কাউন্সিলর পদে স্বল্পশিক্ষিত প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে: সুজন

আসন্ন নির্বাচন ও ২০১৫ সালের নির্বাচনে প্রার্থীদের দেওয়া হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে পাওয়া ফল আজ শনিবার সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরে বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। এতে বক্তব্য রাখেন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। ছবি: প্রথম আলো
আসন্ন নির্বাচন ও ২০১৫ সালের নির্বাচনে প্রার্থীদের দেওয়া হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে পাওয়া ফল আজ শনিবার সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরে বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। এতে বক্তব্য রাখেন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বলেছে, কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের মানে অবনতি ঘটছে। ব্যবসায়ী ও স্বল্পশিক্ষিত প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে।

আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার এ কথা বলেন। আসন্ন নির্বাচন ও ২০১৫ সালের নির্বাচনে প্রার্থীদের দেওয়া হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে পাওয়া ফল সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে হলফনামার তথ্য তুলে ধরেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। সুজনের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা উত্তরের ছয়জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজন (৮৩.৩৩%) উচ্চশিক্ষিত। তাঁদের মধ্যে দুজনের (৩৩.৩৩%) শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর ও তিনজনের (৫০%) স্নাতক। তবে একজন (১৬.৬৭%) প্রার্থীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই।

ঢাকা উত্তরের মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলিয়ে মোট ৩৩১ জন প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশের (২০৩ জন বা ৬১.৩২%) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তার নিচে। ঢাকা উত্তরের ৫৪টি ওয়ার্ডের ২৪৮ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশ প্রার্থীর (১৫৬ জন বা ৬২.৯০%) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তার নিচে। শুধু এসএসসির নিচেই রয়েছেন ১২৩ জন (৪৯.৫০%)। আর স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থী ২২ জন।

সুজন বলেছে, মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে উচ্চশিক্ষিতের হার বেশি হলেও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের মধ্যে স্বল্পশিক্ষিতের হার বেশি। ২০১৫ সালের তুলনায় এবার ঢাকা উত্তরে স্বল্পশিক্ষিত প্রার্থীর হার বেড়েছে। ২০১৫ সালে ছিল ৫৯ দশমিক ৪০ শতাংশ, এবার ৬১ দশমিক ৩২ শতাংশ। অন্যদিকে উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীর সংখ্যা কমেছে। ২০১৫ সালে ছিল ২৭ দশমিক ৪১ শতাংশ, এবার উচ্চশিক্ষিত প্রার্থী ২৫ দশমিক ২৭ শতাংশ।

ঢাকা দক্ষিণের সর্বমোট ৪০৯ জন প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশের (২৬৬ জন বা ৬৫.০৩%) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তার নিচে। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী আছেন ৭৯ জন বা ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। ৭ জন প্রার্থী শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেননি। ২০১৫ সালের নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের সঙ্গে তুলনায় এবার দক্ষিণে স্বল্পশিক্ষিত প্রার্থীর হার সমান রয়েছে। তবে উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীর হার কিছুটা কমেছে।

মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলিয়ে ঢাকা উত্তর সিটির ৩৩১ জন প্রার্থীর মধ্যে ২৪১ জন বা ৭২ দশমিক ৮১ শতাংশের পেশা ব্যবসা। ২০১৫ সালের নির্বাচনে ব্যবসায়ী প্রার্থী ছিলেন ৬৭ দশমিক ২০ শতাংশ।

ঢাকা দক্ষিণে ৪০৯ জন প্রার্থী পেশার উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে ৩০১ জনের (৭৩.৫৯%) পেশা ব্যবসা। ২০১৫ সালে এখানে ব্যবসায়ী প্রার্থী ছিলেন ৭১ দশমিক ২৮ শতাংশ।

ঢাকা উত্তরে ৩৩১ জন প্রার্থীর মধ্যে ৯৯ জনের (২৯.৯১%) বিরুদ্ধে মামলা আছে। এর মধ্যে ২৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা (৩০২ ধারা) আছে। ২০১৫ সালের তুলনায় মামলায় আসামি এমন প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৫ সালে মামলা নিয়ে লড়ছিলেন এমন প্রার্থী ছিলেন ১৯ দশমিক ৬২ শতাংশ।

আর ঢাকা উত্তরে ৪০৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ১০৯ জন বা ২৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা আছে। এর মধ্যে ৩০২ ধারায় মামলা আছে ১৭ জনের বিরুদ্ধে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রার্থীর নামে মামলা ছিল।

ঢাকা উত্তরের ৩৩১ প্রার্থীর মধ্যে ১৮৬ জনের (৫৬.১৯%) বার্ষিক আয় ৫ লাখ টাকা বা তার কম। আয় উল্লেখ না করা ৩৪ জনকে হিসাবে ধরলে ৫ লাখের কম বা স্বল্প আয়ের প্রার্থী ৬৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। গত নির্বাচনে স্বল্প আয়ের প্রার্থী ছিলেন ৭০ দশমিক ৭০ শতাংশ। অন্যদিকে, গত নির্বাচনে কোটি টাকার বেশি আয় ছিল ৩ জন বা শূন্য দশমিক ৮০ শতাংশ প্রার্থীর। এবার কোটিপতি প্রার্থী ৭ জন বা ২ দশমিক ১১ শতাংশ।

অন্যদিকে, দক্ষিণে ৬৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ প্রার্থীর আয় ৫ লাখ বা তার নিচে। গত নির্বাচনে এ রকম স্বল্প আয়ের প্রার্থী ছিলেন ৭৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। দক্ষিণে এবার কোটিপতি প্রার্থী আছেন তিনজন (০.৭৩%)। ২০১৫ সালের নির্বাচনে এমন প্রার্থী ছিলেন ৭ জন (১.৪৪%)।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ব্যবসায়ী প্রার্থীর আধিক্য বাড়ছে। রাজনীতি এখন পুরোপুরি ব্যবসায় পরিণত হচ্ছে। ধনাঢ্য হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে রাজনীতি। ধনী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। আবার উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীর সংখ্যা কমছে। সব মিলে প্রার্থীদের মানে অবনতি ঘটছে। তিনি বলেন, কাউন্সিলর পদে নির্দলীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু দলগুলো দলীয় মনোনয়ন দিচ্ছে। দলগত নির্বাচন হলে প্রার্থীর সংখ্যা কমে যায়। বেশি প্রার্থী থাকলে বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী বাড়ার সুযোগ থাকে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলেও এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সক্রিয়তা নেই। একজন নির্বাচন কমিশনারও বলেছেন, নির্বাহী হাকিমদের কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। কেউ হয়তো এমন কিছু করতে চান না, যাতে সরকারি দল রুষ্ট হয়। এটা অশনিসংকেত।

সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দীন খান বলেন, হলফনামার তথ্যের সঠিকতা যাচাই করা না হলে এসব তথ্য নেওয়ার কোনো অর্থ নেই। তিনি হলফনামার তথ্য যাচাই করার দাবি জানান।