৬৪ জেলায় ৪৯ হাজার নদী দখলদার, সংসদে প্রতিমন্ত্রী

জাতীয় সংসদ ভবন। ফাইল ছবি
জাতীয় সংসদ ভবন। ফাইল ছবি

দেশের ৬৪ জেলায় ৪৯ হাজার ১৬২ জন অবৈধ নদ–নদী দখলদার চিহ্নিত করা হয়েছে। ৬৪ জেলার মধ্যে কুমিল্লা জেলায় নদী দখলদারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই জেলায় নদী দখলদারের সংখ্যা ৫ হাজার ৯০৬।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সরকারি দলের সাংসদ এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী নদ–নদী দখলদারদের তথ্য উপস্থাপন করেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের সব জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে নদ–নদীর অবৈধ দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রস্তুতকৃত তালিকা জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ওয়েবসাইটে এবং সংশ্লিষ্ট জেলা তথ্য বাতায়নে আপলোড করে সর্বসাধারণরে জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এতে সারা দেশে ৪৯ হাজার ১৬২ জন অবৈধ দখলদারের বিবরণ লিপিবদ্ধ আছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, নদ–নদীর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার কার্যক্রম চলমান প্রক্রিয়া। ইতিমধ্যে সব জেলা প্রশাসককে প্রস্তুতকৃত তালিকা অনুসারে ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে সারা দেশে নদ–নদীতে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার জন্য অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর থেকে বিশেষ উচ্ছেদ অভিযানে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর সময়ে মোট ১ হাজার ২৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে এবং ২১ দশমিক ৫ একর তীরভূমি উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দখলদারের সংখ্যা বিবেচনায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা চট্টগ্রাম জেলায় নদী দখলদার ৪ হাজার ৭০৪ জন। দখলদারে তৃতীয় অবস্থানে থাকা নোয়াখালীতে রয়েছে ৪ হাজার ৪৯৯ জন। এ ছাড়া দখলদারের সংখ্যা বিবেচনায় শীর্ষ দশে আছে কুষ্টিয়া (৩১৩৪ জন), বরিশাল (২২৭২ জন), ময়মনসিংহ (২১৬০ জন), ফরিদপুর (১৮৪৩ জন), বরগুনা (১৫৫৪ জন), নাটোর (১৫৪১ জন), গোপালগঞ্জ (১৩৯৯ জন) জেলা। আর সবচেয়ে কম নদী দখলদার লালমনিরহাট জেলায়, ১৩ জন।

তামাকে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মৃত্যু
সংরক্ষিত আসনের শামসুন নাহারের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, তামাক ব্যবহারজনিত রোগ ও মৃত্যু বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। টোব্যাকো এটলাস ২০১৮ অনুযায়ী তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। ‘দ্য ইকোনমিক কস্ট অব টোব্যাকো ইউজারস ইন বাংলাদেশ: আ হেলথ কস্ট অ্যাপ্রোচ’ শিরোনামে ২০১৮ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, বর্তমানে দেশে ১৫ লাখের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষ তামাক সেবনের কারণে এবং ৬১ হাজারের বেশি শিশু পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাবে প্রাণঘাতী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। তামাকজনিত রোগব্যাধি ও অকালমৃত্যর কারণে দেশে প্রতিবছর ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি ব্যয় হয়ে থাকে।

বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, উচ্চপর্যায়ের তদন্ত গঠন করে সারা দেশে হাসপাতালগুলোয় যন্ত্রপাতি ও ওষুধ ক্রয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে এবং তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মনিটরিং সেল সব হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ও ওষুধ ক্রয়–সংক্রান্ত কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং করছে। এর ফলে বর্তমানে অনিয়ম ও দুর্নীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।

সরকারি দলের সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ২০১৯ সালে মিটফোর্ডসহ সারা দেশে নকল–ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রির দায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ২ হাজার ১৪৫টি মামলা দায়ের করে ১২ কোটি ৪১ লাখ ৬ হাজার ৪৮৪ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। ৩৯ জন আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, ৪৪টি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হয়েছে। আনুমানিক ৩১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা মূল্যের নকল–ভেজাল ওষুধ জব্ধ ও ধ্বংস করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জিএমপি (গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস) গাইডলাইন অনুসরণ না করায় ৪১টি ওষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ওষুধ উৎপাদন লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে।

সরকারি দলের মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় তদারকি বাড়াতে স্বাধীন স্বাস্থ্য কমিশন গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

সংরক্ষিত আসনের গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকারের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক, চেম্বারে চিকিৎসকদের রোগী দেখা বাবদ ফি আদায়ের বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়নের ব্যাপারে সরকারের চিন্তাভাবনা রয়েছে। যোগ্যতা ও পদমর্যাদা অনুযায়ী জেনারেল প্র্যাকটিশনার থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক লেভেল পর্যন্ত সর্ব মহলে গ্রহণযোগ্য রোগী দেখার ভিজিটের হার নির্ধারণের পরিকল্পনা বর্তমান সরকারের রয়েছে।

শতভাগ হজযাত্রীর ইমিগ্রেশন ঢাকায় করার উদ্যোগ
সরকারি দলের সাংসদ মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ জানান, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৯ জিলহজ, আগামী ৩০ জুলাই এ বছর পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এ বছরের পবিত্র হজ পালনের জন্য সৌদি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি সই হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালে মোট ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রীর সংখ্যা নির্ধারিত হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৭ হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ২০ হাজার ব্যক্তি হজ পালনের সুযোগ পাবেন। এ বছর শতভাগ হজযাত্রীর ইমিগ্রেশন মক্কা রুটের মাধ্যমে ঢাকায় সম্পন্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।

বিএনপির জাহিদুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ জানান, ২০১৯–২০ অর্থবছরে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যেক সাংসদের নির্বাচনী এলাকার মসজিদ সংস্কার/মেরামতের জন্য ২ লাখ টাকা এবং মন্দির সংস্কার/মেরামতের জন্য ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সংরক্ষিত আসনের সাংসদদের প্রত্যেকের অনুকূলে মসজিদ মেরামতের জন্য ১ লাখ টাকা এবং মন্দিরের জন্য ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।