে ভোট পিছিয়ে দিয়ে ব্যালটে ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।’

বাংলাদেশ বড় রকমের সংকটে পড়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা কেবল রাজনৈতিক সংকট নয়। এটা অর্থনৈতিক, সামাজিক সংকট। এই সংকট বাংলাদেশকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে, এটা সবার চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব শ্রেণি–পেশার মানুষ এই সংকট সমাধানে এগিয়ে না এলে দেশ অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে জানান। তিনি আরও বলেন, ইভিএম একটি মাত্র ঘটনা। এ রকম হাজারো ইভিএম দিয়ে অর্থনীতি, সমাজকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। রাষ্ট্রকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করা হচ্ছে। ব্যাংকগুলো নেই। ব্যাংক পরিচালনার জন্য সরকারকে বাজেট থেকে টাকা দিতে হয়। ব্যাংক থেকে টাকা লুট হয়। শেয়ারমার্কেট মুখ থুবড়ে পড়ে গেছে। গার্মেন্টস সেক্টর নিচের দিকে যাচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিবের অভিযোগ, দেশের বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় আটক। জামিনের যোগ্য হলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য তাঁকে তা দেওয়া হচ্ছে না।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সাল আলীমের নেতৃত্বে একটি দল। সেখানে ইভিএমে ভোট কারচুপির নানা দিক উপস্থাপন করা হয়।

অ্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রিয়াজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সেলিম ভূঁইয়া প্রমুখ। সেমিনারে যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার কূটনীতিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।