৯ মাস ছিল কঠিন অনুশীলনের, আগামী ৫ বছর টেস্ট খেলব: আতিকুল

নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। ছবি: সাইফুল ইসলাম
নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। ছবি: সাইফুল ইসলাম

আগের ৯ মাসের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধিকে কঠিন অনুশীলনের সময় বলে উল্লেখ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। আর নির্বাচিত হওয়ার পর পাঁচ বছর 'টেস্ট' খেলবেন বলে জানালেন। এই 'টেস্ট খেলার' অংশ হিসেবে সারা বছর ধরে মশা নিধন কার্যক্রম বাস্তবায়ন, যানজট নিরসন ও বায়ুদূষণমুক্ত নগর গড়ার পরিকল্পনা আছে তাঁর।

এভাবেই আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়ার ত্রিমুখী ইশতেহার উপস্থাপন করেন মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। আজ রোববার দুপুর ১২টায় গুলশানের লেকশোর হোটেলে এই নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন আতিকুল ইসলাম।

২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর মারা যান ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক। তিনি প্রয়াত হওয়ার পর উপনির্বাচনে জিতে গত বছরের ৭ মার্চ ডিএনসিসির মেয়রের দায়িত্ব নেন আতিকুল ইসলাম। আজ ইশতেহার ঘোষণার সময় এবং এর আগেও সেই ৯ মাসের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর কথা বলেছেন আতিকুল। তিনি গতকাল শনিবারই জানিয়েছিলেন, আজ ইশতেহার দিয়ে তিনি চমক দেবেন। 

সেই চমকটা কী? এর জবাবে আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন,‘আমি অবাস্তব কোনো কর্মসূচির পরিকল্পনা দিইনি। এই পরিকল্পনা ও কর্মসূচিগুলো বাস্তবমুখী ও বাস্তবায়নযোগ্য। এ জন্যই এই ইশতেহার চমক দেওয়ার।’

ইশতেহারে আতিকুল প্রথমত গুরুত্ব দিয়েছেন সুস্থ ঢাকা গড়ে তোলার ওপর। এ জন্য মশা নিধনকেই মূল লক্ষ্য ধরেছেন। তিনি বলেছেন, মশা নিধন করার জন্য কোটি মানুষের এই নগরে উন্নত বিশ্বের মতো ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট (আইভিএম) পদ্ধতিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পার্শ্ববর্তী সিটি করপোরেশনসহ সব সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবেন। এলাকাভিত্তিক উন্মুক্ত পার্ক ও আধুনিক খেলার মাঠ নির্মাণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমিনবাজারে রিসোর্স রিকভারি ফ্যাসিলিটিজ (আরআরএফ) স্থাপন করে বর্জ্য অপসারণ ও সেগুলোকে জ্বালানি শক্তিতে রূপান্তরের ব্যবস্থা করার কথা জানান আতিকুল ইসলাম।

আতিকুল আধুনিক পশু জবাইখানা কেন্দ্র, এলাকাভিত্তিক পাড়া উৎসব, উত্তর সিটির প্রতিটি স্থাপনায় মাতৃদুগ্ধ কক্ষ নির্মাণ, বস্তিবাসীর জন্য আবাসন ব্যবস্থাসহ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন। বিশেষভাবে সক্ষম এবং নারী-পুরুষ-শিশুনির্বিশেষে সবার জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক গণশৌচাগার নির্মাণ, প্রতিটি এলাকার জলাশয় দখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন করা, উন্নয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন জায়গায় আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বায়ুদূষণ কমানো, ওয়ার্ডভিত্তিক সুযোগ-সুবিধা তৈরিতে ‘ওয়ার্ড কমপ্লেক্স’ তৈরি এবং মিরপুরে উত্তর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব জায়গায় বৃক্ষ ক্লিনিক ও পোষ্য প্রাণী ক্লিনিক নির্মাণ করার পরিকল্পনার কথা জানান আতিকুল ইসলাম।

