মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াতে উচ্চকণ্ঠ হতে হবে: জন প্যাকার

জন ফ্রেডারিক প্যাকার।
জন ফ্রেডারিক প্যাকার।

মিয়ানমারে জাতিসংঘের প্রথম বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ারের সহকারী জন ফ্রেডারিক প্যাকার মনে করেন, রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) আদেশ নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। তবে মিয়ানমারের ওপর চাপ তৈরি না করলে পরিস্থিতির কোনো হেরফের হবে না। এই সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে নৈতিক, আইনগত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। কাজেই সমস্যা সমাধানে আরও সোচ্চার হওয়া উচিত বাংলাদেশের।

আইসিজের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ নিয়ে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলো কার্যালয়ে এক মতবিনিময়ের সময় জন ফ্রেডারিক প্যাকার এ মন্তব্য করেন। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ওই আদালত রোহিঙ্গা হত্যা বন্ধসহ চার দফার আদেশ দিয়েছেন।

গতকালের আলোচনার শুরুতে জন ফ্রেডারিক প্যাকারকে স্বাগত জানান প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। মতবিনিময় সভায় অংশ নেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সি আর আবরার, মিয়ানমারের সিটুয়েতে বাংলাদেশের সাবেক মিশনপ্রধান মেজর (অব.) এম এমদাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

কানাডার অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে আন্তর্জাতিক সংঘাতবিষয়ক অধ্যাপক জন প্যাকার বলেন, গাম্বিয়া একটি ছোট ও দুর্বল দেশ। অন্য দেশগুলো পর্যায়ক্রমে পাশে না দাঁড়ালে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলার ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কী ঘটবে, সেটা বলা মুশকিল। কারণ, এখন পর্যন্ত দেশটিকে যারা অর্থায়ন করছে, কোনো কারণে তারা সরে পড়লে গাম্বিয়া কীভাবে মামলা চালিয়ে নেবে, সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

জাতিসংঘের সাবেক এই মানবাধিকার কর্মকর্তা মনে করেন, এ ধরনের মামলা শেষ হতে সময় লাগে বছরের পর বছর। গাম্বিয়া শেষ পর্যন্ত কত দিন নিজের অবস্থানে অটল থাকতে পারে, তা নিয়ে তিনি সন্দিহান। গণহত্যা সনদের বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত দেশের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ, আন্তর্জাতিক সংগঠনসহ নানা পক্ষের এই মামলায় গাম্বিয়ার পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা রাখতে বাংলাদেশ উদ্যোগ নিতে পারে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মনে রাখতে হবে, নিজের দাবি সামনে না আনলে কখনো দর–কষাকষি করা যায় না।

নিরাপত্তা পরিষদে আইসিজের আদেশ বাস্তবায়নের কথা রয়েছে, তখন চীনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন আছে। এখন পর্যন্ত দেশটি মিয়ানমারের পাশেই আছে। ভারতকেও এখনো সেভাবে পায়নি বাংলাদেশ। এ বিষয়ে জন প্যাকার বলেন, ‘আদালতের সিদ্ধান্ত চীন আটকে দিতে পারে না। যদিও নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে চীন মিয়ানমারকেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। আমার ধারণা, আদেশ মেনে চলতে মিয়ানমারকে রাজি করাবে চীন। কারণ, শেষ পর্যন্ত আইসিজের আদেশ লঙ্ঘন করার মানে কিন্তু জাতিসংঘের সনদকে চ্যালেঞ্জ করা। সেটা চীন করবে না।’