রাত হলেই ভুতুড়ে পরিবেশ

বাতি না জ্বলায় অন্ধকারে ডুবে আছে মৌলভীবাজারের চাঁদনীঘাটে মনু সেতু। যানবাহনের আলো ও ভ্রাম্যমাণ দোকানের আলো ছাড়া দেখা যায় না কিছু। গত বৃহস্পতিবার রাতে।  ছবি: প্রথম আলো
বাতি না জ্বলায় অন্ধকারে ডুবে আছে মৌলভীবাজারের চাঁদনীঘাটে মনু সেতু। যানবাহনের আলো ও ভ্রাম্যমাণ দোকানের আলো ছাড়া দেখা যায় না কিছু। গত বৃহস্পতিবার রাতে। ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজার জেলা সদরের অন্যতম প্রবেশদ্বার চাঁদনীঘাট। সেখানে মনু সেতু সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকারে ডুবতে থাকে। সন্ধ্যারাতে তবু কিছুটা স্বস্তি থাকে। চলমান যানবাহনের আলো থাকে। থাকে সেতুর ওপর বসা ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের চার্জার বাতি। কোনোমতে পথ দেখে সামনে এগোতে পারে পথচারীরা। রাত বাড়ে আর তৈরি হয় এক ভুতুড়ে পরিবেশ। অন্ধকারেই পথ হাতড়ে চলতে হয় সবাইকে। জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুতে সড়কবাতি না থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই ভোগান্তিতে পড়েছে পথচারীরা।

জানতে চাইলে মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ মনু সেতুর বাতির বিষয়টি দেখত। এখন পৌরসভা দেখে। তবে দীর্ঘদিন ধরে সেতুতে বাতি জ্বলে না। লাইনে সমস্যা। সম্ভবত মাদকাসক্তরা বিদ্যুৎ লাইনের তার কেটে নিয়েছে। শিগগিরই আমরা তার ঠিক করে ওই সেতুতে স্ট্রিট লাইট দিয়ে দেব।’

পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার শহরের উত্তর পাশে মনু নদের ওপর চাঁদনীঘাটে মনু সেতুর অবস্থান। পুরোনো সেতুটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিধ্বস্ত হয়েছিল। বর্তমান সেতুটি নতুন। এই সেতু দিয়ে জেলার বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া, রাজনগর এবং সদর উপজেলার উত্তরাংশের মানুষ মৌলভীবাজার জেলা সদরে আসা-যাওয়া করেন। এই সেতু দিয়ে গেছে ঢাকা-মৌলভীবাজার-ফেঞ্চুগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক। জেলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন ছোট–বড় হাজারো যানবাহন চলাচল করে। দিনের বেলায় সেতুর অনেকটাজুড়ে থাকে মৌসুমি ফল ও মসলার ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের ভ্যানগাড়ি। এতে সময়-অসময়ে সৃষ্টি হয় কৃত্রিম যানজটের। দিনের বেলায় তবু যেমন–তেমন, সন্ধ্যা হলেই সেতুটি অন্ধকারে ডুবতে থাকে। সেতুর দুই পাশেই অনেকগুলো সড়কবাতির খুঁটি ও বাতি লাগানো আছে। কিন্তু তা জ্বলে না। রাত বাড়তে থাকলে সেতুজুড়ে এক ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়। শুধু যানবাহনের আলোয় সেতুটি কিছুটা দৃশ্যমান হয়। পথচারীরা এক ভুতুড়ে আলোছায়ার মধ্য দিয়ে সেতুতে চলাচল করে। রাতে নারী, শিশুসহ সব মানুষ অন্ধকারে সেতু পার হতে ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে। মাঝেমধ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর শহরতলির অনেক মানুষ হেঁটে শহরে বাজার-সওদাসহ পারিবারিক অনেক কাজ সারতে আসে। কাজ শেষে একই সেতু দিয়ে তারা ফিরে যায়।

গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে মনু সেতুতে গিয়ে দেখা গেছে, সেতুর ফুটপাত দিয়ে অন্ধকারের মধ্যেই অনেক নারী, শিশুসহ সাধারণ মানুষ এপার-ওপার হচ্ছে। সেতুর ওপরের পশ্চিম পাশে অন্ধকারের মধ্যেই ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কয়েকটি ভ্যানগাড়ি দাঁড়ানো। ভ্যানগাড়িতে চার্জার বাতি জ্বলছে। তাতে কেবল ভ্যানগাড়ির ওপরের কিছু অংশ আলোকিত হচ্ছে। অনেকে এই অন্ধকারের মধ্যেই দাঁড়িয়ে দরদাম করছে। পণ্য কিনছে। পাশ দিয়ে হুট করেই চলে যাচ্ছে ছোট–বড় বিভিন্ন ধরনের গাড়ি।  অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দেখা গেছে, অন্ধকারের কারণে একজনের গায়ে আরেকজনের ধাক্কা লাগছে। অপরিচিত কারও ধাক্কা লাগায় অনেকে ভীত চোখে তাকাচ্ছেন।

১৪ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যপ্রবাসী সৈয়দ আমীন নামের একজন তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘...সবচেয়ে উদ্বেগের ব্যাপার হলো এই ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন মৌলভীবাজারের এমপি (সাংসদ নেছার আহমদ) ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান (আজিজুর রহমান) মহোদয়কে নিজ বাড়িতে (গুজারাই গ্রাম) যাতায়াত করতে হয়। সাধারণের কথা বাদ দিলেও এ দুজন ভিআইপির কি নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে পথচলা কর্তৃপক্ষের কাছে জরুরি মনে হয় না?’