ঢাকা শহরকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন ঘোষণা করা উচিত: হাইকোর্ট

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দূষণ পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকা শহরকে আইন অনুসারে ‘প্রতিবেশ সংকটাপন্ন’ ঘোষণা করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। বুড়িগঙ্গা নদীর পানিদূষণ রোধে আদালতের এর আগের রায়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতিবিষয়ক শুনানিতে আজ বুধবার বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই মন্তব্য করেন।

শুনানি কালে আদালত বলেন, পত্রপত্রিকায় দেখলাম ঢাকা পৃথিবীর দূষণতম শহরে স্ট্যান্ড (অবস্থান) করে বসে আছে। যেহেতু দূষণতম, তাই ঢাকা শহরকে এখন আইন অনুযায়ী ‘প্রতিবেশ সংকটাপন্ন’ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা উচিত। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

আদালতে আবেদনকারী মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী আমাতুল করীম ও ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী উম্মে সালমা। চারটি শিল্পকারখানার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ বি এম সিদ্দিকুর রহমান খান।

পরে মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে বিশ্বের এক নম্বর দূষিত শহর হিসেবে ঢাকার নাম এসেছে। আদালত বলেছেন, এ অবস্থা উত্তরণে পরিবেশ আইনে ‘ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া’ ঘোষণা করার বিধান আছে। যেহেতু ঢাকা সবচেয়ে দূষিত শহর, তাই ঢাকা শহরকে ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া ঘোষণা করা উচিত।’

গত ৮ ডিসেম্বর হাইকোর্ট হাইকোর্ট পরিবেশগত ছাড়পত্র ও ইপিটি ছাড়া বুড়িগঙ্গা তীরে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানের তথ্যাদিসহ নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে যেসব সুয়ারেজ লাইন দিয়ে বুড়িগঙ্গায় বর্জ্য পড়ছে, সেগুলো ছয় মাসের মধ্যে বন্ধে ওয়াসার যে অঙ্গীকার, তা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে হলফনামা আকারে আদালতে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়।

ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকায় নদীর তীরবর্তী পরিবেশগত ছাড়পত্রবিহীন ২৩১টি শিল্পকারখানা ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে জানিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর আদালতে প্রতিবেদন দেয়। শুনানি নিয়ে ২০ জানুয়ারি হাইকোর্ট বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকায় নদীর তীরে থাকা পরিবেশগত ছাড়পত্রবিহীন ২৩১টি শিল্পকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অবিলম্বে বন্ধ করতে নির্দেশ দেন।

নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন ওপর আজ শুনানি হয় বলে জানান আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বুড়িগঙ্গায় সুয়ারেজ সংযোগ না থাকা বিষয়ে দৃশ্যত অসত্য তথ্যের বিষয়ে গত বছরের ১৭ নভেম্বর হাইকোর্ট ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) কারণ দর্শাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে হলফনামা আকারে দেওয়া ওই প্রতিবেদন উপস্থাপন না করার আরজি জানান। এখন পর্যন্ত ওই কারণ দর্শানোর জবাব না দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারির আরজি জানানো হয়। আদালত আগামীকাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিন রেখেছেন।

বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে এইচআরপিবির পক্ষে ২০১০ সালে একটি রিট করা হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের ১ জুন তিন দফা নির্দেশনাসহ রায় দেওয়া হয়। এর মধ্যে বুড়িগঙ্গায় বর্জ্য ফেলা বন্ধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে এবং বুড়িগঙ্গা নদীতে সংযুক্ত সব পয়ঃপ্রণালির লাইন (সুয়ারেজ) ও শিল্পকারখানার বর্জ্য নিঃসরণের লাইন ছয় মাসের মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশনা রয়েছে। তবে ওই নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত বছরের ৩০ এপ্রিল সম্পূরক আবেদন করে এইচআরপিবি।