'নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের জন্য স্বীকৃতির দিন'

মোবাইল ফোনে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গাদের গণহত্যা মামলার অন্তর্বর্তী আদেশ শুনছেন রোহিঙ্গারা। গতকাল বিকেলে টেকনাফের লেদা নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে।  ছবি: গিয়াস উদ্দিন
মোবাইল ফোনে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গাদের গণহত্যা মামলার অন্তর্বর্তী আদেশ শুনছেন রোহিঙ্গারা। গতকাল বিকেলে টেকনাফের লেদা নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে। ছবি: গিয়াস উদ্দিন

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার করা মামলায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালত গতকাল বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছেন। বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ বেশির ভাগ গণমাধ্যমে খবরটি ফলাও করে প্রকাশ করেছে। প্রায় সব সংবাদেই দিনের ঘটনাটি প্রাধান্য পেয়েছে। কিছু সংবাদমাধ্যম এর সঙ্গে বিশেষজ্ঞ মন্তব্য জুড়ে দিয়েছে। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম বিশ্লেষণী প্রতিবেদনও ছেপেছে।

কাতারভিত্তিক আল–জাজিরার সংবাদের শিরোনাম ছিল ‘সু চিকে তীব্র তিরস্কার’। আইসিজের আদেশের খবরটি জানিয়ে সংবাদে যোগ করা হয় সুইজারল্যান্ডের জেনেভাভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টসের কমিশনার রিড ব্রডির মন্তব্য। তিনি বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত হওয়া, খুন ও ধর্ষণের শিকার লাখো রোহিঙ্গার জন্য আজকের দিনটি স্বীকৃতির দিন। তাদের ওপর হওয়া নিপীড়ন আজ স্বীকার করে নিয়েছেন জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত।’

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরেও দিনের ঘটনাটিই প্রাধান্য পেয়েছে। খবরে বলা হয়, জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গণহত্যা প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। দ্য হেগে অবস্থানরত বিবিসির প্রতিনিধি আনা হলিগান ওই প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছেন, গত ডিসেম্বরে আইসিজের শুনানিতে হাজির হয়ে সু চি তাঁর দেশের তরফ থেকে এই মামলার বৈধতা স্বীকার করে নিয়েছেন। কাজেই আদালতের সিদ্ধান্ত মিয়ানমারের পক্ষে উপেক্ষা করা কঠিন হবে।

যুক্তরাজ্যের আরেক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান–এর খবরে বলা হয়, আইসিজের এই সিদ্ধান্তকে রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে মনে করছেন গ্লোবাল সেন্টার ফর দ্য রেসপনসিবিলিটি টু প্রোটেক্টের নির্বাহী পরিচালক ড. সিমন অ্যাডাম। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক বেসরকারি সংগঠন গ্লোবাল সেন্টার ফর দ্য রেসপনসিবিলিটি টু প্রোটেক্ট বিশ্বজুড়ে নিপীড়ন প্রতিরোধে কাজ করে।

>

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর
আইসিজের আদেশ নিয়ে খবরের পাশাপাশি মতামত ও বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনও দিনের ঘটনাটির খবর পরিবেশন করেছে। ‘রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমারকে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ’ শিরোনামের খবরে বলা হয়, নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন গ্লোবাল জাস্টিস সেন্টারের প্রেসিডেন্ট আকিলা রাধাকৃষ্ণান মনে করেন, রোহিঙ্গাদের ওপর যা ঘটেছে, তা এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দৃঢ়ভাবে উচ্চারিত হয়েছে। খবরটি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্টসহ অন্যান্য সংবাদ সংবাদমাধ্যমও।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, কানাডাভিত্তিক রোহিঙ্গা মানবাধিকারকর্মী ইয়াসমিন উল্লাহ আইসিজের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘এমন একটা কিছুর জন্যই আমরা দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসছি। আমরা চাই, অন্য সবার মতো আমাদেরও মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।’ রয়টার্সের এই খবরটি পরিবেশন করেছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন। রয়টার্স ও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের খবর একসঙ্গে করে পরিবেশন করেছে হংকংয়ের সংবাদপত্র সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

বার্তা সংস্থা এএফপি আইসিজের সিদ্ধান্তের খবরটি প্রকাশ করেছে। এতে ওই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে গাম্বিয়ার বিচারবিষয়ক মন্ত্রী আবুবকর তামবাদুর প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কেবল আন্তর্জাতিক আইনের জন্যই নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যও, বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের জন্য আজ একটি ঐতিহাসিক দিন।’ এএফপির এই খবরটিই পরিবেশন করেছে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ অন্যান্য সংবাদমাধ্যম। এ ছাড়া আনন্দবাজার পত্রিকাও খবরটি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে।

মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার টাইমস–এর অনলাইনে আইসিজের সিদ্ধান্তের খবরটি গতকাল দীর্ঘ সময় প্রধান সংবাদ হিসেবে ছিল। এই সংবাদেই যুক্তরাজ্যের ফিন্যান্সিয়াল টাইমস–এ গতকাল প্রকাশিত মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির নিবন্ধ এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গতকালের সংবাদ সম্মেলনের খবরটিও যোগ করা হয়।