অবাধে মাটি কাটায় বংশী নদী পাড়ে ভাঙন

বংশী নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি তোলার কারণে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। গত সোমবার ধামরাইয়ের কুশুরা এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
বংশী নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি তোলার কারণে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। গত সোমবার ধামরাইয়ের কুশুরা এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার ধামরাই উপজেলার কুশুরা গ্রামে বংশী নদীর পাশে চাচা আতাউর রহমানের এক টুকরো জমিতে বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করেছিলেন মিজানুর রহমান। বীজ থেকে চারা হওয়ার পর তা দ্রুত বেড়ে উঠছিল। কিন্তু খননযন্ত্র দিয়ে নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটার কারণে জমিতে ভাঙন ধরায় তাঁকে আগাম চারা তুলে ফেলতে হয়েছে।

শুধু মিজানুর রহমানই নন, মাটি কাটার কারণে বংশী নদীতীরবর্তী এলাকার অনেকের জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এরপরও নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটা থেমে নেই।

গত সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, কুশুরা ইউনিয়নের কুশুরা, পানকাত্তা, যাদবপুর ইউনিয়নের আমরাইল, বালিয়া ইউনিয়নের বালিয়া পূর্ব পাড়া, চৌহাট ইউনিয়নের চৌহাট ও ভাকুলিয়া এবং আমতা ইউনিয়নের জেঠাইলে বংশী নদীতে অন্তত ১০টি খননযন্ত্র বসিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। খনন করা মাটি পাইপের সাহায্যে এলাকার লোকজনের নিচু জমি ভরাট করার পাশাপাশি বিক্রির উদ্দেশ্যে জায়গায় জায়গায় স্তূপ করে করে রাখা হচ্ছে। মাটি কাটার ফলে নদীতীরের ফসলি জমিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা ও এলাকার লোকজন বলেন, চৌহাটে চৌহাট ও ভাকুলিয়ায় দুটি খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। এই দুটি খননযন্ত্র চালাচ্ছেন চৌহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সিকদার ও আলিম নামের এক ব্যক্তি। আমতা ইউনিয়নের জেঠাইলে আলমগীর নামে এক ব্যক্তি মাটি খনন করছেন। বালিয়া ইউনিয়নের বালিয়া পূর্ব পাড়ায় তিনটি খননযন্ত্র চলছে। এর একটি চালাচ্ছেন ধামরাই উপজেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাবেক সভাপতি আরিফুর রহমান। অন্য দুটি চালাচ্ছেন আয়নাল হক ও ইমরান নামের দুই ব্যক্তি। কুশুরা ইউনিয়নে কুশুরা বাজারের পাশে ৫০০ গজের মধ্যে দুটি খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। এর একটি চালাচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতা সুমন ও অন্যটি চালাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের নেতা হাবিবুর রহমান। পানকাত্তা এলাকায় চলছে দুটি খননযন্ত্র। এর একটি চালাচ্ছেন স্থানীয় নবযুগ কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুর ইসলাম, অন্যটি চালাচ্ছেন হাবিবুর রহমান।

যোগাযোগ করা হলে অবৈধভাবে নদী থেকে মাটি কাটার কথা স্বীকার করে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মাটি কাটার কারণে নদীতীরের আবাদি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এটা সত্য। কিন্তু বেকার থাকার চেয়ে একটা কিছু করে খাওয়া ভালো বলেই করি।’

চৌহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সিকদার বলেন, ‘আমার জন্য নয়, সংগঠনের জন্য নদী থেকে মাটি কেটে বিক্রি করি। মাটি বিক্রির টাকা দিয়ে সংগঠন চালাই।’ আরিফুর রহমান বলেন, রাস্তার কাজের জন্য নদী থেকে মাটি কাটা হয়। ব্যবসার জন্য নদী থেকে কোনো মাটি কাটা হয় না। আমিনুর ইসলামের মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি ধরেননি।

স্থানীয় কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েতুর রহমান বলেন, যাঁরা নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি খনন করছেন, তাঁদের অধিকাংশই স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সরকারি দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতা অথবা প্রভাবশালী ব্যক্তি। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ভয়ে তাঁদের কিছু বলতে সাহস পান না।

কুশুরা ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে খননযন্ত্র পুড়িয়ে অথবা ভেঙে দেওয়া হয়, কিন্তু সব সময় এর পেছনে লেগে থাকা সম্ভব নয়।

জানতে চাইলে ইউএনও সামিউল হক বলেন, খোঁজখবর নিয়ে মাটি খনন বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।