স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাবেক এপিএসকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ

আরিফুর রহমান
আরিফুর রহমান

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জাহিদ মালেকের সদ্য সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আরিফুর রহমান সেখকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন সংস্থাটির উপপরিচালক সামছুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল।

আরিফুর রহমানকে তলব করে দুদকের দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, তাঁর বিরুদ্ধে বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে অর্থ লোপাট এবং বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়াসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে। ওই বিষয়ে বক্তব্য দিতে তাঁকে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়।


স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এপিএস আরিফুর রহমান সেখকে ১৪ জানুয়ারি তলব করে চিঠি দেওয়ার পরদিনই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ১৫ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের প্রশাসন-১ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব শাহাদত হোসেন কবির স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এই অব্যাহতি দেওয়া হয়।

বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তা আরিফ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিবের দায়িত্ব গ্রহণের আগে মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী প্রধানের (স্বাস্থ্য-৭) দায়িত্বে ছিলেন। গত বছরের ২২ জানুয়ারির এক বদলি আদেশে তিনি নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিবের দায়িত্ব পান।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাটের একটি অভিযোগ দুদকে অনুসন্ধান শুরু হয় গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে। উপপরিচালক মো. আলী আকবরকে অভিযোগটি অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। অনুসন্ধানে নেমেই তিনি অধিদপ্তরের পরিচালকসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এর কিছুদিন পর অভিযোগটি অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের কাজে নিয়োজিত একটি দলকে। উপপরিচালক সামছুল আলমের নেতৃত্বাধীন ওই দল অনুসন্ধানে মাঠে নেমে এবার তলব করল মন্ত্রীর এপিএসকে।

দুদকের হাতে থাকা অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বৈদেশিক প্রশিক্ষণের জন্য ১৯টি বিষয়ের আওতায় ৩১ প্যাকেজে ৪২৬ জনের নামে সরকারি আদেশ (জিও) জারি করা হয়। প্রশিক্ষণার্থীদের সম্মানী ভাতা বাবদ ৪ কোটি ৯৭ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৫ টাকা, বিমান ভাড়া ২ কোটি ২৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। এর বাইরে প্রশিক্ষণ, প্রাতিষ্ঠানিক ও কর্মসূচি উন্নয়ন ব্যয় হিসেবে ১৪ কোটি ৩৭ লাখ ১১ হাজার ৪৭২ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সব মিলে বিদেশে প্রশিক্ষণ বাবদ ২১ কোটি ৭২ লাখ উনত্রিশ হাজার ১৪৭ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। এতে দেখা যায়, প্রশিক্ষণের জন্য জনপ্রতি ৪ হাজার ডলার অথবা ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। পৃথক দেশের প্রতিষ্ঠান হলেও সবগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয় একই ধরা হয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রত্যেকটি দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপক ও কর্মচারীসহ সব প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য সমপরিমাণ কর্মসূচি উন্নয়ন ব্যয় জনপ্রতি ৪ হাজার ডলার ধরা হয়েছে, যা বাস্তব সম্মত নয়। অথচ আগের বছরগুলোতে একই কর্মসূচিতে গড়ে জনপ্রতি দেড় থেকে দুই হাজার ডলার ব্যয় হতো। প্রশিক্ষণের নামে জনপ্রতি গড়ে ২ হাজার ডলার অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আত্মসাৎ করেন।

অভিযোগে বলা হয়, প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই মানসম্মত নয়। ওই সব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার না করে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছে। এসব অ্যাকাউন্ট থেকে অতিরিক্ত পাঠানো টাকা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে ফেরত আনা হয়েছে।

এই অভিযোগের বাইরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে দুদকে। সবগুলো অভিযোগের বিষয়ে আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে দুদক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

গত ১৪ জানুয়ারি আরিফুর রহমানকে তলব করে চিঠি দেন দুদকের উপপরিচালক মো. সামছুল আলম। ওই চিঠিতে তাঁকে ২০ জানুয়ারি দুদকে হাজির হতে বলা হয়। দুদক সূত্র জানিয়েছে, চিঠি পেয়ে আরিফুর রহমান সেখ দুদকে সময়ের আবেদন করেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে ২৩ জানুয়ারি দুদকে হাজির হতে নতুন করে সময় দেওয়া হয়।