টেকনাফে 'বন্দুকযুদ্ধে' রোহিঙ্গা নাগরিক নিহত

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কক্সবাজারের টেকনাফে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একজন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমোরার নাফ নদীর প্যারাবনে এ ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম জানা যায়নি। তাঁর আনুমানিক বয়স ২৫ বছর। তিনি উখিয়া উপজেলার থাইংখালী রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

ঘটনাস্থল থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার ইয়াবা বড়ি, ১টি ওয়ান শুটারগান ও ১টি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মো. নুরুল আমিন ও মো. শাহিনুর ইসলাম নামের দুই বিজিবি সদস্য আহত হয়েছেন।

টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গতকাল দিবাগত রাতে উপজেলার হ্নীলার ইউনিয়নের জাদিমোরা এলাকায় নাফ নদী দিয়ে একটি ইয়াবার বড় চালান বাংলাদেশে পাচার করা হবে বলে তথ্য পায় বিজিবি। এর সূত্র ধরে বিজিবির একটি বিশেষ টহলদল জাদিমোরা মসজিদের পূর্ব পাশে কেওড়াবাগানে অবস্থান নেয়। ওই এলাকা দিয়ে কয়েকজন ব্যক্তিকে বস্তা মাথায় করে হেঁটে যেতে দেখে তাঁদের চ্যালেঞ্জ করা হয়। বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে তাঁরা পালানোর চেষ্টা চালান। এ সময় ওই ইয়াবা পাচারকারীরা গুলি ছোড়েন। এতে বিজিবির দুজন সদস্য আহত হন। এ সময় আত্মরক্ষার্থে বিজিবিও পাল্টা গুলি ছোড়ে। দুই পক্ষের মধ্যে ছয়–সাত মিনিট গুলিবিনিময় হয়। একপর্যায়ে ইয়াবা পাচারকারীরা গুলি করতে করতে কেওড়াবাগানের ভেতরে কাদার মধ্য দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান। পরে ওই এলাকায় তল্লাশি করে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি জানান, তিনি রোহিঙ্গা নাগরিক ও উখিয়ার থাইংখালী রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরের বাসিন্দা। পরে তাঁকে আহত অবস্থায় টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে ভোরে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনাস্থল থেকে বস্তাভর্তি ১ লাখ ৩০ হাজার ইয়াবা বড়ি, ১টি ওয়ান শুটারগান ও ১টি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।

টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জরুরি চিকিৎসক প্রণয় রুদ্র প্রথম আলোকে বলেন, রাতে বিজিবি সদস্যরা তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। আহত বিজিবির দুই সদস্যকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

টেকনাফ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান বলেন, এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

ইয়াবা পাচারকালে প্রতিনিয়ত ‘বন্দুকযুদ্ধের’ মতো ঘটনা ঘটলেও ইয়াবা পাচার কিছুতেই থামছে না জানিয়ে কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মাদক পাচার নিয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে টেকনাফের ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণের পর ধারণা করা হয়েছিল, ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ হবে, কিন্তু তা হয়নি। ইয়াবা চোরাচালান এখনো হচ্ছে। চাহিদা বাড়ছে বলে ইয়াবার চোরাচালানও বাড়ছে। উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা এখন বেশি ধরা পড়ছে। এর মধ্যে গত ২০ মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনায় ৬১ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ নিহত হয়েছেন।