মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ

সরকার
সরকার

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের জিরো টলারেন্সের ঘোষণা শুধুই ‘বন্দুকযুদ্ধে’, অপরাধীদের বিচারে নয়। ১৫ মাস আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন করা হলেও ওই আইনে একজনেরও বিচার তো হয়ইনি, উল্টো এখন এসে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে নতুন আইনের অনুমোদন দেন রাষ্ট্রপতি। ওই আইন অনুযায়ী, মাদক অপরাধগুলোর বিচার হওয়ার কথা ছিল পৃথক ট্রাইব্যুনালে। তবে আইন হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়নি। ফলে আইনে যত মামলা হয়েছে, তার বিচার আটকে আছে। এ সংখ্যা লাখের কম নয়। অন্যদিকে সারা দেশে মাদক মামলা আছে প্রায় তিন লাখ। এ নিয়ে চার লাখ মাদক মামলা ঝুলে আছে।

নতুন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৪৪ ধারায় বলা হয়েছে, মাদকদ্রব্য–সংক্রান্ত অপরাধ দমনে সরকার প্রয়োজনীয় সংখ্যক ‘মাদকদ্রব্য অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল’ স্থাপন করতে পারবে। অতিরিক্ত জেলা জজ পদমর্যাদার কর্মকর্তারা ট্রাইব্যুনালের বিচারক হবেন। ট্রাইব্যুনাল স্থাপিত না হওয়া পর্যন্ত সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে সংশ্লিষ্ট জেলার যেকোনো অতিরিক্ত জেলা জজ বা দায়রা জজকে তাঁর নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত ট্রাইব্যুনালের দায়িত্ব দিতে পারবে।

তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, মাদক মামলার বিচারের জন্য জেলায় জেলায় ট্রাইব্যুনাল গঠন করা সম্ভব নয়। কেননা এই আইনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাদক মামলার বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। মাদক মামলা বিচারের জন্য পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হলে এ আইনের প্রায়োগিক জটিলতা সৃষ্টি হবে। তাই আইনটি সংশোধন করে আইনের যেখানেই ‘ট্রাইব্যুনাল’ শব্দটি রয়েছে, সেখানে ‘আদালত’ শব্দটি বসানো হবে। প্রতিটি আদালতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বা সমপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে বিচারক নিযুক্ত হবেন। সংশোধনী বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

>

নতুন আইনটি হয় ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর। আইন অনুযায়ী, মাদক অপরাধগুলোর বিচার হওয়ার কথা ছিল পৃথক ট্রাইব্যুনালে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, মাদক আইন ২০১৮ সংশোধন করা হলে এই আইনের অধীনে মাদকদ্রব্য–সংক্রান্ত অপরাধগুলোর গুরুত্ব অনুযায়ী এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতের মাধ্যমে বিচার হবে। সংশ্লিষ্ট দায়রা জজ, মহানগর দায়রা জজের এখতিয়ারসম্পন্ন এলাকার জন্য কেবল মাদকদ্রব্য অপরাধের বিচারের জন্য এক বা একাধিক আদালত নির্দিষ্ট করতে পারবেন। ফলে মাদক অপরাধের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে।

এদিকে ২০১৮ সালের ৪ মে থেকে মাদকের ভয়াবহতা রোধে দেশব্যাপী অভিযান শুরু করে সরকার। এরপর নতুন আইন করে। মাদকবিরোধী অভিযানে এ পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে ৪৮৬ জন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন। তাঁদের মধ্যে কক্সবাজারেই নিহত হন ৪ নারীসহ ২০৭ জন। এ সময় ১০২ জন মাদক ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেন। কিন্তু মাদক বেচাকেনা বন্ধ হয়নি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামালউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আইনের কারণে মাদকের ভয়াবহতা হয়তো কিছুটা কমেছে। তবে মাদক মামলার বিচার না হওয়ায় অপরাধীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা হতাশ বিচার না হওয়ায়। কেননা, আইন হওয়ার পর অভিযান ও মামলা দুটোই বেড়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত মার্চে আইন মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিবকে পাঠানো এক চিঠিতে আইনটি সংশোধন করে ট্রাইব্যুনালের জায়গায় দ্রুত বিচার আদালত গঠনের কথা বলা হয়। এরপর গত এপ্রিলে এ আইন সংশোধন নিয়ে এক বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনার পরও মন্ত্রিপরিষদ, জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা দ্রুত ট্রাইব্যুনাল গঠনের পক্ষে মত দিয়েছিলেন।

আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, একে তো ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে দেরি করল, এখন আবার আইন সংশোধন করা হবে। সময়ক্ষেপণের ফলে মামলার আসামিরা সুযোগ পেয়ে যাবেন। পরে সাক্ষী খুঁজে পাওয়া যাবে না।