'তোমারঘরে পোত্তম আলোর কম্বল প্যায়া উপোকার হলো'

পঞ্চগড় সরকারি মিলানায়তন চত্বরে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে শীতার্তদের মধ্যে কম্বল ও সোয়েটার বিতরণ করা হয়। ছবি: প্রথম আলো
পঞ্চগড় সরকারি মিলানায়তন চত্বরে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে শীতার্তদের মধ্যে কম্বল ও সোয়েটার বিতরণ করা হয়। ছবি: প্রথম আলো

দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা চারদিক। এমন কনকনে শীত উপেক্ষা করে পঞ্চগড় সরকারি মিলনায়তন চত্বরে হাজির শতাধিক শীতার্ত শিশু ও নারী-পুরুষ। তাঁদের হাতে ভালোবাসার উষ্ণতা হিসেবে কম্বল ও সোয়েটার তুলে দেন প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধুরা।

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে বন্ধুসভার সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার পঞ্চগড়ে ৫০ জনকে কম্বল দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২২ জন শিশুসহ ৭০ জনের হাতে তুলে দেওয়া হয় সোয়েটার। একই দিন প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ও অমিকন গ্রুপের সহযোগিতায় গাইবান্ধায় ১০০ জনের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়।
গাইবান্ধায় কম্বল পেয়ে সাদুল্যাপুর উপজেলার পশ্চিম কেশালীডাঙ্গা গ্রামের আফরোজা বেগম বলেন, ‘এবারক্যা শীতোত এ্যাকনা কম্বলের জন্যে চেয়ারম্যানের বাড়িত ম্যালা দিন গেছিনু। তাই হামাক কম্বল দেয় নাই। তোমারঘরে পোত্তম আলোর কম্বল প্যায়া উপোকার হলো।’

সাদুল্যাপুরের কামারপাড়া প্যারীমাধব বহুমুখী ইনস্টিটিউশনের মাঠে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কম্বল বিতরণ করা হয়। সেখানে কামারপাড়া ইউনিয়নের কামারপাড়া, মধ্য হাটবামুনী, উত্তর হাটবামুনী, দক্ষিণ হাটবামুনী, পূর্ব কেশালীডাঙ্গা, পশ্চিম কেশালীডাঙ্গা, কিশামত বাগচী, নুরপুর, লক্ষ্মীপুর ও হিয়ালী গ্রামের গরিব, অসহায় ও শীতার্ত মানুষের মধ্যে এসব কম্বল দেওয়া হয়।

কম্বল পেয়ে মধ্য হাটবামুনী গ্রামের হাকিম উদ্দিন বলেন, ‘না খ্যায়্যা এ্যাকবেলা থাকান যায়। কিন্তু শীতের কষ্টে রাইতে ঘুম ধরে না। তোমারঘরে কম্বলকোনা প্যায়্যা ভালো হলো।’ উত্তর হাটবামুনী গ্রামের কাঞ্চী বালা বলেন, ‘দুকন্যা খ্যাতা (কাঁথা) দিয়া রাত কাটাই। সন্ধ্যাত থাকি আগুন জ্বলে থাকি। সোয়ামিক কোছিলাম একটা কম্বল আনার জন্যে। কিন্তু কিনি আনব্যার পায় নাই। তোমরা হামাক কম্বল দিবার আচ্চেন, আল্লায় তোমারঘরে আলোর ভালো করুক।’

এখানে কম্বল বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন প্যারীমাধব বহুমুখী ইনস্টিটিউশনের সহকারী শিক্ষক মো. তারিকুল ইসলাম, কামারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোজাহিদুল ইসলাম, সহকারী শিক্ষক সোহেল রানা, পল্লিচিকিৎসক মো. সিজু মিয়া, সমাজসেবক সাইদুল ইসলাম, মো. নুরুজ্জামান মিয়া, কাজী ইশতিয়াক, মীর বকস, সাইদুর রহমান ও ইদ্রিস আলী, কামারপাড়া ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহজাহান মিয়া ও মোত্তাল্লেব হোসেন খান প্রমুখ। বিতরণে সহযোগিতা করেন বন্ধুসভার সদস্যরা।

প্যারীমাধব বহুমুখী ইনস্টিটিউশনের সহকারী শিক্ষক মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জানি সংবাদপত্রের কাজ খবর পরিবেশন করা। কিন্তু প্রথম আলো নিজের দায়িত্বের বাইরে মানবিক কাজগুলোও করছে। শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সব পত্রিকারই এই কাজে এগিয়ে আসা উচিত।’

পঞ্চগড় সরকারি মিলনায়তন চত্বরে সকাল নয়টার দিকে হাজির হন শতাধিক শীতার্ত নারী, পুরুষ ও শিশু। সারিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে সবার হাতে কম্বল ও সোয়েটার তুলে দেন প্রথম আলো পঞ্চগড় বন্ধুসভার সদস্যরা। এর আগে বন্ধুসভার সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে শীতার্ত ও দুস্থ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে তালিকা করেন। তাঁদের হাতে একটি করে টোকেন তুলে দেওয়া হয়।
কম্বল পেয়ে পঞ্চগড় পৌরসভার রামের ডাঙ্গা এলাকার জরিনা বেগম বলেন, ‘বড় উপকার করলেন বাপু। শীতখানোত মুই খালি কাঁপেছু। কাহাও মোর খবর নেয়া। এই কম্বলডা মোর কাজত লাগিবে। তুমহার তানে দুয়া করিম বাহে।’

মসজিদপাড়া এলাকার মসলিমা বেগম বলেন, ‘যে কনকনে শীত, ঘরের ভিতরোতো রহা যায় না। হামেরা গরিব মানসি। তেমন শীতের কাপড়-চোপোড়ও কিনিবা পারি না। মোর ছুয়াডাক (মেয়েটাকে) তুমহুরা কম্বল দিছেন, তাতে ওয় খুব খুশি হইছে।’

শীতবস্ত্র বিতরণের সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চগড় বন্ধুসভার উপদেষ্টা ও সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক ফরিদুল ইসলাম, পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক আল ইমরান, পঞ্চগড় বন্ধুসভার সভাপতি রায়হান শরীফ, সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান প্রমুখ। বিতরণের সময় পঞ্চগড় সদর থানার পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত থেকে সহযোগিতা করেন।