পলিথিনমুক্ত পরিবেশ চায় স্কাউটরা

গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাক স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিজ নিজ তাঁবু গোছাতে ব্যস্ত কাব স্কাউটরা। সম্প্রতি তোলা ছবি।  মাসুদ রানা
গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাক স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিজ নিজ তাঁবু গোছাতে ব্যস্ত কাব স্কাউটরা। সম্প্রতি তোলা ছবি। মাসুদ রানা

রাত প্রায় ১০টা! ক্যাম্পের অনুষ্ঠান শেষে সার বেঁধে স্কাউট দল হেঁটে চলেছে তাঁবুর দিকে। হাঁটা পথে পড়ে থাকা টিস্যু, কাগজ কুড়িয়ে তারা তা যথাস্থানে ফেলছে। এই দলের এক সদস্য পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া কবির হোসেন বলল, ‘আমাদের ক্যাম্পে কোথাও পলিথিন পড়ে নেই। যেখানে-সেখানে ময়লা আমরা ফেলি না। আমরা পরিবেশ রক্ষা করব—এটাই স্কাউটের শিক্ষা।’

গাজীপুরের মৌচাকে জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হয়ে গেল ছয় দিনব্যাপী নবম জাতীয় কাব ক্যাম্পুরি। সেখানেই গত বৃহস্পতিবার রাতে কথা হয় কবির হোসেনের সঙ্গে। কবির প্রথম আলোকে বলে, ‘পলিথিন পরিবেশের অনেক ক্ষতি করে। তাই আমাদের এর বিকল্প হিসেবে কাগজ বা অন্য কিছু ব্যবহার করতে হবে। আমি ক্যাম্পে এসেই বিষয়টা শিখেছি।’

এবারের কাব ক্যাম্পুরিতে ছিল চারটি ভিলেজ। প্রতিটি ভিলেজের ছিল সাবক্যাম্প। সব মিলিয়ে আটটি ক্যাম্পে ৮৮৮ দলের প্রায় ৬ হাজার কাব স্কাউট সদস্য অংশ নিয়েছে। ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী কাব স্কাউটরা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। এ ছাড়া প্রায় ১ হাজার শিক্ষক ও ১ হাজার ৫০০ স্বেচ্ছাসেবক এতে অংশ নিয়েছেন। কাব ক্যাম্পুরিতে অন্যতম একটি বার্তা ছিল—পলিথিনের কম ব্যবহার ও পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকা। পুরো ক্যাম্প এলাকায় কিছু দূর পরপরই ছিল ‘নো প্লাস্টিক’ লেখা সাইনবোর্ড। ক্যাম্পে আগত সব কাব ইউনিটকে পলিথিনের তৈরি ব্যাগ বা সামগ্রী সঙ্গে না আনার নির্দেশ দেওয়া ছিল। ক্যাম্পে প্রবেশের সময় পলিথিন ও প্লাস্টিক দ্রব্য নিয়ে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

ক্যাম্পুরিতে প্রত্যেক কাব স্কাউট সদস্য ১২টি কার্যক্রম বা স্বপ্নের মাধ্যমে নিজেকে উপস্থাপন করার সুযোগ পায়। তার মধ্যে একটি স্বপ্ন ছিল সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ভিলেজ (এসডিভি) পরিদর্শন। কক্সবাজার ভিলেজের সদস্যরা এসডিজির (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) ১৭টি লক্ষ্য সম্পর্কে ধারণা পায়। ৫০টি স্টল দিয়ে তৈরি এই ভিলেজে এসে কাব স্কাউটরা দেশের ঐতিহ্য, কৃষ্টি, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও পরিবেশ সম্পর্কে ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে ধারণা পায়। এই ভিলেজের ডেটল হারপিক পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের স্টলে উঁকি দিয়ে দেখা যায়, সেখানে দল বেঁধে কাব সদস্যরা একে একে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিচ্ছে। এই ভিলেজে ছিল বায়োস্কোপ, পুতুলনাচ, গান, নাচসহ নানা আয়োজন।

>

সব মিলিয়ে আটটি ক্যাম্পে ৮৮৮ দলের প্রায় ৬ হাজার কাব স্কাউট সদস্য অংশ নিয়েছে
ক্যাম্পে আগত সব কাব ইউনিটকে পলিথিনের তৈরি ব্যাগ বা সামগ্রী সঙ্গে না আনার নির্দেশ দেওয়া ছিল

গত রোববার থেকে শুরু হওয়া কাব ক্যাম্পুরির সমাপনী ছিল গতকাল শুক্রবার। শুক্রবার রাতে মহাতাবু জলসা ও সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় নবম জাতীয় কাব ক্যাম্পুরি। এর আগে ক্যাম্পুরির পঞ্চম দিন বৃহস্পতিবার সকালে ঘুম থেকে উঠেই ছিল প্রতিদিনকার মতো নাস্তা করা, তাঁবু প্রস্তুতি ও সাবক্যাম্পে সমাবেশ। সকালের সমাবেশ শেষে শুরু হয় স্বপ্ন বাস্তবায়ন কার্যক্রম।

বৃহস্পতিবার কার্নিভাল রাতের ক্যাম্প ফায়ার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, কাব, স্কাউট বিএনসিসি—এগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী ও সুশৃঙ্খল সংগঠন। দেশের যেকোনো সংকটে স্বেচ্ছাসেবায় এদের অংশগ্রহণ অনেক। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভবনধস, পাহাড়ধস, যানজট নিরসনে তারা কাজ করে। তারাই দেশের ভবিষ্যৎ। দেশকে সুশৃঙ্খলভাবে গড়ে তুলতে তারাই কাজ করবে।

সভাপতির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. শাহ কামাল বলেন, কাব স্কাউটরা সব সময় পরিবেশের কথা ভাবে। যেহেতু পলিথিন পচে না এবং পরিবেশের ক্ষতি করে, সে জন্য এবারের ক্যাম্পে এ নিয়ে বেশি প্রচার ছিল।

বাংলাদেশ স্কাউটসের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে ছিল উডব্যাজার রিইউনিয়ন। এতে ইউনিট নেতারা ইউনিটের শৃঙ্খলা বজায় রেখে অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

তেমনই এক উডব্যাজার পদকধারী আলেয়া খাতুন। তিনি কিশোরগঞ্জের হাটখোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তাঁর প্রতিষ্ঠানের সাত শিক্ষার্থীকে নিয়ে পাঁচ দিন ধরে ক্যাম্পে থাকছেন। আলেয়া খাতুন বলেন, তাঁবুতে এই কয়দিন থেকে শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার শিক্ষা দেওয়া হয়। কাব ক্যাম্পে থাকাকালীন তারা যা শেখে ও জানে, তা সারা জীবন পালন করবে। এটাই স্কাউট সদস্যদের আদর্শ।