সচল ঢাকা তৈরি করতে ফুটপাত দখলমুক্ত করে এলাকাভিত্তিক পথচারীবান্ধব ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের জন্য ফুটপাত নেটওয়ার্ক তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দেন । তিনি বলেন, হকারদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন। যানজট নিরসনে ডিএমপি, ডিটিসিএ, বিআরটিএ, ডিএসসিসি, পরিবহন মালিক সমিতিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের ঢাকা বাস রুট রেশনালাইজেশনের কাজ বাস্তবায়নের কথা বলেন আতিকুল। এর পাশাপাশি নিরাপদে সড়ক পারাপারে পথচারীদের জন্য বিভিন্ন জেব্রা ক্রসিংয়ে ডিজিটাল সিগন্যাল বোতাম স্থাপন, প্রয়োজন অনুযায়ী অধিকাংশ স্থানে এস্কেলেটরসহ পদচারী–সেতু নির্মাণ, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা চালু, সাইকেলের জন্য আলাদা লেন ও সাইকেল পার্কিং তৈরির কথা বলেন তিনি।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাগরিকদের জন্য স্থাপনা ও গণপরিবহন তৈরি, প্রতিটি মহল্লায় পয়োনিষ্কাশন–ব্যবস্থা উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা নিরসনে সেন্সরের মাধ্যমে জলাবদ্ধতার স্থান চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা এবং নগরীর ব্যস্ততম এলাকায় বহুতল ও আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনার কথাও জানান আতিকুল ইসলাম।

মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম আধুনিক ঢাকা তৈরির জন্য কাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কথা বলেন। ঢাকাকে আধুনিক করতে ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপ ব্যবহার করে নাগরিক সমস্যার অভিযোগ গ্রহণ, সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থা করবেন। এর মাধ্যমে মেয়রের সঙ্গে নাগরিকদের সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান তিনি।

বায়ুদূষণ রোধে বৈদ্যুতিক বাস সার্ভিস চালু করার কথা বলেন আতিকুল ইসলাম। আর ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে গৃহকর দেওয়ার ব্যবস্থা, জন্ম–মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্সসহ নাগরিক সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।

ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে ডিএনসিসির কাঁচাবাজার ও মার্কেটগুলোর আধুনিকায়নের জন্য কাঠামোগত উন্নয়নের কাজ করা হবে বলে জানান আতিকুল। ঢাকাকে স্মার্ট সিটি করতে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি এলাকাকে স্মার্ট নেইবারহুড হিসেবে গড়ে তুলে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি পাড়া-মহল্লাকে এই উদ্যোগের আওতায় আনা হবে বলেও জানান।

আতিকুল বলেন, শহরের নিরাপত্তায় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সার্বক্ষণিক ‘ডিজিটাল কমান্ড সেন্টার’ তৈরি করা হবে।

আতিকুল আরও বলেন, তরুণদের জন্য সব এলাকায় সাংস্কৃতিক ও সেবাকেন্দ্র থাকবে। এখানে হেল্প ডেস্ক, ট্রেনিং সেন্টার, স্টার্ট আপ, ওয়ার্কিং স্পেস, পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুবিধা থাকবে। এলাকার কমিউনিটি সেন্টারগুলো আধুনিকায়ন ও বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হবে। এখানে ছবি আঁকা, গান শেখা, যোগব্যায়াম, আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। সবশেষে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে জনতার মুখোমুখি মেয়র শীর্ষক নিয়মিত মতবিনিময়ের ব্যবস্থা থাকবে, যেখানে ওয়ার্ডভিত্তিক সমস্যার সমাধানে কাজ করা হবে।

মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেন, জবাবদিহির অংশ হিসেবে জনগণের কাছে তিনি মেয়র ও কাউন্সিলর ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।

এই ইশতেহার বাস্তবায়নে তিনি আসন্ন নির্বাচনে জনগণের ভোট চান।

আতিকুল ইসলামের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ছিলেন সংস্কৃতি ও বিনোদন জগতের অনেকেই।