শিক্ষকদের স্বার্থে শিক্ষার্থীদের কষ্ট দেওয়া ঠিক না: ইউজিসি চেয়ারম্যান

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‌্যালী বের হয়। ছবি: প্রথম আলো
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‌্যালী বের হয়। ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণ না করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ। তিনি বলেন, শিক্ষকদের নিজেদের স্বার্থে শিক্ষার্থীদের কষ্ট দেওয়া ঠিক না। শিক্ষকেরা সঠিক ভূমিকা রাখলে গুণগতমানের শিক্ষা ফিরে আসবে।

আজ শনিবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ১৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধ করতে হবে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের নিজেদের স্বার্থের জন্য শিক্ষার্থীদের কষ্ট দিতে পারি না। এটা শিক্ষকদের ভূমিকা হতে পারে না। সমাজে শিক্ষকদের সঠিক ভূমিকা রাখতে হবে। তাহলে গুণগতমানের শিক্ষা ফিরে আসবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব নেই। কিন্তু গুণগতমানের শিক্ষার অভাব রয়েছে। প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুণগতমানের শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনেক এগিয়ে।’

আলোচনা সভার আগে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২০ উদ্‌যাপন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করা হয়। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাস ঘুরে অনুষ্ঠান মঞ্চে গিয়ে শেষ হয়।

দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সড়কে আলপনা আঁকা হয়। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে খেলার মাঠে পিঠা উৎসবের আয়োজন করেন। বিকেলে ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। পুরো আয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করে আইসিটি সেল।

কেক কেটে ও পায়রা উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ইউজিসির চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আনোয়ার হোসেন।

কাজী শহীদুল্লাহ
কাজী শহীদুল্লাহ

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে কাজী শহীদুল্লাহ বলেন,‘এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এখানে গবেষণাকে ফোকাস করা হচ্ছে। যেটা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। উচ্চ শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্যই হচ্ছে- গবেষণা। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য একজন সফল গবেষক। সুতরাং তিনি জানেন, গবেষণাই হচ্ছে একাডেমিক উন্নয়নের অন্যতম রাস্তা। তিনি সেদিকেই বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’

সভাপতির বক্তব্যে যবিপ্রবির উপাচার্য মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, অপরাজনীতিমুক্ত শিক্ষা ও গবেষণা সহায়ক পরিবেশের কারণেই এই বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য, আমরা চাকরি চাইব না, চাকরি দেব।’ তিনি বলেন, যেসব কর্মকাণ্ড ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়ে দেশকে পিছিয়ে দেয়, দুর্নীতি-সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেয়- আমি তাকে রাজনীতিই মনে করি না। র‌্যাগিং নামক জঘন্য মানসিক বৈকল্যকে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে নির্মূল করা হয়েছে। তারপরও র‌্যাগিংয়ের মতো ভয়াবহ ব্যাধিতে কেউ জড়িত থাকলে বা সহযোগিতা করলে, তাকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের প্রচলিত আইনে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, স্নেহ এবং সম্মানই হবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সম্পর্কের ভিত্তি।’

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, প্রশাসনসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্য, অ্যালামনাইসহ সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

এর আগে উপাচার্য আনোয়ার হোসেন যবিপ্রবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘উৎকর্ষ’র উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন যশোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার মো. আব্দুল মজিদ, ডিনস কমিটির আহ্বায়ক মো. আনিছুর রহমান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. ইকবাল কবীর জাহিদ, রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক মো. মীর মোশাররফ হোসেন, কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারি প্রমুখ।

আধুনিক জ্ঞান চর্চা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষে ২০০৭ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের সাজিয়ালী মৌজায় ৩৫ একর জায়গার ওপরে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়।