শীতেও জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগ

ভরা শীতেও সড়কের ওপরে জমে আছে পানি। এ যেন অসময়ের জলাবদ্ধতা। গতকাল দুপুরে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের সিলেট নগরের মদিনা মার্কেট এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
ভরা শীতেও সড়কের ওপরে জমে আছে পানি। এ যেন অসময়ের জলাবদ্ধতা। গতকাল দুপুরে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের সিলেট নগরের মদিনা মার্কেট এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

সিলেট নগরের মদিনা মার্কেট। ব্যস্ততম এলাকাটি সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের অংশ। এ সড়কেই রয়েছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের কার্যালয়সহ অন্য প্রতিষ্ঠান। এ রকম গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কের প্রায় তিন শ মিটার ভাঙা অংশ প্রায় ছয় মাস ধরে জলাবদ্ধ।

সড়কটি সিলেট সড়ক বিভাগের হলেও সড়ক–সংলগ্ন সিটি করপোরেশনের নর্দমার সংস্কারকাজ করায় নর্দমার পানি গড়িয়ে সড়কে এসে পড়ছে। এতে সড়কটির ভাঙা গর্তগুলোতে পানি জমে শীতের শুকনো মৌসুমেও সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। স্থানীয় লোকজন একে অসময়ের জলাবদ্ধতা বলে অভিহিত করছেন। সড়কের তিন শ মিটার অংশে পানি জমে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে। অসময়ে জলাবদ্ধতার কারণে দুই লেনের সড়কটির ভাঙা অংশ এড়িয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এতে এক লেন দিয়েই দুই ধারের যানবাহন চলাচল করায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাসহ সড়ক দিয়ে যাওয়া যাত্রীরা।

জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ধীরগতিতে কাজ করায় জনসাধারণের কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, নর্দমার সংস্কারকাজ দ্রুত শেষ করতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে বলা হবে।

সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্পে নগরের মদিনা মার্কেট থেকে পাঠানটুলা, চৌকিদিখিসহ বিভিন্ন এলাকার নর্দমার কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় কোটি টাকা। প্রায় এক বছর আগে শুরু হওয়া প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত। এ প্রকল্পেরই অংশ সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের মদিনা মার্কেটের ওই ভাঙা অংশ।

সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে রয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। রয়েছে সিলেটের বেসরকারি একটি হাসপাতাল, একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের কার্যালয়সহ আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, ব্যস্ত সড়কটিতে চলাচল করছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। সড়কের প্রায় তিন শ মিটারজুড়ে পানি জমে থাকায় যানবাহনগুলো ভাঙা ওই অংশ এড়িয়ে চলছে। এতে সিলেট থেকে সুনামগঞ্জগামী সড়কে দুই দিকের যানবাহন চলাচল করায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।

বেলা একটার দিকে শহরতলির আখালি থেকে সুবিদাবাজারের দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই দিন আগে পানি জমে থাকা ভাঙা অংশটিতে মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছিলাম। তবে কিছু দূর যাওয়ার পরই ঘটে বিপত্তি। পানি জমে থাকা গর্তে মোটরসাইকেলের চাকা আটকে যায়। জলাবদ্ধ অংশে পা ফেলতে গিয়ে ভিজে যায় প্যান্ট। জরুরি কাজ থাকায় ভেজা কাপড় নিয়েই গন্তব্যে গিয়েছি। এরপর থেকে ওই ভাঙা অংশে আর যাই না।’

সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মকসুদ আহমদ বলেন, এখন শীতের মৌসুম। বৃষ্টিও নেই। তারপরও সড়কে পানি জমে রয়েছে। ভাঙা অংশ দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে গেলে গর্তগুলোতে আটকে যায়। আবার সড়কের মধ্যে কিছু গভীর গর্ত থাকে। সেগুলোতে চাকা ফেঁসে গেলে নেমে ধাক্কা দিতে হয়। সে জন্য ওই সড়ক দিয়ে আর যান না।

 কয়েকজন পথচারী, যানবাহনের যাত্রী ও কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে দীর্ঘদিন ধরে নর্দমা সংস্কারের কাজ চলছে। ওই কাজ চলায় নর্দমার পানি সড়কে গড়িয়ে পড়ে। এতেই ভাঙা সড়কগুলোতে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অনেক সময় পানি জমে থাকা অংশে যানবাহন চলাচল করলে এ সময় সড়কের পানি পথচারীদের গায়ে ছিটে পড়ে। আবার সড়কের ভাঙা অংশ দিয়ে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ। তাই যানবাহনগুলো ভাঙা অংশ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। এতে সড়কের সংকীর্ণ জায়গা দিয়ে দুই দিকের গাড়িই চলতে শুরু করে। তখন যানজট বেঁধে যায়।

সিলেট সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের নর্দমা সংস্কারকাজ চলমান। নর্দমার পানি সড়কের ওপর গড়িয়ে পড়ে জমে থাকায় সড়কটি নষ্ট হচ্ছে। আমরা একাধিকবার বিষয়টি সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। ভাঙা সড়কটি পানি জমে থাকায় সংস্কারকাজ করা যাচ্ছে না। সড়কটি শুকনো থাকলে ভাঙা অংশটি মেরামতের কাজ করা হবে।’