দেশে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি থাকলেও প্রস্তুত সরকার

ছবি: রয়টার্স
ছবি: রয়টার্স

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কেউ শনাক্ত হয়নি। চীন থেকে আসা জ্বরে ভোগা দুজন ব্যক্তির লালার নমুনা পরীক্ষা করে করোনাভাইরাস পায়নি রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, ঝুঁকি থাকলেও প্রস্তুত আছে সরকার।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীর আইইডিসিআর মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা এ কথা বলেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্কে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা।

আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে আইইডিসিআরের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে। তাদের নির্দেশনা মেনে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দুটি কৌশল হাতে নিয়েছে। প্রথমত, দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত করা; দ্বিতীয়ত, আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলে তাকে কড়া নজরদারিতে রাখা এবং প্রয়োজনে পৃথক করে ফেলা। কুর্মিটোলা হাসপাতালে রোগী রাখার ব্যবস্থা আছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, এ পর্যন্ত সন্দেহভাজন আটজনের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছে আইইডিসিআর। তাঁদের দুজনের লালার নমুনা পরীক্ষা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ওই দুজন সম্প্রতি চীন থেকে দেশে এসেছেন। তবে তাঁরা সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সানিয়া তহমিনা চীনের হুবেই প্রদেশের উহান অঞ্চল থেকে ছড়িয়ে পড়া নতুন এই ভাইরাস সম্পর্কে মৌলিক তথ্য উপস্থাপন করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আপাতত নতুন এই ভাইরাসের নাম দিয়েছে ‘২০১৯-এনসিওভি’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, চীন ছাড়াও থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ছয় শ মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ১৭ জন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৫ জন স্বাস্থ্যকর্মীও আছেন।

ভাইরাসটি নতুন। নতুন কোনো ভাইরাসকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘নোবেল ভাইরাস’ বলে। কোনো জীব বা প্রাণী থেকে এর উৎপত্তি। প্রাণী থেকে মানুষে এই ভাইরাস ছড়ায়। আবার মানুষ থেকে মানুষেও ছড়ায়।

>

করোনাভাইরাস: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে আইইডিসিআরের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে। তাদের নির্দেশনা মেনে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চীনা দপ্তর গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর জানতে পারে, হুবেই প্রদেশের উহান শহরে মানুষ অজ্ঞাত কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। ৭ জানুয়ারি চীনা কর্তৃপক্ষ নতুন এই ভাইরাস শনাক্ত করে।

এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে জ্বর হয়, শ্বাসকষ্ট হয়, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি থাকে। নিউমোনিয়া দেখা দেয়। কিডনির প্রদাহ হতে পারে।

গতকালের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে কমপক্ষে দুই হাত দূরে থাকতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে জানিয়েছে, গত বুধবার বিকেলে হাসপাতালের বহির্বিভাগে জ্বর নিয়ে দুই ব্যক্তি এসেছিলেন। তাঁরা চীনে ছিলেন। তাঁদের সম্পর্কে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অবহিত করেছে।