অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা ইঙ্গিত দেবে রোহিঙ্গা গণহত্যাকে আইসিজে কীভাবে বিবেচনা করছেন

মিয়ানমারের মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়েরের সাবেক সহকারী জন প্যাকার। ঢাকা, ২২ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো
মিয়ানমারের মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়েরের সাবেক সহকারী জন প্যাকার। ঢাকা, ২২ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো

মিয়ানমারের মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়েরের সাবেক সহকারী জন প্যাকার বলেছেন, রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ থেকে গাম্বিয়ার করা মামলার বিষয়ে আদালতের মনোভাব বোঝা যাবে। আর ওই মামলাকে কিছুটা হলেও রোহিঙ্গা নৃশংসতার ন্যায়বিচারের উৎস হিসেবে বিবেচনা করা যাবে। কারণ, কয়েক দশক ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর যে নৃশংসতা চালানো হয়েছে, তার ন্যায়বিচার থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় জন প্যাকার এ মন্তব্য করেন। কানাডার ইউনিভার্সিটি অব অটোয়ার হিউম্যান রাইটস রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন সেন্টারের (এইচআরআরইসি) পরিচালক জন প্যাকার দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ সফরে আছেন। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে কাল বৃহস্পতিবার তাঁর কক্সবাজার যাওয়ার কথা রয়েছে।

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার অভিযোগে গত বছরের নভেম্বরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা করেছিল গাম্বিয়া। রোহিঙ্গাদের গণহত্যাসহ সব ধরনের নৃশংসতা থেকে সুরক্ষা দিতে গাম্বিয়া আইসিজের কাছে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে। গত ডিসেম্বরে এ নিয়ে গাম্বিয়া ও মিয়ানমারের বক্তব্য ও পাল্টা বক্তব্যের পর আগামীকাল আইসিজের অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার বিষয়ে নির্দেশ দেওয়ার কথা রয়েছে।

আইসিজের অন্তর্বর্তী আদেশ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে জন প্যাকার বলেন, ‘রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলাটি নিয়ে জাতিসংঘের আদালতের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন, সেটা অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার আদেশ থেকে বোঝা যাবে। যদি আদালত জোরালো পদক্ষেপের নেন, তাহলে বুঝতে হবে আদালত রাখাইনে গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হওয়ার বিষয়টিকে আমলে নিয়েছেন। যদি আইসিজে অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপের বিষয়ে দুর্বল নির্দেশনা দেন কিংবা কোনো পদক্ষেপ না নেন, তাহলে ধরে নিতে হবে আদালত আপাতদৃষ্টিতে মামলাটিকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না কিংবা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে আদালত দ্বিধাবিভক্ত।’

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সাবেক ওই বিশেষজ্ঞের মতে, আদালতের সিদ্ধান্তটি ভোটাভুটিতে হয়েছে, নাকি সর্বসম্মতভাবে হয়েছে, সেটাও দেখার আছে। সিদ্ধান্তটা কীভাবে হয়েছে, তা থেকে আদালতের ভেতরকার ছবিটা কেমন, সেটা বোঝা যাবে।

আদালতের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে অনেক দেশের অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত করে জন প্যাকার বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যার সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলেও অনেক দূরের ছোট দেশ হয়েও গাম্বিয়া জোরালো ভূমিকা নিয়েছে। অথচ মিয়ানমারের সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত অনেক দেশই এ ধরনের ভূমিকা নিতে অস্বীকার করেছে। আদালতের সিদ্ধান্ত কঠোর হলে আরও অনেক দেশ মিয়ানমারের বিপক্ষে আসবে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, আদালতের সিদ্ধান্ত কঠোর না হলে অনেক দেশ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত থাকবে। সেটা মোটেই ভালো হবে না। কারণ, গাম্বিয়া একটি ছোট ও দুর্বল দেশ। দেশটির ক্ষমতাও সীমিত, যেমন ক্ষয়ক্ষতির জন্য গাম্বিয়া ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারে না। এ পরিস্থিতিতে অনেক দেশের এই মামলার প্রক্রিয়ায় এগিয়ে এসে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা দরকার।

জন প্যাকার বলেন, ‘এ মামলা আরও একটি প্রেক্ষাপটে তাৎপর্যপূর্ণ যে এই প্রথমবারের মতো এমন একটি দেশ মামলা দায়ের করেছে, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কাজেই মামলা কোন পথে যাবে, এ নিয়ে আদালতকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে আদালতের সিদ্ধান্ত গাম্বিয়ার মামলার পক্ষে যাবে বলেই আমি বিশ্বাস করি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, এমন দেশ মামলা করতে পারবে না—এটি কিন্তু জাতিসংঘের গণহত্যার সনদে স্পষ্ট করা হয়নি।’