সুদীপ্তকে বাসা থেকে ডেকে এনেছিলেন মুরাদ

সুদীপ্ত বিশ্বাস। ফাইল ছবি
সুদীপ্ত বিশ্বাস। ফাইল ছবি

চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাসকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এক আসামি। যুবলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত তাঁর নাম মো. মুরাদ। আদালত সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুমের নির্দেশে নগরের নালাপাড়ায় যান তারা। বাসা থেকে সুদীপ্তকে তিনিই ডেকে বের করেন। আর পিটিয়ে খুনের ঘটনা ভিডিও করে খুনে অংশ নেওয়া কয়েকজন।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেহ মোহাম্মদ নোমানের আদালতে জবানবন্দি দেন মুরাদ। এর আগে মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) দুই দিনের রিমান্ড শেষে তাঁকে আদালতে হাজির করে। গত রোববার নগরের ওয়াসা মোড়ের সামনে থেকে মুরাদকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

নগর ছাত্রলীগের সহসম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আর দিদারুল আলম মাসুম চট্টগ্রামের লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

গত বছরের ১২ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম সারোয়ার জাহানের আদালতে জবানবন্দি দেন আসামি মিজানুর রহমান। তিনি ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত। তাঁর জবানবন্দিতে প্রথমবারের মতো নির্দেশদাতা হিসেবে দিদারুল আলমের নাম আসে। এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া আসামি এই খুনের নির্দেশদাতা হিসেবে লালখান বাজার এলাকার এক বড়ভাই জড়িত বলে আসছেন। সুদীপ্ত খুনের মামলায় বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন দিদারুল। যদিও শুরু থেকে তিনি দাবি করে আসছেন, রাজনৈতিক কারণে তাঁকে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, আজ জবানবন্দিতে আসামি মুরাদ বলেন, সুদীপ্তকে খুনের আগের দিন আসামি মুক্তার হোসেন তাকে মাসুম ভাইয়ের নির্দেশে নগরের নালাপাড়ায় জরুরি কাজ আছে থাকতে বলেন। বড়ভাইয়ের নির্দেশে ঘটনার দিন সকালে অন্যদের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে করে তারা নালাপাড়ায় যান। সুদীপ্তকে বাসা থেকে ডেকে বের করেন মুরাদ। পরে অন্যরা তাকে পেটাতে থাকেন। গুলি ছুড়ে আতঙ্ক ছড়ান জাহিদ। আর পেটানোর দৃশ্য ভিডিও করা হয়। ঘটনার পর তারা ফাঁকা গুলি ছুড়ে চলে যান।

মামলাটির তদারককারী পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মঈন উদ্দিন রাতে প্রথম আলোকে বলেন, আসামি মুরাদ জবানবন্দিতে কার নির্দেশে নালাপাড়া গিয়েছিলেন। সুদীপ্তকে বাসা থেকে ডেকে বের করার কথাসহ পুরো ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, মুরাদের জবানবন্দিতে পাওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। জড়িত পলাতক বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর ভোরে চট্টগ্রাম নগরের সদরঘাট থানাধীন নালাপাড়ার বাসায় হানা দিয়ে সুদীপ্তকে ঘুম থেকে তুলে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে আসে সন্ত্রাসীরা। এরপর তাঁকে কয়েকজন সন্ত্রাসী বেদম পেটায়। মেডিকেলে নেওয়া হলে সুদীপ্তকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর বাবা মেঘনাথ বিশ্বাস বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় সাত-আটজনকে আসামি করে মামলা করেন। পরে আদালতের নির্দেশে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআই-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়। সুদীপ্ত খুনের ঘটনায় ১৫-১৬ জনের নাম এসেছে। চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করেছিলেন সুদীপ্ত। এ ঘটনার জেরে তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

গ্রেপ্তার একাধিক আসামি আদালতে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন ঘটনার দিন পরিকল্পনামতো নগরের লালখান বাজার থেকে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে করে নালাপাড়ায় সুদীপ্তের বাসার সামনে যান প্রায় ১৫ থেকে ১৬ জন। তাঁদের হাতে অস্ত্র, লোহার রড ও পাইপ ছিল। আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য ফাঁকা গুলিও ছোড়া হয়। এদিকে ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার মধে৵ সাতটি অটোরিকশা ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। আসামি মুরাদসহ চার আসামি এই মামলায় জবানবন্দি দেন।