শিক্ষক-সংকটে ব্যাহত পাঠদান

শিক্ষক–সংকটে ব্যাহত হচ্ছে খাগড়াছড়ি সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। কলেজে ১৯ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ১৪ জন। বিভিন্ন বিষয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। পাশাপাশি স্নাতক শ্রেণিও চালু করা যাচ্ছে না।

জেলার একমাত্র মহিলা কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৯৯ সালে। ২০০৯ সালে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। বর্তমানে এই কলেজের শিক্ষার্থী সংখ্যা হাজারখানেক। আবাসিক সুবিধা থাকায় খাগড়াছড়ি জেলার নয়টি উপজেলার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী রাঙামাটি জেলার মেয়েরাও পড়াশোনা করছে কলেজটিতে।

কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহ আলমগীর বলেন, এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের পদ আছে ১৯টি। কিন্তু কর্মরত আছেন ১৪ জন। দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে রসায়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ব্যবস্থাপনা, পরিসংখ্যান ও দর্শন বিভাগের শিক্ষক পদ। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

তবে এনাম কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ প্রতি বিষয়ে দুজন করে ৩৬ জন শিক্ষক থাকার কথা। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকার কারণে কলেজের ফলাফলও গত কয়েক বছর ধরে খারাপ হচ্ছে। কোনো শিক্ষক ছুটিতে গেলে কিংবা প্রশিক্ষণে গেলে সে বিষয়ে পাঠদান বন্ধ থাকে।

কলেজের শিক্ষকেরা জানান, গত কয়েক বছর ধরে কলেজের এইচএসসির ফলাফল ধারাবাহিকভাবে খারাপ হচ্ছে।। ২০১৪ সালে এইচএসসিতে পাসের হার ছিল ৬৪ শতাংশ। এই হার কমে ২০১৫ সালে দাঁড়ায় ৬২ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে ৪৪ শতাংশ।

কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী পপি আক্তার জানান, রসায়নের শিক্ষক না থাকায় এই বিষয়ের প্রদর্শক মাঝেমধ্যে পাঠদান করান। প্রথম বর্ষের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী নিশি চাকমা ও দীপা পাল জানান, যুক্তিবিদ্যার শিক্ষক প্রশিক্ষণে থাকায় ওই বিষয়ে পাঠদান হয় না।

শিক্ষক–সংকটের কারণে কেবল উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রয়েছে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। স্নাতক শ্রেণি চালু না হওয়ায় উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার হতদরিদ্র পরিবারের মেয়েরা।

রাঙামাটি বাঘাইছড়ি উপজেলার দুর্গম এলাকার মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী পর্ণাশ্রী চাকমা ও মহালছড়ির নিশিপ্রু মারমা জানান, ‘আমাদের মতো অনেকেই দুর্গম এলাকা থেকে এই কলেজে পড়তে এসেছে। এখানে কম খরচে কলেজের হোস্টেলে থেকে পড়তে পারছি। যদি স্নাতক চালু হতো তবে উচ্চশিক্ষার দরজাও খুলে যেত।’

 কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহ আলমগীর আরও বলেন, শিক্ষকদের শূন্যপদে নিয়োগের জন্য লিখিত আবেদন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। জেলার একমাত্র সরকারি মহিলা কলেজ হওয়া সত্ত্বেও চরম অবহেলার শিকার এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কলেজটিতে কোনো মিলনায়তন নেই। আর শিক্ষক নিবাস না থাকায় কোনো শিক্ষক কলেজটিতে বদলি হয়ে এলে তাঁরাও বেশি দিন থাকেন না এখানে।

এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, জেলার একমাত্র মহিলা কলেজ এটি। তা ছাড়া রাঙামাটি দুটি উপজেলার শিক্ষার্থীরাও যোগাযোগের সুবিধার জন্য এখানে পড়াশোনা করতে আসে। কলেজের শিক্ষক–সংকট দূর করে স্নাতক শ্রেণি চালুর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।